বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২
রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩, ০৯:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফের আলোচনায় খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পুরোনো ছবি
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পুরোনো ছবি

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নতুন করে অসুস্থতায় ফের উদ্বিগ্ন বিএনপি। দলটির দাবি, দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে তারা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জোরালো করেছে। জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নতুন করে ফের আবেদন করা হতে পারে। কবে নাগাদ তা করা হবে—সে ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে; কিন্তু প্রতিবারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, দেশেই খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। তিনি যথেষ্ট সুস্থ আছেন; বরং বিএনপি তার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছে। তবে ক্ষমতাসীনদের এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ও ‘ধিক’ জানিয়ে বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকালও বলেছেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এবং প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার রাজনীতি থেকে তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি এখন অসুস্থ অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। এই অসুস্থ অবস্থার জন্য তাকে বিদেশে নিতে আমরা বারবার আবেদন জানিয়েছি। চিকিৎসকরা এবারও বলেছেন, অবিলম্বে তাকে বিদেশে বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক। বারবার তার পরিবার আবেদন করেছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া তো দূরে থাক, গতকালও (বুধবার) বলেছে, বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আমরা নাকি রাজনীতি করি। ধিক তাদের। এই বক্তব্যের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের কাছে নেই।

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহে এক অনুষ্ঠানে বলেন, খালেদা জিয়ার জীবনের ক্ষতি হয়ে গেলে দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। চিকিৎসকদের সুপারিশ অনুযায়ী বিদেশে সুচিকিৎসার পথে সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাজনীতির পাশাপাশি তাকে দুনিয়া থেকে মাইনাস করতে চায়। তিনি অবিলম্বে বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং বিদেশে উপযুক্ত ও উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান।

হঠাৎ জ্বর ও পেটব্যথায় অসুস্থ বোধ করলে গত সোমবার রাতে খালেদা জিয়াকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা এখন ‘স্থিতিশীল’। পেটে ব্যথার ফলে কোনো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের কোনো সমস্যা হয়নি বলেও নিশ্চিত হয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। এদিকে নতুন কোনো উপসর্গ দেখা না দিলেও পুরোনো জটিলতায় ভুগছেন তিনি। তাই মেডিকেল বোর্ড বিএনপি চেয়ারপারসনকে আরও কয়েক দিন হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে গত বুধবার রাতে মেডিকেল বোর্ড পুনরায় বৈঠক করেছে। ওই বৈঠক প্রসঙ্গে বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার পেটব্যথা এখনো পুরোপুরি নিরাময় হয়নি। জ্বর কমে এসেছে। এ ছাড়া তার ডায়াবেটিসও বেড়ে গেছে।

সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। পাঁচ দিন পর তিনি মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বাসায় ফেরেন। দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, লিভারের রোগ ও হৃদরোগে ভুগছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। ২০২১ সালের এপ্রিলে কভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতা নিয়ে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। পরে পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকছেন তিনি। ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে পরিবারের আবেদনে। বিএনপির দাবি, খালেদা জিয়া সাময়িক মুক্তি পেলেও কার্যত তিনি গৃহ অন্তরীণ। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুই শর্তে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো, মুক্ত থাকার সময় খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দাবি আদায়ে আন্দোলনের পাশাপাশি ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন বিএনপি নেতারা। ওইসব বৈঠকে তারা কূটনীতিকদের নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানান। পরে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে ২৪ মে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর কূটনৈতিক চ্যানেলে তৎপরতা আরও বাড়িয়ে দেয় দলটি। নির্বাচনী সংকট নিরসনে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও তার কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ান। ২৫ মে গুলশানের বাসায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে একত্রে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত। পিটার হাসের এমন তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শুরু হয়।

এমন অবস্থার মধ্যে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ, স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গত ১২ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধানের কাছে চিঠি দেন সংস্থাটির ছয় এমপি।

বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সরকার এতদিন ধরে প্রত্যাখ্যান করলেও মার্কিন ভিসা নীতির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবার খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেবে। আর রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, বিদেশিদের অব্যাহত চাপে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে শেষ মুহূর্তে নির্বাহী আদেশে মামলা প্রত্যাহার করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিতে পারে সরকার। তবে গত বুধবার খালেদা জিয়ার ‘মুক্তি’র বিষয়ে সরকার বাইরের কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে আবেদন করা হতে পারে।

খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিনা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকার খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করার পর ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আমরা আবেদন করেছি। প্রতিবারই চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি; কিন্তু সরকার আমাদের কথার গুরুত্ব দেয়নি। দু-এক দিনের মধ্যে আবার আবেদন করব। আশা করছি, সরকার দ্রুত তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন বলেন, সরকার যে আইনে বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিয়েছে, সে আইনেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি আমরা তুলে ধরেছি; কিন্তু সরকার সংবিধান অনুযায়ী না চলে নিজেদের আইন অনুযায়ী চলছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিএনসিসি এলাকায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ১৩ লাখ শিশু

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯ কোটি ডলার

৭ বছর পর শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ

কালবেলার সংবাদের পর স্বপ্নের রঙিন ঘরে শাহারবানু

আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিতে কাজ করছে জামায়াত : মুজিবুর রহমান

রাজধানীতে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডেড ভিডিও প্রদর্শন

জবাব দিতে পিএসসিকে আলটিমেটাম

অসদাচরণের অভিযোগে বদলি চিকিৎসক দম্পতি

সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

১০

শহীদ জিয়ার মাজারে দোয়া করলেন খালেদা জিয়া

১১

নোয়াখালী বিভাগ চাইলেন ‘কাবিলা’

১২

বেথ মুনির রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত জয়

১৩

‘বিষাক্ত মদ’ পানে সংরক্ষিত ইউপি সদস্যের স্বামীর মৃত্যু

১৪

বিদায় নিচ্ছে মৌসুমি বায়ু, বৃষ্টি নিয়ে নতুন তথ্য

১৫

ঢাকা উত্তর সিটিতে জন্মনিবন্ধন ছাড়াই টাইফয়েড টিকা মিলবে

১৬

শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারতে খালেদা জিয়া

১৭

জাতীয় পর্যায়ে রানার্স আপ নারী ফুটবল দলকে গণসংবর্ধনা

১৮

দুই বছর আগের মামলায় নতুন করে ‘আসামি’ সাংবাদিক

১৯

বদলির আদেশের ৩ সপ্তাহ পরও অফিস করছেন রাসিক সচিব

২০
X