সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপি ও শরিকদের দেশব্যাপী চলমান রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি বাড়ছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার এবং পরদিন শনিবার বাদ দিয়ে আগামী রোববার থেকে সপ্তাহজুড়ে ফের টানা অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। স্থায়ী কমিটিসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা দলের হাইকমান্ডকে চলমান অবরোধ কর্মসূচি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপতের শরিকরাও এরই মধ্যে বিএনপিকে এমন প্রস্তাব দিয়েছে। ফের হরতালের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। অবরোধ বাড়ানোর প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়েই আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে একদফা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে, যা প্রথম ধাপের চলমান অবরোধ কর্মসূচি শেষে ঘোষণা করা হতে পারে। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার টানা অবরোধ কর্মসূচি আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে।
গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বিএনপির নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শেষ হয়ে যায়। দলটির দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার কারণে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষ করতে হয়েছিল এবং এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এর প্রতিবাদে পরদিন রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। হরতাল কর্মসূচি শেষে মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপির নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বিএনপি তাদের চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে জনগণের ব্যাপক সাড়া দেখছে। দলটির দাবি, জনগণের সমর্থনে দীর্ঘদিন পর নজিরবিহীন হরতাল পালিত হয়েছে। এ কারণে সরকারের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সড়কপথে দূরপাল্লার কোনো যান চলেনি। ঢাকার ভেতরেও সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি অনাস্থা দিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। এ বিষয়টি দাবি আদায়ে বিএনপিকে টানা কর্মসূচিতে যেতে অনুপ্রাণিত করছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছাতে চায় দলটির হাইকমান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম দফার অবরোধ শেষে আগামী সপ্তাহজুড়ে ফের দেশব্যাপী টানা অবরোধ কর্মসূচি আসতে পারে। এমনকি আগামী সপ্তাহের পরও অবরোধ অব্যাহত থাকতে পারে। দলটির কয়েকজন নেতা বলছেন, চলমান কর্মসূচিতে তারা যে সাড়া পাচ্ছেন, তাতে আশাবাদী যে, অচিরেই আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের অবরোধ কর্মসূচি আরও কঠোরভাবে পালনের পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণে ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীদের সর্বতোভাবে গ্রেপ্তার এড়িয়ে এবং কোনো শোডাউন না দিয়ে আগামী দিনের কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এখন আন্দোলনের সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গ্রেপ্তার হলেও চলমান আন্দোলনে কোনো ছন্দপতন হবে না বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।
এদিকে মহাসমাবেশকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান চলমান থাকায় বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে আসতে না পারলেও অভ্যন্তরীণভাবে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশে হামলার ঘটনায় সরকার ও পুলিশকে দায়ী করে গত সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনায় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, সেটাকে আন্দোলনের পথে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি।
এদিকে চলমান অবরোধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি চূড়ান্ত অনাস্থা জানিয়েছে বলে দাবি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের। মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, সারা দেশের মানুষ এই অবরোধের মধ্য দিয়ে আরও একবার সরকারের ওপর তাদের চূড়ান্ত অনাস্থা ব্যক্ত করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা একদিকে সরকারের একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারাকে যেমন গ্রহণ করছে না, একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে দুর্বিষহ জীবনকে তারা যে আর নিতে পারছে না, সেটিও জানাচ্ছে। মানুষের এই সমর্থন না থাকলে অবরোধ কর্মসূচি এভাবে সফল হতো না। সুতরাং এটাও সরকারের জন্য বড় একটি রাজনৈতিক বার্তা। আমরা মনে করি, আগামী দিনগুলোতে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা আরও বাড়বে এবং সরকারের ওপর আমরা একটি কার্যকর চাপ তৈরি করতে পারব।
আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার সম্ভবত বড় কোনো কর্মসূচি থাকবে না। কিন্তু দাবি আদায়ে এর পর থেকে টানা কর্মসূচির দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ বিষয়ে আমরা
আলাপ-আলোচনা করছি।