

গ্রামবাংলার কৃষি সংস্কৃতিতে যুগে যুগে বলদ, লাঙল আর জোয়ালের ছিল গভীর সম্পর্ক। কাকডাকা ভোরে গরু নিয়ে মাঠে নামার দৃশ্য ছিল নিয়মিত দৃশ্যপট। তবে আধুনিক যান্ত্রিক কৃষির ঢেউয়ে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় সেই ঐতিহ্য প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।
কৃষকরা জানান, গরু দিয়ে চাষে জমি গভীরভাবে নরম হতো, গরুর পায়ের কাদা তৈরির প্রক্রিয়া ও গোবর জমির উর্বরতা বাড়াত। তবু সেসব সুবিধা টিকতে পারেনি সময়ের গতিতে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারে কম পরিশ্রমে, অল্প সময়ে ও তুলনামূলক কম খরচে জমি প্রস্তুত হওয়ায় কৃষকরা আর বলদের ওপর নির্ভর করছেন না।
ফলে এক সময় যে পেশায় গ্রাম ঘর মুখর ছিল, তা এখন প্রান্তিক কৃষকদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। কাজ কমে যাওয়ায় বহু বলদ-নির্ভর হালচাষি পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার রাজাখালী গ্রামের কৃষক আবদুল মজিদ হাওলাদার পুরোনো স্মৃতি মনে করে বলেন, শৈশবে হাল চাষ করেই বড় হয়েছি। বাড়িতে কয়েক জোড়া বলদ, কাঠের লাঙল ও বাঁশের জোয়াল ছিল। এখন সেসব আর চোখেই পড়ে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ইমরান কালবেলাকে বলেন, পরিবেশবান্ধব ও ঐতিহ্যবাহী এ কৃষি পদ্ধতি সময়ের বাস্তবতায় পিছিয়ে পড়েছে। গরু ও লাঙল গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক প্রতীক ছিল। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিতে কম সময়ে কম খরচে বেশি ফলন মিলছে। সামনে কৃষি আরও প্রযুক্তিনির্ভর হবে।
গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক স্মৃতি, কৃষকের কাঁধের জোয়াল আর মাঠ জোড়া লাঙল কাটার শব্দ— সব মিলিয়ে এক দীর্ঘ ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে। আধুনিকতার লাভ থাকলেও, ইতিহাসের ওই দৃশ্যগুলো এখন কেবল স্মরণেই বেঁচে আছে।
মন্তব্য করুন