নানা জল্পনা-কল্পনার পর আওয়ামী লীগের শরিক ও মিত্রদের সঙ্গে আসন বণ্টনের জটিলতা কেটেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সাতটি আসনে ছাড় দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আজ শুক্রবার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আগামীকাল শনিবারের মধ্যে সমঝোতা চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, এই জোটের শরিক তিনটি দলকে মোট সাতটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, জাসদ তিনটি এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি আসন পাচ্ছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবার বরিশাল-৩ আসনে (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। গত তিনটি নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন। দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা আগের তিনটি নির্বাচনের মতো এবারও রাজশাহী-২ আসনে নৌকা প্রতীক পাচ্ছেন। এ ছাড়া সাতক্ষীরা-১ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এবারও জোটের প্রার্থী হচ্ছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু আগের মতোই কুষ্টিয়া-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন। বগুড়া-৪ আসনে রেজাউল করিম তানসেন এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মোশারফ হোসেনকে জোটের প্রার্থী করা হচ্ছে। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার গত তিনটি নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হলেও এবার এই আসনে ছাড় দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ আসনে ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর বাইরে ১৪ দলীয় জোটের আরেক দল তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনিও আগের তিনটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন। তবে এবার এই আসনে ছাড় দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে বর্তমানে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ১২। এর মধ্যে নিবন্ধিত দল আটটি। বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগ বাদে এই জোটের অন্য শরিকদের আসন সংখ্যা আটটি। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির তিন, জাসদের তিন, জাতীয় পার্টির (জেপি) এক এবং তরীকত ফেডারেশনের একটি আসন রয়েছে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু কালবেলাকে বলেন, ‘আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। বৃহস্পতিবার রাতে না হলে শুক্রবার এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সরকারের লক্ষ্য, শান্তি ও সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রেখে উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন। এ লক্ষ্যে মিত্রদের নিয়ে কৌশল নির্ধারণের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চায় আওয়ামী লীগ। যেসব আসনে শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে, সেখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকবেন না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চায় না। এতে এক তৃতীয়াংশ আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে বদ্ধপরিকর।
আসন বণ্টন নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের একজন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, ‘জাপাসহ ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে। এটি খুবই প্রয়োজন। সহসাই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। এ বিষয়ে শুক্রবার (আজ) বৈঠক রয়েছে। চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দল কত আসন পেল, তা জানিয়ে দেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের যেসব নেতা স্বতন্ত্র হয়েছেন, তারাও ভোটে থাকতে পারবেন জানিয়ে নাছিম বলেন, ‘স্বতন্ত্রদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না। আমরা চাই অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ। সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া হলো শান্তি ও সম্প্রীতি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে গেলে প্রতিযোগিতা থাকবে না।’
এদিকে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। এবারও সেই পথেই যাচ্ছে তারা। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগ।
বর্তমান সংসদে তাদের সদস্য সংখ্যা ২৩। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে জাপার চাওয়া ৫০ আসন। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে শত প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে দলটি। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই জাপাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের অবিশ্বাস আর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর শঙ্কা রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবার কোনো জোট ও আসন বণ্টন হচ্ছে না—জাপার পক্ষ থেকে এরকম শক্ত কথা বলা হলেও তা নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাপা সূত্রগুলো বলছে, সমঝোতার মাধ্যমে ৩৫ আসন পেলেও তারা সন্তুষ্ট থাকবেন। নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় পাঁচটি পদ ও জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার বিষয়ে নিশ্চয়তা চান তারা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে রওশন এরশাদ জি এম কাদেরের সঙ্গে নির্বাচনী জোট না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এরপর থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বেড়েছে। যদিও এবার পুরো বিষয়টি সরাসরি দেখছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু। তবে আগের মতোই সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করছেন কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, ‘নানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা চলছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। শুক্রবার এসব বিষয়ে অনেক কিছু জানানো সম্ভব হবে। তা ছাড়া আলোচনা যেহেতু নির্বাচনকেন্দ্রিক, ৭ জানুয়ারি ভোটের আগ পর্যন্ত দফায় দফায় ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বৈঠক চলমান থাকবে।’