বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দল; তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যখন উন্নয়ন করি, তারা করে অগ্নিসন্ত্রাস। ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মারে। বাসে-গাড়িতে আগুন দেয়। ধিক্কার জানাই বিএনপি-জামায়াতকে। কারণ তারা সন্ত্রাসী দল। তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি মানুষের কল্যাণে। অগ্নিসন্ত্রাসীদের মানুষ আর চায় না। তাদের দোসর, যারা একাত্তরে লুটপাট, ধর্ষণ করেছে–তারা। যাদের বিচার করেছি, সাজা দিয়েছি, সেই যুদ্ধাপরাধীরা তাদের দোসর। খুনি-সন্ত্রাসী মানি লন্ডারিংকারী সেই দল, তার সঙ্গে জুটছে যুদ্ধাপরাধী দল।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির অপশাসনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। কথা দিয়েছিলাম কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না; কথা রেখেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। দারিদ্র্য বিমোচন করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য হাতে বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন মাথাপিছু আয় ছিল ৯১ ডলার। তিন বছরের মধ্যে তা ২৭৭ ডলারে উন্নীত করেন। তিনি অসহায়দের জন্য অকাতরে সব বিলিয়ে দেন; কিন্তু ১৯৭৫ সালে
জাতির পিতাকে হত্যা নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছিল। এরপর অবৈধভাবে জিয়া ক্ষমতায় আসে। তারা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে; ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল উন্নয়নে দেশের সোনালি সময় ছিল। দুর্ভাগ্য, চক্রান্ত করে ২০০১ সালে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। তাই আগামী ৭ তারিখ আপনারা সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে যাবেন, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। এই নৌকা নূহ নবীর নৌকা। এই নৌকা স্বাধীনতা এনেছে, দেশ থেকে দারিদ্র বিমোচন করেছে। এই নৌকায় ভোট দিলে স্মার্ট বাংলাদেশ হবে।’
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সঞ্চালনায় ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বরিশালের কালীবাড়ী রোডে ফুফুর বাড়িতে আসতাম। তখন বরিশাল বিভাগ ছিল অন্ধকারে। আওয়ামী লীগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। ৮ লাখ ৪১ হাজার ৬২৩ জন হতদরিদ্রকে বিনামূল্যে ঘর দিয়েছে। ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত রাস্তা করে দিয়েছি। এই রাস্তায় চললে মনে হবে বাংলাদেশ না কোনো উন্নত দেশে আপনারা যাচ্ছেন।’
বরিশালবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের জন্য সুখবর রয়েছে। ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পায়ারা পোর্ট পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা তৈরি করে দেব। ইতিমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। বরিশালে আর কোনো কষ্ট থাকবে না, দুর্ভোগ থাকবে না। এই রাস্তাও আমরা আধুনিক করে দেব।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বরিশালে খুব বেশি মামলা হয়। তাই ভার্চুয়াল কোর্ট করে দিয়েছি। অর্থাৎ ডিজিটাল কোর্ট। এখন বরিশালে থেকে হাইকোর্টে মামলা করতে পারবে, সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ভোলার গ্যাস এলপিজি করে ঢাকায় নিয়েছি। ভবিষ্যতে এই গ্যাস বরিশালের শিল্পাঞ্চলে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট দেশ গড়ে তুলতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হচ্ছে। আজকে ছয় লাখ ৮০ হাজার ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসে আয় করছে। এ জন্য ১০৯টি আইটি পার্ক করেছি। প্রত্যেক স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বিএনপির দুঃশাসনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে আমাদের ক্ষমতায় রেখেছে। আজ আমরা বদলে যাওয়া বাংলাদেশে। দুর্ভিক্ষ নেই, মঙ্গা নেই। যে মানুষ একবেলা খেতে পারত না। তারা তিনবেলা খেতে পারছে। বই বিনামূল্যে বিতরণ করছি। অসহায়দের ভাতা দিচ্ছি। আজকে ১০ কোটি মানুষ উপকারভোগী। আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে শিল্প কলকারখানা চালিয়ে আসছি। ১০ টাকায় কৃষক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ১ কোটি ২ লাখ কৃষক অ্যাকাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা পাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল। এরপর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সইতে হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য অন্ধকার যুগ।
বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, তাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে এ অঞ্চলের ২৫ হাজার মানুষ কোটালীপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল। তারা মানুষের হাত-পা কেটে ফেলত। চোখ উপড়ে ফেলত। মেয়েদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। তখন কেউ ঘরে থাকতে পারত না।