আমজাদ হোসেন হৃদয়
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৪৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আমরা কিছুটা শঙ্কিত

সা ক্ষা ৎ কা র
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আমরা কিছুটা শঙ্কিত

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচন করছেন শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম। ডাকসুর এবারের নির্বাচনের পরিবেশ, নিজেদের প্রত্যাশা, বাস্তবতা, নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিজের কর্মপরিকল্পনাসহ নানান বিষয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমজাদ হোসেন হৃদয়

২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন তো আপনারা পেয়েছিলেন। ২০২৫ সালের যে নির্বাচন, এর মধ্যে পার্থক্য কী দেখছেন?

সাদিক কায়েম: প্রথমত হলো, ২০১৯ সালে তখন ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা। ক্যাম্পাসগুলো ছিল সন্ত্রাসীদের একেকটা ক্যান্টনমেন্ট। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। ‘গণরুম’ কালচার চলত। প্রতিদিন রাত কাটত আতঙ্কের মধ্যে, হাজার হাজার নিরীহ শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন চালানো হতো। আমাদের ইসলামী ছাত্রশিবিরের হাজার হাজার জনশক্তির ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। নারীরা অনিরাপদ ছিল। ছাত্রী হলগুলোতে তাদের যে নিরাপত্তা থাকার কথা, সেটিও অনুপস্থিত ছিল। পুরো ক্যাম্পাসই ছিল অনিরাপদ অবস্থায়। কিন্তু এই জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে এখন সব শিক্ষার্থী আজাদি পেয়েছে। সবাই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছে। ক্যাম্পাসে

একটি প্যারাডাইম শিফট হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি সহাবস্থান তৈরি হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের এটাই সবচেয়ে বড় সার্থকতা। শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজকে একটি অসাধারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। একই সঙ্গে জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সবচেয়ে বড় সফলতা হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়া; এটাই হচ্ছে মূল পার্থক্য।

কালবেলা: নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত আপনারা কেমন পরিবেশ দেখছেন? কোনো ধরনের শঙ্কা আছে কি না?

সাদিক কায়েম: সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান ও পূর্বশর্ত হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট দলকে বেশি প্রতিনিধিত্ব করছে এবং তারা একটি বিশেষ আদর্শ লালন করছে। আমরা বারবার বলছি, সব অংশীজন ও ছাত্র সংগঠনের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে যে কেউ তার নিজস্ব আদর্শ রাখতে পারে, তবে শিক্ষকদের আমরা শিক্ষক হিসেবেই দেখতে চাই। যদি শিক্ষকরা তাদের দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন এবং তাদের দলের ছাত্রদের ফেভার (বাড়তি সুবিধা) দেন, তবে তারা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন, যা আমরা চাই না।

কালবেলা: আপনারা সম্পূর্ণ নিজেদের প্যানেল না দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল দিয়েছেন। সেটি কেন?

সাদিক কায়েম: আমরা আমাদের জুলাই বিপ্লব থেকে একটি শিক্ষা নিয়েছি— ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করলে সফলতা আসে। তখন আমরা ডান, বাম বা মধ্যপন্থি হিসেবে নয়; বরং একটি সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলন করেছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝেছি, নতুন বাংলাদেশ যদি সবার হয়, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও সবার করতে হবে। আর সেটা সম্ভব হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেলের মাধ্যমে। এই প্যানেলে আমরা চেষ্টা করেছি, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার, চাকমা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, নারী শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ, জুলাই বিপ্লবের তরুণ যোদ্ধাদের অভিজ্ঞতা, ক্রীড়াবিদ, অ্যাক্টিভিস্ট ও গবেষকদের মতামত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে। আমাদের লক্ষ্য হলো সবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও দাবিগুলো ডাকসুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হবে। এ কারণে আমরা স্পেশালাইজেশনের (বিশেষত্ব) ভিত্তিতে সম্পাদক নির্বাচন করেছি।

কালবেলা: আপনাদের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ কতটা সফল হতে পারবে বলে মনে করেন? ভিপি পদে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন?

সাদিক কায়েম: আমরা জুলাই বিপ্লবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীতি নির্ধারণ এবং সমন্বয়ে জড়িত ছিলাম। বিশেষ করে যদি বলি সবচেয়ে ক্রুশিয়াল (সংকটময়) সময়ে প্রথম থেকে মাঠ পর্যায়ের সমন্বয়ের কাজে আমি সরাসরি যুক্ত ছিলাম। ১৯ জুলাই থেকে শুরু করে একদম ২ আগস্ট পর্যন্ত যখন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও কারফিউ জারি ছিল, তখন নীতিনির্ধারণ করা, মাঠপর্যায়ে সমন্বয় করা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা—এসব আমি সার্বিকভাবে সমন্বয় করেছি। প্রতিদিন আন্দোলনের ভেতরে থেকে মাঠপর্যায়ে সমন্বয় করা, ডাইভার্স কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা এবং আন্দোলন সফলভাবে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া—এসব কাজ বাস্তবায়ন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী এক বছরেও আমরা শহীদদের আকাঙ্ক্ষার আলোকে ছাত্ররাজনীতি বিনির্মাণ করেছি। শহীদ পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে আলোচনা, শহীদদের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার কথা বলা—এসব কাজও আমরা জারি রেখেছি। পাশাপাশি ইনক্লুসিভ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জ শিক্ষার্থীদের নিয়ে অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন, তাদের প্রত্যাশা ও দাবি শোনা এবং তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উত্থাপন করা—এসব উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এখন এক বছরজুড়ে এসব কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছি, তাতে আমরা অনেক বেশি আশাবাদী। শিক্ষার্থীরা আমাদের নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখছে। আমি শুধু একটি গ্রুপের ভেতরে সীমাবদ্ধ ছিলাম না। জুলাইয়ের আন্দোলনে কাজ করার পর অনেকেই তাদের নিজ নিজ গ্রুপে ফিরে গেছে এবং গোষ্ঠীগত কাজে সীমাবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আমি সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি, সবার কথা শুনেছি, সবার কাছে গিয়েছি। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা আমাকে ভিপি হিসেবে চায় এবং আমার নেতৃত্বকে তারা পছন্দ করছে।

কালবেলা: ছাত্রীদের হল এবং জগন্নাথ হলে শিবিরের প্যানেল সমর্থন কম পাবে—এমন গুঞ্জন রয়েছে। এ দুই জায়গা নিয়ে আপনাদের চিন্তাভাবনা কী?

সাদিক কায়েম: অতীতে ডাকসু-চাকসু-রাকসু নির্বাচনে ছাত্রীদের সর্বাধিক সমর্থন পেয়েছে শিবির। গত এক বছরে প্রশাসনের কাছে দাবি উত্থাপন ও নানা কার্যক্রমে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ ও সাড়া সবচেয়ে বেশি ছিল। তারা আমাদের নেতৃত্বের দায়িত্বশীলতা, দক্ষতা, মেধা ও সংকট মোকাবিলার ক্ষমতা পছন্দ করছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি এবারও ছাত্রীদের ভোটে আমাদের প্যানেল বিজয়ী হবে। আমাদের জোটে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও পরামর্শ বিশেষভাবে উৎসাহ জোগাচ্ছে। যখন প্রচারণা চালাতে যাচ্ছি, তখন ছাত্রীরা ভালো পরামর্শ দিচ্ছে, আমাদের কাজকে প্রশংসা করছে এবং কোলাবোরেশনে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা খুবই আশাবাদী। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও দাবির সঙ্গেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তাদের অধিকার ও বঞ্চনার বিষয়গুলো ম্যানিফেস্টোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং প্যানেলে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা নারীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

কালবেলা: নির্বাচিত হলে নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আপনাদের প্রতিশ্রুতি কী কী?

সাদিক কায়েম: আমাদের ম্যানিফেস্টোতে থাকবে—ছাত্রীদের সেফটি ও সিকিউরিটি জোরদার করা; গার্ডিয়ান লাউঞ্জ ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ব্যবস্থা; ক্যান্টিন ও হাইজিন সুবিধা উন্নত করা; রাতের জরুরি চিকিৎসা ও নারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ; নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার; সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ। প্রতিজ্ঞা করছি, নারীদের জন্য একটি নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার এই পথযাত্রায় আমরা থামব না।

কালবেলা: বিপ্লব-পরবর্তী ডাকসুতে আপনাদের অঙ্গীকার কী?

সাদিক কায়েম: আমরা বিশ্বাস করি, এই নেতৃত্বে সততা, দক্ষতা ও দীর্ঘদিনের লিগ্যাসি আছে। নারী শিক্ষার্থীসহ অধিকাংশ শিক্ষার্থী আমাদের প্রতি আস্থা রাখছে। গত এক বছরে আমাদের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তাই আমরা মনে করি, এ ঐক্যবাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার্থী জোটই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত কণ্ঠস্বর হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রথম উদাহরণ স্থাপন করবে। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে হলে উঠেই তার খাদ্যের নিরাপত্তা, খাট, চেয়ার, টেবিল, লাইব্রেরির সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিন্তিত হতে হয়। এগুলো আমরা নিশ্চিত করব, কোনো দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। এ ছাড়া এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে নারীরা মুক্তভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেই রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাকসুর নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা

কখনো কোমরপানি, কখনো কোলে চড়ে স্কুলে যায় শত শিক্ষার্থী

সহকর্মীকে নিয়ে পরীমনির গুঞ্জন

বিপিএল মাতানো ক্রিকেটারকে ‘মুক্তি’ দিলেন আইপিএল খেলা ক্রিকেটার

ইরান ও পাক সেনাপ্রধানের ফোনালাপ, আলোচনায় ছিল যেসব বিষয়

বাচ্চা পটি করতে চাইছে না? জেনে নিন কী করবেন

সিলেটে পাথরকাণ্ডে এবার মাঠে নেমেছে সিআইডি

ভূমি অফিসের দায়িত্বে ঝাড়ুদার 

আর চাপ সহ্য করতে পারলেন না ডলি

তত্ত্বাবধায়ক বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি 

১০

এক নজরে দেখে নিন এশিয়া কাপে অংশগ্রহণকারী ছয় দলের স্কোয়াড

১১

জনবল সংকট আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ধুঁকছে স্বাস্থ্যসেবা

১২

কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

১৩

পলক-আনিসুল-সালমান-কামরুলসহ ৬ জন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার 

১৪

জেনে নিন বাড়তি আয়ের ৫টি চমৎকার উপায়

১৫

সীমানা পুনর্নির্ধারণ: ইসিতে চতুর্থ দিনের শুনানি চলছে

১৬

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা

১৭

আইপিএল থেকে অবসরের ঘোষণা তারকা স্পিনারের

১৮

শাহবাগ মোড় অবরোধ করে প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৯

শাহরুখ-দীপিকার বিরুদ্ধে এফআইআর

২০
X