ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূতত্ত্ব বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন বীরেন্দ্র কুমার সরকার। ১৯৭৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ হলে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিরোধে সহপাঠী রণজিত মজুমদার তাকে হত্যা করে। তবে এ মামলার নিষ্পত্তি হয়নি এখনো। এমনকি আলোচিত এ হত্যা মামলার ৪৭ বছরেও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
শুধু বীরেন্দ্র কুমার সরকার নন, গত দুই দশকে পাঁচটির বেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ঢাবি ক্যাম্পাসে। আর স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৬০ জনের বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় বেশিরভাগই শেষ পরিণতি দেখা যায় না। প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ও হতাহতের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে। আইন অনুযায়ী মামলাও করা হয়। কিছু অভিযুক্তকে আটকও করা হয়। তবে মামলাগুলো চূড়ান্ত বিচারের মুখ দেখে না।
অপরাধ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দেশে হত্যাসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে। দীর্ঘসূত্রতার জন্য আদালত, রাষ্ট্রপক্ষসহ সংশ্নিষ্ট সবাই দায়ী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন সহযোগী অধ্যাপক শাহরিয়া আফরিন এ বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি সবসময় করা হয়, জাতীয়ভাবেও এটা দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারেও এটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। মারা যাচ্ছে, তদন্ত কমিটি হচ্ছে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিছুদিন পর সবাই ভুলে যায়, বিচার ছাড়াই অন্ধকারে থেকে যায়।’
সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অপরাধ কমত উল্লেখ করে এই ঢাবি শিক্ষক বলেন, ‘শুধু হত্যা নয়, বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যদি সঠিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তাহলে আমরা এসব অপরাধ কমাতে পারি। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে। বিচার না হলে সবাই এসব ঘটনা স্বাভাবিক হিসেবেই নেয়। এ বিষয়ে রাষ্ট্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হবে।’
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। একদল দুর্বৃত্ত ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে। এ ঘটনায় আলোড়ন তৈরি হয়েছে ক্যাম্পাসে। একাধিক বিক্ষোভ কর্মসূচি ও ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ছাত্রদল এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাই সাম্য হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। অতীতে বিচার না হওয়ায় শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। গত ৩০ ডিসেম্বর তোফাজ্জল হোসেন হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ছাত্রের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অভিযোগপত্রভুক্ত ২১ ছাত্রের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তারা এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, আর অন্যরা পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র শাহরিয়ার আদনান বলেন, সিসি ক্যামেরা ফুটেজে অনেক শিক্ষার্থী জড়িত থাকার বিষয়টি প্রশাসন জানার পরও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। অনেকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ঘুরছেন। এই হত্যার বিচার না হলে ক্যাম্পাসে এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক।
ঢাবি ক্যাম্পাসে এ পর্যন্ত ঠিক কতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সে সম্পর্কে কোনো নথি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ১৯৭৪ থেকে সর্বশেষ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৬০টির অধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিহত চারজন বহিরাগত। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনো হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধী চূড়ান্ত শাস্তি পায়নি। অনেক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক। কিছু মামলার সাজার আদেশ হওয়া আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। কিছু মামলা এখনো তদন্তাধীন বলে জানা গেছে।
আরও যত হত্যাকাণ্ড: ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্যার এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের সময় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক মারা যান। একইভাবে ২০০৪ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল ইসলাম খোকন। ওই ঘটনার তিন দিন পর তার মৃত্যু হয়। ভিন্ন ঘটনায় ১৯৯৯ সালে খুন হন মনির হোসাইন ও ফিরোজ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র। ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা পার্থ প্রতিম আচার্য। একই বছর দলীয় কোন্দলের জেরে খুন হন ছাত্রলীগের জগন্নাথ হল শাখার এক ছাত্র। ১৯৯৭ সালে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্র আরিফ। এ ছাড়া কার্জন হল থেকে সে সময় উদ্ধার করা হয় শাহিন নামে আরেক ছাত্রের মৃতদেহ। ১৯৯৬ সালে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলের জেরে সংঘর্ষে প্রাণ হারান জগন্নাথ হলের এক ছাত্র। ১৯৯৪ সালে ফজলুল হক হল থেকে উদ্ধার করা হয় গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃতদেহ। ১৯৯৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলীয় অন্তর্কোন্দলে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ কর্মী বুলবুল। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে খুন হন সরোয়ার হোসেন মিঠু নামে আরেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ২৭ অক্টোবর জগন্নাথ হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আরেক ছাত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বহুল আলোচিত হচ্ছে সাত ছাত্র খুনের ঘটনা, যা ১৯৭৪ সালে ৪ এপ্রিল হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ঘটে। ওইদিন রাতে সূর্য সেন হলের সাত শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের মুখে মুহসীন হলের টিভি রুমে নিয়ে স্টেনগান দিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেই খুনের বিচার হয় এবং চার বছর পর আদালত শফিউল আলম প্রধানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। বাকি আসামিদের দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর আসামিরা সবাই ছাড়া পেয়ে যান। ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মারা যান সংগঠনটির শীর্ষ নেতা লুকুসহ দুই কর্মী। একই বছর নুর গ্রুপের ক্যাডারদের হাতে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ নেতা আওরঙ্গের ভাই রন্টু। এ ছাড়া ওই বছরই খুন হন হনু ও গোপাল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষার্থী। ১৯৭৮ সালে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী লিয়াকতসহ আরও দুই শিক্ষার্থী। ১৯৮৩ সালে শিক্ষার্থী ও পুলিশ সংঘর্ষে নিহত হন সাধারণ শিক্ষার্থী জয়নাল। ১৯৮৫ সালে মুহসীন হলের সামনে ছাত্র সমাজের ক্যাডারদের গুলিতে নিহত হন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম নেতা রাউফুন বাসুনিয়া। ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মারা যান আসলাম নামে এক শিক্ষার্থী। ১৯৮৭ সালে মুহসীন হলে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলু এবং তার দুই সহযোগী মইনুদ্দীন ও নূর মোহাম্মদ। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে খুন হন বজলুর রশিদ নামে এক শিক্ষার্থী। তার পরদিনই ছাত্রলীগ (জাসদ)-ছাত্রদল সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রদল কর্মী হালিম। ১৯৮৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রদলের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ (জাসদ) কর্মী কফিল উদ্দিন। একই বছর ২৯ ডিসেম্বর ফিন্যান্স বিভাগের আরিফ নামের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে স্বৈরশাসকের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ডা. শামসুল আলম খান মিলন। ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা চুন্নুর সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে খুন হন সূর্য সেন হলের শিক্ষার্থী আলমগীর কবীর। এ ছাড়া একই বছর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের এক ছাত্রলীগ (জাসদ) কর্মী। সেদিনই ফজলুল হক হলের ডরমিটরি থেকে উদ্ধার করা হয় শাহীন নামে আরেক শিক্ষার্থীর লাশ। ১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ ক্যাম্পাসে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের কর্মীদের গুলিতে খুন হন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মঈন হোসেন রাজু। একই বছর ৪ সেপ্টেম্বর দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হন দুই ছাত্রদল নেতা আশরাফুল আজম মামুন ও খন্দকার মাহমুদ হোসেন। ১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারি শামসুন্নাহার হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তৎকালীন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাদল। একই বছর ১১ জুলাই কার্জন হলের সামনে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী তন্ময়। ১৯৯৩ সালে এক সংঘর্ষে প্রাণ হারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মচারীসহ জিন্নাহ নামের এক শিক্ষার্থী। একই বছর ২২ নভেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র অলক কান্তি পাল।
সাম্য হত্যায় নড়েচড়ে বসেছে ঢাবি: ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের পর নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে রেইড (অভিযান) শুরু হবে। আগস্ট থেকে আমরা ন্যূনতম পাঁচবার রেইড দিয়েছি। আমরা রেইড নিয়মিত করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি কমিটি করা হবে, যারা এ বিষয়ে তদারকি করবে। পর্যাপ্ত লাইটের ও সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হবে।’
রমনা পার্ককে বিবেচনায় রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে যাতে আধুনিক পার্কে রূপান্তরিত করা যায় সেটা নিয়ে সমীক্ষার কথাও জানান ঢাবি উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘উদ্যানকে মাথায় রেখে একটি পুলিশ বক্স বসানোর জন্য ডিএমপিকে অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস শোক পালন করা হবে এবং ক্লাস-পরীক্ষা অর্ধবেলা বন্ধ থাকবে।’
নতুন বাংলাদেশে বিচারহীনতার সুযোগ নেই, বলছেন ছাত্রনেতারা: বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা কালবেলাকে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, কিন্তু সেগুলোর বিচার হচ্ছে না। অতীতের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদে তারা (অভিযুক্ত) অনেকেই জেল থেকে মুক্ত হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। বোঝা যাচ্ছে এখানে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে হস্তক্ষেপ হওয়ার কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। অনেক সময় শাস্তির বিষয়গুলোয় কমিয়ে দেওয়া, বিভিন্ন জায়গা থেকে সুপারিশের বিষয়ে আমরা জানতে পারি। এ বিষয়গুলো নতুন নতুন হত্যাকাণ্ড ঘটানোর বিষয়ে উৎসাহ জোগায়।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব কালবেলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াতে পারে না। সর্বশেষ ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার ঘটনায়ও তাদের দায় আছে বলে আমরা মনে করি।’
তবে ঢাবি শাখা শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘এই অভিযোগটা পুরোপুরি সঠিক নয়, ফ্যাসিবাদের সময়ে বিচারহীনতার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, তবে নতুন বাংলাদেশে এটির কোনো সুযোগ নেই। তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় আমরা দেখছি আটজন গ্রেপ্তার হয়েছে। এরপরও যদি বিচারহীনতার সংস্কৃতি ফের ফিরে আসে, তাহলে ছাত্রশিবির তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে উল্লেখ করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাবি শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিগত দিনেও বিভিন্ন সময় হত্যাকাণ্ড, হামলা ও নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটিও হয়েছে প্রতিবার। কিন্তু কোনো ঘটনারই উল্লেখযোগ্য শাস্তি হয়নি। পূর্বে সংঘটিত বিষয়গুলোর যথাযথ তদন্ত ও বিচার হলে ক্যাম্পাসে এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটত না।’
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বাড়াতে কাজ করছেন জানিয়ে ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমদ কালবেলাকে বলেন, ‘সাম্য হত্যার ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তারা এরই মধ্যে ঘটনাস্থল ভিজিট করেছে এবং আজকেই বৈঠকে বসবে। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সব চেষ্টা করব। আগের মতো কিছু হবে না, শেষ পরিণতি আমরা দেখব। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বসেছি, আরও বসব।’
মন্তব্য করুন