বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে একই সঙ্গে গণভোট নেওয়ার প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। স্থায়ী কমিটি মনে করে, গণভোটের ‘হ্যাঁ’-‘না’ ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত পরবর্তী সংসদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে। রাজনৈতিক ঐকমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিএনপির অঙ্গীকার। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের নীতিনির্ধারকরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রস্তুতি এবং সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েও আলোচনা হয়। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একযোগে তারেক রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।
সূত্র মতে, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকের আলোচনার সারাংশ স্থায়ী কমিটিকে অবহিত করেন। এরপর স্থায়ী কমিটিতে সেটি নিয়ে বিশেষ করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে একই সঙ্গে গণভোট নেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অভিমত, গণভোটের জন্য এখন আর সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই। রেফারেন্ডামের (গণভোট) যে আর্টিকেল ১৪২, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার সেটা উড়িয়ে দিয়েছিল, যেটা হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন হয়েছে। ফলে সংবিধান বা অন্যান্য জাতীয় ইস্যুতে গণভোট করা যাবে না, এমন কোনো বিধান নেই।
স্থায়ী কমিটি আরও মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের যে আলোচনা বা প্রস্তাব এসেছে, সেটি যৌক্তিক। সরকার এখন অধ্যাদেশ জারি করে অথবা আরপিওতে সংশোধনী এনে গণভোট পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতা দিতে পারে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে এই গণভোট করতে পারে। এতে একই আয়োজন, একই অর্থ ব্যয়, একই লজিস্টিকস, একবার ভোট সেন্টারে যাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে।
তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পৃথকভাবে এ গণভোটের আয়োজন চায়। জানা গেছে, এ বিষয়টি নিয়েও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটি মনে করে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে পৃথকভাবে গণভোট আয়োজনের অসুবিধা রয়েছে। সেটি হলো আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিশাল আয়োজনের জন্য দেশকে প্রস্তুত করতে হবে। নির্বাচনকে বিলম্বিত করা এর একটি উদ্দেশ্য হতে পারে। একই দিনে দুটি ব্যালট দিলে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে বলে অনেকের যে ধারণা, সেটির সঙ্গেও ভিন্নমত পোষণ করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। স্থায়ী কমিটির অভিমত, এখনই দেশের মানুষ স্থানীয় সরকার, উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দু-তিনটি ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত।
বৈঠকে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রস্তুতি এবং প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলমান। এ ব্যাপারটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিগগির দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে অধিকাংশ আসনে একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল (সবুজ সংকেত) দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। চলতি মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন