

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশী দেশের উপদেশ সরকার চাইছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সরকার প্রথম দিন থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে, মানুষ যেন ভোট দিতে যায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যে পরিবেশ গত ১৫ বছর ছিল না। ভারত আমাদের এটা (নির্বাচন) নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। এটাকে আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি। তারা (ভারত) জানে, গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল, তাদের সঙ্গে (ভারতের) অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল। ওই সময় নির্বাচনগুলো যে প্রহসনমূলক হয়েছিল, সে সময় তারা (ভারত) একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এখন সামনে আমরা একটা ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, এ মুহূর্তে তো আমাদের নসিহত করার কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে—এটা নিয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও জোটও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করেছে। তারাও ভারতের মতো নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করছে। এটিকে অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে দেখছে—জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টা কিন্তু একরকম নয়। তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু যোগাযোগ সবসময় আছে এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে। কারণ, আমরা চাই, তারা এখানে তাদের অবজারভারদের (নির্বাচন পর্যবেক্ষক) পাঠাক।
এদিকে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে গত ১৪ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের পাল্টা হিসেবে গতকাল বুধবার দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই পাল্টাপাল্টি তলব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও অবনতির ইঙ্গিত কি না—জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার ইস্যু নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা তাদের হাইকমিশনারকে ডেকেছি। এটার ব্যাপারে তাদের আমরা যা কিছু বলেছি, সেটা তারা গ্রহণ করেনি বা তাদের কিছু দ্বিমত আছে। এ বিষয়ে একইভাবে আমাদের হাইকমিশনারকেও তারা ডেকেছে। এটা খুব অপ্রত্যাশিত নয়। সাধারণত এটা ঘটে, একজনকে ডাকলে আরেকজনকে ডাকা হয়। এখানে বিষয়টা হচ্ছে—অন্য একটা ফেইজে প্রবেশ করলাম কি না, এটা বলা খুব কঠিন। কারণ, আমাদের তো বাস্তবতা মেনে নেওয়াই ভালো যে, আসলে তো এই সরকারের শুরু থেকে আজকে পর্যন্ত টানাপোড়েন আছে। ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন ছিল, এটা মেনে নিয়েই আমরা সবসময় বলে আসছি—আমরা একটা গুড ওয়ার্কিং রিলেশন চাই। কিন্তু আমরা চাইলেই যে সেটা হবে, এমন কোনো কথা নেই। সম্পর্ক দুই পক্ষ থেকেই আগানোর চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় আমরা দুই পক্ষ মিলিয়ে হয়তো অতটা এগোতে পারিনি। যে কারণে টানাপোড়েনটা রয়েই গেছে। ইদানীং কিছু কিছু বিষয়ে আমাদেরও আপত্তি আছে। তাদেরও নিজস্ব অবস্থান আছে। আমরা জানি, শেখ হাসিনা ভারতে বসে আগে বক্তব্য দিতেন শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায়; কিন্তু আমরা পরবর্তী সময় দেখলাম মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও তার বক্তব্য এসেছে এবং সেই বক্তব্যের মধ্যে প্রচুর প্রভোকেশন আছে। যিনি এখানে একটা কোর্ট থেকে শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি আমাদের পাশের দেশে বসে এখানে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এটা আমরা আপত্তি করব বা তাদের সহায়তা চাইব যে, তাকে ফেরত পাঠান। এটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তারা সেদিকে যায়নি। ভারত যদি তাকে (শেখ হাসিনা) থামাতে না চায়, আমরা থামাতে পারব না। এটা বুঝে নিতে হবে আমাদের।
ভারতের সেভেন সিস্টারস নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে হাসনাতের বক্তব্যকে তার ব্যক্তিগত মতামত বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, প্রথমেই প্রশ্ন হচ্ছে, হাসনাত কি সরকারের অংশ? সে তো সরকারের অংশ নয়, কাজেই সরকারের বক্তব্য যদি হতো, সেটা হয় আমি বলতাম, নয়তো সরকারের যে সর্বোচ্চ অফিস সেখান থেকে বলত। কাজেই এটা অনেকটাই অবান্তর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। আমরা কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীকে আমাদের ভূমিতে আশ্রয় দেব না। একজন রাজনৈতিক নেতা বলতে পারেন। কিন্তু এদেশের কোনো সরকারই এটাকে সমর্থন করবে না।
মন্তব্য করুন