প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৌশলগত দিক থেকে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ-ফ্রান্স দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বাস রাখি, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের পথে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং তার বাইরের দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।
গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজের আগে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নৈশভোজের আগে চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ফ্রান্স আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। যুদ্ধের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ বিশ্বের চলমান সমস্যা সমাধানে যৌথ ভূমিকা রাখতে কাজ করব। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব এবং দায়িত্বশীল বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
ইমানুয়েল মাখোঁ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাঙালিদের বিশেষ সৌন্দর্য। জাতীয় সংগীতের কয়েক লাইন গেয়েও শোনান তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সবাই করতালির মাধ্যমে তাকে উৎসাহ দেন।
এর আগে ভারতে জি-২০ সম্মেলন শেষে রোববার রাত ৮টায় দুদিনের সফরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় মাখোঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনাও এসেছেন। দুদিনের সফর হলেও মাখোঁ সব মিলিয়ে ঢাকায় থাকবেন ১৬ ঘণ্টা। ৩৩ বছর পর এটিই ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর। ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা ঢাকা সফর করেছিলেন।
রাতে মাখোঁ ধানমন্ডি লেক এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পর তিনি জলের গান ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট রাহুল আনন্দের স্টুডিওতে যান। সেখানে তিনি তরুণ শিল্পীদের একটি কর্মশালা দেখেন ও গান শোনেন।
ঢাকা ও প্যারিস সূত্রগুলো জানায়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বহুমুখী ও নিবিড় করার বার্তা নিয়ে ঢাকায় এসেছেন মাখোঁ। তার সফরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, বিমান কেনা ও স্থানীয় সরকার প্রকল্পে অর্থায়নে সহযোগিতা বিষয়ে তিনটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক ও সম্মতিপত্র স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। ফ্রান্সের সঙ্গে অ্যারোনোটিকস খাতেও কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। এয়ারবাস থেকে ১০টি বিমান ক্রয়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ফ্রান্সের জোরালো সহায়তা ছাড়াও ইন্দো-প্যাসিফিকে সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশিদের স্কলারশিপসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
আজ সোমবার সকালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে মাখোঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এরপর তিনি সকাল পৌনে ১০টায় যাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই নেতা কিছু সময়ের জন্য একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর তারা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশ নেবেন। ফ্রান্স দূতাবাসের আয়োজনে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে আজ দুপুরেই তার ঢাকা ছাড়বেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
মন্তব্য করুন