নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন হাইকোর্টকে বলেছেন, আপনার আদালতে এমন একজন ব্যক্তির মামলার শুনানি হচ্ছে, যিনি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারও মনে করে, তিনি সরকার ও বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারেন। ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের অন্যতম একজন উপদেষ্টা। উপদেষ্টা হওয়ায় জাতিসংঘও এ মামলার বিচার পর্যবেক্ষণ করছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানিতে অংশ নিয়ে গতকাল সোমবার বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে ব্যারিস্টার মামুন এসব কথা বলেন। পরে তিনি কালবেলাকে বলেন, মূলত মামলাটির গঠনমূলক বিচার যাতে হয়, সেজন্যই আমি জাতিসংঘের প্রসঙ্গ আদালতে তুলে ধরেছি।
আদালতে ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আগের এক আদেশে মতামতে একটি ভুল ছিল। তাই আমরা আপনার আদালতে ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপিল বিভাগ বলেছেন, আপনার আদালত আগে যেহেতু এই মামলা শুনেছেন, এ কারণে আপনার আদালতে পাঠিয়েছেন। তখন আদালত বলেন, আপনি তো আমাদের বেঞ্চে না পাঠানোর জন্য রিভিউ করতে পারতেন। আপিল বিভাগ না পাঠালে আমরা শুনানির দিন নির্ধারণ করতাম না। আদালত শুনানি গ্রহণ শেষে আজ মঙ্গলবারও ফের শুনানির জন্য রেখেছেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের এ মামলায় গত ৬ জুন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক। অন্য তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। পরে অভিযোগ গঠনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন ড. ইউনূসসহ চারজন। শুনানি নিয়ে গত ২৩ জুলাই বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুসের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রুল দেন। রুলে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা গত ২৫ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৩ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন। পরে এ মামলায় জারি করা রুল দুই সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এই রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী গতকাল রুলের ওপর হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
২০২১ সালের ১৬ আগস্ট কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রাজধানীর মিরপুরে গ্রামীণ টেলিকমের কার্যালয় পরিদর্শন করে শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পান। একই বছরের ১৯ আগস্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গ্রামীণ টেলিকমকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, ৬৭ জন কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করার কথা থাকলেও গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এ ছাড়া কর্মচারী অংশীদারত্ব ও কল্যাণ তহবিল গঠন এবং কোম্পানির ৫ শতাংশ লভ্যাংশ কর্মচারীদের পরিশোধ করা হয়নি। পরে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এসএম আরিফুজ্জামান মামলা করেন। গত ৬ জুন ঢাকার শ্রম আদলত-৩-এর বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মন্তব্য করুন