দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপের আহ্বানে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে সংবিধানের ভেতরে থেকেই সে আলোচনা হতে হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও আন্দোলনে থাকা বিএনপিকে চিঠি দিয়েছেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। গত সোমবার জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কাছে এই চিঠি হস্তান্তর করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের কাছে এখনো কোনো চিঠি পৌঁছেনি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো চিঠি পাননি বলে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে ডোনাল্ড লুর কোনো চিঠি এসে পৌঁছায়নি। চিঠি পাওয়ার পর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ডোনাল্ড লুর চিঠি পাওয়ার পর শর্তহীন সংলাপের পক্ষে মত দিয়েছে জাতীয় পার্টি। তবে সংলাপের আগে পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলেছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা সংলাপে রাজি হলেও তা সংবিধানের আলোকে হতে হবে।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বিএনপি সংবিধান মেনে রাজি হলে আলোচনা হতে পারে।’
এদিকে আজ বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। এরপর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তপশিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচন কমিশন দু-এক দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ও সময় ঘোষণা করবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, ‘তপশিল ঘোষণার সঙ্গে সংলাপের আহ্বানের কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও সংলাপ নিয়ে চিঠিতে কী লেখা আছে, তা জানা যায়নি। কারণ চিঠিটি এখনো এসে পৌঁছায়নি। তবে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে।’
এদিকে প্রয়োজন হলে সংলাপ হবে, তবে কার সঙ্গে সংলাপ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘সংলাপে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাই না। গণতন্ত্র সমুন্নত করতে যা যা করা দরকার আমরা তাই করব। সেখানে যদি সংলাপের প্রয়োজন হয়, আমরা সেটা করব। কিন্তু কার সঙ্গে করব, সেটা বিবেচনার বিষয় আছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’
ডোনাল্ড লুর সংলাপের আহ্বানের আগেও মার্কিন প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদল বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য অংশীজনের মধ্যে অর্থবহ সংলাপের সুপারিশ করে। তবে সংবিধানের ভেতরে থেকে আলোচনায় আওয়ামী লীগ রাজি থাকলেও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগসহ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে অনড় থাকায় সংলাপ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
যদিও দুই দলেরই নেতা অনেকেই সংঘাত এড়াতে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন; কিন্তু তারাও নিজেদের দলীয় অবস্থানের পক্ষে অনড়। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের ব্যাপারে বিদেশি কূটনীতিকদের চাপ অব্যাহত থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেউই নমনীয় হতে বা সংলাপের পথে হাঁটছে না বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী সংলাপের পক্ষে বললেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে গত ৩১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যেদিন বাইডেন-ট্রাম্পের সংলাপ হবে, সেদিন বাংলাদেশেও সংলাপ হতে পারে।’
এমনকি তিনি সংলাপ কার সঙ্গে ও কী বিষয়ে—তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এর এক সপ্তাহ পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেন, সংলাপের যে সম্ভাবনা ছিল, তার সময় পেরিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “বিএনপি একটি ‘সন্ত্রাসী দল’। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। এক সময় বলেছিলাম চার দফা শর্ত তুলে নিলে সংলাপ হতে পারে, সেই সময় শেষ।”