রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০৭ এএম
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২২ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কর্মসূচি টেনে নেওয়ার চ্যালেঞ্জে বিএনপি

রবি ও সোমবার ফের অবরোধ
বিএনপির লোগো
বিএনপির লোগো

সরকারের পদত্যাগ দাবিতে একদফার চলমান আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যাওয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিএনপি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘাতের পর হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার বেড়ে যাওয়ায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনে ‘ঝটিকা কৌশল’ অবলম্বন করছে দলটি। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় অনেক নেতাকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত থাকায় ঝটিকা কৌশলেও রাজপথে কতদিন কর্মসূচি পালন করা যাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই সন্দিহান।

বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকার পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি পণ্ড করে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র ও সক্রিয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুতগতিতে বিচার সম্পন্ন করে অনেক নেতাকে সাজা দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য, তাদের নির্বাচনে অযোগ্য করা এবং বিএনপিকে ভোট থেকে দূরে রাখা। সরকার কোনো ধরনের আলোচনা-সমঝোতা ছাড়া যে আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে সেটিই প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই দাবি মানতে বিএনপির সামনে এখন হরতাল-অবরোধ বা এ ধরনের কর্মসূচি ছাড়া বিকল্প নেই। যতদিন প্রয়োজন, ততদিন কর্মসূচি টেনে নিয়ে যাবেন তারা।

২৮ অক্টোবরের ঘটনার পরদিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকে তারা। এরপর মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিবসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুরু হয় অবরোধ কর্মসূচি। প্রথম দফায় ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিন, দ্বিতীয় দফায় ৫ থেকে ৬ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টা এবং সর্বশেষ ৮ নভেম্বর থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়। আজ শুক্রবার ভোর ৬টায় এই কর্মসূচি শেষ হবে। তার আগেই আগামী রোববার থেকে সারা দেশে ফের ৪৮ ঘণ্টার ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহে তিন দফায় ১৬৮ ঘণ্টার অবরোধ এবং ২৪ ঘণ্টা হরতাল পালন করেছে বিএনপি। তবে দলটির নেতাকর্মীরা কোথাও রাস্তা অবরোধ করতে পারেননি। তারা বেশি সময়ের জন্য প্রকাশ্যে সমবেতও হতে পারেননি। কোথাও কোথাও ঝটিকা মিছিল করে অবস্থান জানান দেওয়া হচ্ছে। তবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিলে বড় নেতাদের পাওয়া যাচ্ছে না। হাতেগোনো কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি তৃণমূলের কিছু নেতা মহাসড়ক-সড়কগুলোতে কিছুক্ষণের জন্য মিছিল করে, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সফল করার চেষ্টা করছেন। এ কারণে মহাসড়কে অবরোধ কিছুটা কার্যকর হলেও শহরগুলোতে এর তেমন একটা প্রভাব পড়ছে না।

এদিকে জেলা পর্যায়ে অবরোধ জোরদার করতে সম্প্রতি দলের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু তাদেরও রাজপথে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। দু-একজন বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিচ্ছেন।

দেখা গেছে, অবরোধ সমর্থনে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ফজলুর রহমান খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুবদলের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, উত্তরের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সরদার মো. নুরুজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার, ছাত্রদলের প্রথম সহসভাপতি তানজিল হাসান, সহসভাপতি আকতারুজ্জামান আক্তার, নাছির উদ্দিন নাছির, মো. মারুফ এলাহী রনি ও শ্যামল মালুম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাফি ইসলাম, ডা. আউয়ালের নেতৃত্বে একাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এবং কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বেও মিছিল হয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকে বিক্ষিপ্তভাবে অল্প কিছু মিছিল হয়েছে। তবে সেটা আশাব্যঞ্জক নয় বলে মনে করছেন নেতাদের অনেকে।

অবশ্য হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি যতটুকু পালিত হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট বিএনপির হাইকমান্ড। আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপের এই কর্মসূচি নিয়ে দলটির মূল্যায়ন হচ্ছে, এখন পর্যন্ত অবরোধ ভালোভাবেই পালিত হচ্ছে। শহরকেন্দ্রিক মানুষের চলাচল বাড়লেও তা বেশি বলা যাবে না। দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। এর মানে হচ্ছে, বিএনপির আন্দোলনের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন আছে, কর্মসূচিতে তারা সাড়া দিচ্ছে।

বিএনপির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মহাসমাবেশের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৩১ জনের অধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাই পুলিশি অভিযান অব্যাহত থাকায় যতদূর সম্ভব নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্দোলনের মাঠে নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে বিকল্প চ্যানেলে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে থাকায় এখন বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে সরাসরি আন্দোলন মনিটরিং করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল-সব স্তরের নেতাদের বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, এভাবে আরও কিছুদিন আন্দোলন চালিয়ে গেলে পরিস্থিতির একটা আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, ‘একদফা দাবিতে আন্দোলন চলছে। জনগণের সমর্থনে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের বিজয় পতাকা উড্ডীন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে।’

দলটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের কৌশল হিসেবে নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছেন। এর মধ্যেও তারা রাজপথে থেকে কর্মসূচি সফল করার চেষ্টা করছেন। কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নেতাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করছে।’

ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা:

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দুদিন বিরতি দিয়ে চতুর্থ দফায় আগামী রোববার থেকে ফের সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে বিএনপি। তৃতীয় দফার অবরোধ শেষ হওয়ার আগেই গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা দাবি আদায়, নিহত নেতাকর্মীদের হত্যার বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা এবং গ্রেপ্তার হওয়া মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক মণ্ডলীসহ সারা দেশে হাজারো নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে আগামী রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার এই সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে।

সংবাদমাধ্যমের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বহনকারী গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান রিজভী।

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিহত দলীয় নেতাকর্মী এবং পোশাক খাতের আন্দোলনে নিহত শ্রমিকদের জন্য শুক্রবার বাদ জুমা সারা দেশে দোয়া মাহফিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা

প্রার্থিতা প্রত্যাহার নিয়ে ছাত্রদলের নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

নারী শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে চাকরি খোয়ালেন বেরোবি সমন্বয়ক

হাওর ও চরাঞ্চলের শিক্ষক বদলির তদবির আসে ওপর থেকে : গণশিক্ষা উপদেষ্টা

জয় স্যুটকেস ভরে টাকা নিয়ে গেছে : হাবিব-উন-নবী সোহেল

২৫ বছর ধরে বাঁশির মায়ায় আটকে আছে শফিকুলের জীবন

একাত্তরেও আ.লীগ পালিয়েছে, এবারও পালিয়ে গেছে : টুকু

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু, শেষ হচ্ছে কবে

তিন দিনের মধ্যে সাদাপাথর ফেরত না দিলে ব্যবস্থা

উগান্ডার সঙ্গে ট্রাম্পের চুক্তি, জানা গেল নেপথ্য কারণ

১০

ইসহাক দারের সঙ্গে কী আলোচনা হলো বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

১১

মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু রোববার : রাকসু ট্রেজারার

১২

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক অনুষ্ঠিত

১৩

পাথরের জন্য মাইকিং, ডেডলাইন ২৬ আগস্ট

১৪

‘চোখের সামনেই আমার ছেলেটার মৃত্যু হয়েছে’

১৫

তুরাগের চার ওয়ার্ড বিচ্ছিন্নের ষড়যন্ত্র জনগণ মেনে নেবে না : মোস্তফা জামান

১৬

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে আমেরিকান প্রবাসী মিঠুর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

১৭

যশোর-৬ আসন অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে গণমিছিল

১৮

কুকুরকে খাবার খাওয়ানোর কারণে নারীকে ৩৮ সেকেন্ডে ৮ বার থাপ্পড়!

১৯

টেকনাফ সীমান্তের ওপারে আবারও গোলাগুলি, এপারে আতঙ্ক

২০
X