শিশু লালন-পালনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো তাদের পটির দায়িত্ব নেওয়া—বিশেষ করে জীবনের প্রথম কয়েক বছর। কখনো নবজাতকের 'ব্লোআউট', কখনো বাইরের জায়গায় ডায়াপার পাল্টানো, আবার কখনো পটি প্রশিক্ষণ চলাকালীন একেবারে ‘জটিল পরিস্থিতি’! এসব সামলে ওঠা একরকম মিশনই বটে।
তবে, সবচেয়ে চিন্তার বিষয় তখন হয়, যখন আপনার ছোট্ট সোনামণি হঠাৎ করেই পটি বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে স্টুল উইথহোল্ডিং বা মল চেপে রাখা। অনেক বাচ্চাই এটা করে থাকে, বিশেষ করে পটি ট্রেনিংয়ের সময়।
চলুন জেনে নিই কেন এটা ঘটে এবং আপনি কীভাবে সন্তানের পাশে থেকে তাকে সাহায্য করতে পারেন।
এই সমস্যার অনেক কারণ থাকতে পারে। সাধারণ কারণগুলো হলো—
কষ্ট করে পটি হওয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য: শক্ত মল বের করতে গিয়ে ব্যথা লাগলে, বাচ্চা পরবর্তী সময় পটি করার ভয় পায়।
টয়লেটের ভয়: জোরে ফ্লাশ হওয়া বা অচেনা পরিবেশে পটি করতে গিয়ে ভয় পাওয়াও হতে পারে কারণ।
পুরোপুরি পটি ট্রেনিং হয়নি: অনেক বাচ্চা প্রস্রাব ঠিকমতো পটিতে করলেও পটি নিয়ে দ্বিধায় থাকে।
ইচ্ছাকৃত বিরোধিতা: আপনি চাচ্ছেন সে পটি করুক, সে ঠিক তখনই তা না করে স্বাধীনতা প্রকাশ করতে চায়।
খেলার ব্যস্ততা: খেলাধুলা বা টিভি দেখা নিয়ে এতটাই মগ্ন থাকে যে পটির জন্য সময় বের করতে চায় না।
সেনসরি বা মানসিক বিষয়: অটিজম, স্নায়বিক সংবেদনশীলতা বা অজানা মানসিক চাপ থেকেও পটি না করতে চাইতে পারে।
চিকিৎসাজনিত কারণ (অতি বিরল): হাইপোথাইরয়েডিজম, সেলিয়াক ডিজিজ, গাঁটযুক্ত মল (ফেকাল ইমপ্যাকশন) অথবা অন্ত্রের সমস্যাও এর পেছনে থাকতে পারে।
বাচ্চা যত বেশি পটি আটকে রাখবে, তত বেশি তা শক্ত হবে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা, প্রস্রাব বা মল অনিচ্ছাকৃত বের হয়ে যাওয়া, এমনকি ইউরিন ইনফেকশনও হতে পারে। তাই সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ধৈর্য ধরুন ও চাপ দেবেন না: আপনি চিন্তিত থাকলে বাচ্চাও আতঙ্কিত হয়ে উঠবে। পটি সময়কে সহজ ও স্বাভাবিক রাখুন।
পটি করার পরিবেশ ঠিক করুন: বাচ্চার পটি চেয়ার আরামদায়ক ও নিরাপদ কি না দেখে নিন। পা যেন ঠিকভাবে মাটিতে বা স্টুলে ঠেকে।
খাবারের পরিবর্তন আনুন: আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল (যেমন পেয়ারা, পেঁপে), এবং কিছু হোল গ্রেইন যুক্ত করুন। দুধ ও অতিরিক্ত চিনি কম দিন।
পানি খাওয়ান: পর্যাপ্ত পানি পান মল নরম রাখতে সাহায্য করে। বাচ্চা পানি কম খেলে, ফল বা তরল জাতীয় খাবার দিতে পারেন।
পজিটিভ রিওয়ার্ড দিন: বাচ্চা চেষ্টাও করলে প্রশংসা করুন। ছোট উপহার, স্টিকার বা মজার গেমও কাজে আসতে পারে।
শিক্ষা দিন: কার্টুন বই বা গল্পের মাধ্যমে বাচ্চাকে বোঝান পটি করা শরীরের জন্য কত দরকারি।
আপনি নিজে উদাহরণ দিন (যদি স্বচ্ছন্দ হন): বাচ্চারা বড়দের অনুকরণ করতে পছন্দ করে। আপনি যদি স্বাভাবিকভাবে বাথরুম ব্যবহার করেন, তাহলে বাচ্চাও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে।
সব চেষ্টা সত্ত্বেও বাচ্চা যদি এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় পটি না করে, কিংবা ব্যথায় কাঁদে, পেট ফুলে থাকে, অথবা প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে চাইল্ড স্পেশালিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
চিকিৎসক প্রয়োজনে মল নরম করার ওষুধ বা ফাইবার সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন। তবে কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব দিন না।
বাচ্চা বয়সে পটি না করা বেশ সাধারণ সমস্যা, তবে ধৈর্য, ভালো খাবার ও সহানুভূতির মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠা যায়।
মনে রাখবেন, পটি করা কোনো যুদ্ধ নয়। এটি একটি প্রাকৃতিক বিষয় — এবং আপনার সহানুভূতি ও বোঝাপড়াই হতে পারে আপনার সন্তানের সবচেয়ে বড় সহায়।
সূত্র: হেলথলাইন
মন্তব্য করুন