অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এ বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমান্ড সেন্টার গঠনের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া থানায় না গিয়ে অনলাইনে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা চালু করারও নির্দেশ দেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে সর্বোচ্চ আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। আমাদের অবশ্যই একটি কমান্ড সেন্টার বা কমান্ড সদর দপ্তর স্থাপন করতে হবে, যা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। নতুন কমান্ড কাঠামো দক্ষতা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেশের সব বাহিনী ও থানা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করার যে কোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এবং মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে। সবাইকে এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’
এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের মানবাধিকার সুরক্ষারও নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যে কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমাদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হতে হবে।’
পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এমনভাবে অভিযান পরিচালনা করতে হবে যাতে পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।
সভায় পুলিশপ্রধান বাহারুল আলম জানান, শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য ১০টি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এ মামলাগুলোর বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে বলেন।
ইন্টারপোলের কাছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ পাঠানো হয়েছে জানিয়ে এ সময় পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি। আশা করি শিগগিরই সাড়া পাব।’
সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, পুলিশের কড়া নিরাপত্তার কারণে রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে।
অনলাইনে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা করার নির্দেশ: সরাসরি থানায় না গিয়ে মানুষ যাতে অনলাইনে মামলা দায়ের করতে পারে সেই ব্যবস্থা চালু করতে সভায় নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বর্তমানে নিকটস্থ থানায় গিয়ে এফআইআর দাখিল করতে হয়। এ প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ এবং এর ফলে নানা ধরনের হয়রানির সুযোগ থাকে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পুলিশের একটি ডেডিকেটেড কল নম্বর সেট করা উচিত, যেমন-৯৯৯। যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো স্থান থেকে অভিযোগকারী এফআইআর দায়ের করতে পারেন। এটি মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ঝামেলা কমাবে।
তিনি পুলিশপ্রধান বাহারুল আলমকে যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনে এফআইআর দায়েরের জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালুর নির্দেশ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, পুলিশের একটি বিশেষ কল সেন্টার এজন্য স্থাপন করা উচিত, যাতে অনলাইনে মামলা দাখিল-সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর সেখান থেকে পাওয়া যায়। যারা অনলাইনে মামলা করতে সমস্যায় পড়বেন, তারা সহজে এই কল সেন্টার থেকে সহায়তা নিতে পারবেন।
সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি এবং বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও বিশেষ শাখার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।