কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গোপালগঞ্জে সহিংসতা

প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা পায়নি পর্যবেক্ষক দল

গোপালগঞ্জের ডিসির বাংলোর ভেতরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার দৃশ্য। ছবি : কালবেলা
গোপালগঞ্জের ডিসির বাংলোর ভেতরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার দৃশ্য। ছবি : কালবেলা

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ১১ জন নাগরিকের একটি পর্যবেক্ষক দল। তারা বলেছেন, সেখানে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা পাননি। এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ঘটেছে কি না, তা যাচাইয়ে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের জন্য সরকারের কাছে দাবিও জানিয়েছেন। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার ওই ১১ নাগরিকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ শহরে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন নিহত হন। পরে অনেকে গ্রেপ্তার হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোপালগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রাথমিক পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে ২২ জুলাই জেলাটি সফর করেন ১১ জন নাগরিক। তারা হলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, মোশাহিদা সুলতানা, রুশাদ ফরিদী, আইনজীবী সারা হোসেন ও মানজুর আল মতিন, সাংবাদিক তাসনিম খলিল, শিল্পী বীথি ঘোষ, লেখক ফিরোজ আহমেদ ও অধিকারকর্মী নাফিউল আলম। এ ছাড়া পর্যবেক্ষক দলে আরেকজন সাংবাদিক ছিলেন, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

আগে থেকে উত্তেজনা: নাগরিক পর্যবেক্ষক দলটি গোপালগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ প্রশাসন, সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এতে ১৬ জুলাইয়ের আগের ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়, আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এবং এনসিপির সমর্থকদের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ানোর তৎপরতা ছিল। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিক থেকে যে কোনো মূল্যে এনসিপির সমাবেশ প্রতিহত করা, সমাবেশে এলে এনসিপির নেতাদের ফেরত যেতে দেওয়া হবে না ইত্যাদি প্ররোচনামূলক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিল। অন্যদিকে গোপালগঞ্জবাসীর প্রতি হুমকি ও উসকানিমূলক বক্তব্যের নিদর্শন মেলে একাধিক ইউটিউবারের টুঙ্গিপাড়াবিষয়ক হুমকি, এনসিপির একজন নেতার হাতুড়ি নিয়ে যাওয়াবিষয়ক মন্তব্য, আরেকজন নেতা কর্তৃক ভেক্যু ভাড়া জানতে চাওয়া এবং আরও অনেকের তৎপরতায়। ‘টুঙ্গিপাড়ার কবর ভাঙার’ হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও স্থানীয় অনেকে বলেছেন। এর সঙ্গে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নামকরণের বিষয়টিও গোপালগঞ্জের বেশকিছু ব্যক্তি উল্লেখ করেছেন। যদিও এনসিপির ছাত্র-সমর্থকরা এই নামকরণের বিশেষ কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে করেন না।

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও সদস্য এবং সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন, তারা আওয়ামী সমর্থকদের প্ররোচনামূলক হুমকির বিষয়টা উল্লেখ করে বলেছেন, এটা উত্তেজনা তৈরি করেছে। এনসিপি সংশ্লিষ্টদের বা সংশ্লিষ্ট বলে অনুমিতদের দিক থেকে প্রচারিত প্ররোচনামূলক বক্তব্য এই উত্তেজনা তৈরিতে কোনো ভূমিকা রেখেছে বলে তারা মনে করেন না। গোপালগঞ্জে সমাবেশ করার আগে টুঙ্গিপাড়ার মাজারের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া প্ররোচনামূলক বক্তব্যের সঙ্গে এনসিপির কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার কথা প্রচার করা এবং এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করার কোনো উদ্যোগ দলটি নেয়নি। সমাবেশের দিন এনসিপি নেতাদের উত্তেজক বক্তব্য পরিস্থিতিকে গুরুতর পর্যায়ে নিয়ে যায় বলে গোপালগঞ্জের কিছু মানুষ মত প্রকাশ করেন।

১১ নাগরিকের বিবৃতিতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের বিষয়ে বলা হয়, সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, নিহত দীপ্ত সাহা গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় নিরস্ত্র ছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আরও কিছু মানুষের সঙ্গে তিনি স্লোগান দিচ্ছিলেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইমন নামের অপ্রাপ্তবয়স্ক আরেকজন ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়। পায়ে লাগা গুলি কী করে প্রাণ নিল, সেটা পরিষ্কার করতে আরও বিস্তৃত অনুসন্ধানের প্রয়োজন। এ ছাড়া রমজান কাজী দৌড়ে পড়ে যাওয়ার পর তাকে প্রথমে মারধর করা হয় ও পিঠে গুলি করা হয়, এমন সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। প্রতিটি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা বিশদ তদন্তের দাবি রাখে। হামলাকারীদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে, তার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি পর্যবেক্ষক দলটি। সাধারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ ‘জনতার’ মধ্য থেকে গুলি করতে দেখেছেন, এমন তথ্য দেননি। তবে সবাই দেশীয় অস্ত্র, বৃষ্টির মতো ঢিল ও ককটেল বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ করেছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলায় সমন্বয়ক রিয়াদ রিমান্ডে 

কাগজপত্র জালিয়াতি করে অধ্যক্ষ হয়েছেন জাকির হোসেন

বিপিএলে ১ বলে ১৫ রান দেওয়া বোলার এবার দিলেন ১ বলে ২২ রান!

পেছাল রাকসু নির্বাচনের তারিখ, প্রতিবাদে শিবিরের বিক্ষোভ

রুমমেটকে ছুরিকাঘাত, ঘটনাটি সাজানো বললেন ভিপি প্রার্থী জালাল

ইরানে ফিরলেন আইএইএ পরিদর্শকরা, পরমাণু সহযোগিতা অনিশ্চিত

জরায়ুমুখের ক্যানসার কেন হয়, কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?

প্রেমিকাকে ফ্ল্যাট ভাড়া দিলেন হৃত্বিক, নেবেন কত রুপি?

বাজারে চিংড়ির খোলসের ভেতর জেলি, অতঃপর...

ডিএমপির ডিবিপ্রধান হলেন শফিকুল ইসলাম

১০

জম্মু-কাশ্মীরে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের পথে ভয়াবহ ধস, ৩০ জনের মৃত্যু

১১

আত্মহত্যায় সাহায্যের অভিযোগে চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা

১২

স্বপ্ন ছোঁয়ার আগেই থেমে গেল অরণ্যের জীবন

১৩

সন্তানকে বাঁচাতে মেট্রোরেলের গেট ধরে মায়ের আহাজারি

১৪

এবার নতুন কর্মসূচির ঘোষণা প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের

১৫

অভিনেত্রী মানেই পোশাক খুলে দাঁড়িয়ে পড়বে?

১৬

প্রীতির হ্যাটট্রিকে নেপালের বিপক্ষে আরেকটি জয় বাংলাদেশের

১৭

গ্রেপ্তার ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালকে নিয়ে রাশেদের পোস্ট

১৮

রাজশাহীতে সিসিএসের বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলন

১৯

কৃষি জমি রক্ষায় দ্রুত আইন আসছে : কৃষি উপদেষ্টা

২০
X