জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে। তারা বলছেন, অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের জনগণ যেমন অংশ নিয়েছিল, তেমনি অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশও তাদের দাবি। ঘোষণাপত্র হলো গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি। এটা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি আশা করছে, সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে।
অভ্যুত্থানের পর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যাগ না আসায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই গত ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশে উদ্যোগী হয়। তবে সে সময় তাদের থামিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, ঘোষণাপত্র সরকারই প্রকাশ করবে। এরপর ঘোষণাপত্র প্রকাশে সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। তবে সেই সময়ের মধ্যেও প্রকাশ হয়নি ঘোষণাপত্র।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বলছেন, রাজনৈতিক দলের মতামত গ্রহণ করার জন্য সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। আন্দোলনের পর পাঁচ মাস পার হলেও এখনো ঘোষণাপত্র প্রকাশ না হওয়ায় আন্দোলনকারীদের মন খারাপ ও অসন্তোষ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে গত ১৬ জানুয়ারি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মতামত চাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন তারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন কালবেলাকে বলেন, ‘একটা অভ্যুত্থানের পরে ঘোষণাপত্র লাগবে। এ বিষয়ে দ্বিমত ছাড়া সবার মতামত নেওয়ার চেষ্টায় আছে সরকার। তবে যথেষ্ট স্লো। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে ওইভাবে বোঝানো উচিত—গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে তাদের রাজনীতি নিরাপদ করা এবং তরুণবান্ধব করার জন্য ঘোষণাপত্র দরকার। তাদের সঙ্গে কথা বললে তাড়াতাড়ি হতে পারে। আন্দোলনের পর ঘোষণাপত্র না দেওয়া একটি অসমাপ্ত কাজ ছিল বৈষম্যবিরোধীদের। সেই কাজটা আবার হাতে নেওয়া হয়েছে। যখন এই কাজ পিছিয়ে যায় তখন আমরা মনে করি রাষ্ট্র দুর্বল। কারণ গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি ভালো মনে হয় না। গণঅভ্যুত্থানকে রক্ষা করার জন্য যেভাবে হোক না কেন সেটাকে পার করে ফেলা আমাদের জন্য জরুরি। যেহেতু ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাই এটা করা জরুরি।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘অক্টোবর মাসে বৈষম্যবিরোধীরা যে চারটি দাবি দিয়েছে, সেখানে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, মুজিববাদী সংবিধান বাতিল, লাস্ট তিনটা নির্বাচন অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবি ছিল। কিন্তু সরকার ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উদ্যোগ নেয় ঘোষণাপত্র প্রকাশ করার। এরপর আমরা ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র প্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করি। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকার এটা ঘোষণা করবে। এরপর আমাদের দাবি ছিল ১৫ জানুয়ারি মধ্যে দিতে হবে, কিন্তু ঘোষণা করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যথাসময়ে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা ভালো মনে হয়। এ বিষয় নিয়ে অসন্তোষ হতে পারে। তার পরও গত ১৬ জানুয়ারি সব দলকে নিয়ে মিটিং করেছে সরকার। এখানে সব দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিংয়ে ঘোষণাপত্র প্রকাশের বিষয় নিয়ে সব দলের মতামত চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দল তাদের মতামত দেওয়া শুরু করেছে। তাই আশা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রকাশ করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। এটা নিয়ে কাজ চলছে এবং আশা করি খুব শিগগির ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। যদি কালক্ষেপণ করা হয়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে মাঠের কর্মসূচি থাকবে।’