পূর্ণ মন্ত্রী হওয়ার পর নতুন চালু হওয়া শিক্ষাক্রমে সংশোধন, নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক অথবা স্বল্পমূল্যে দেওয়া, কর্মসংস্থান নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপসহ নানা বিষয় নিয়ে ভাবনার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালবেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
কালবেলা: শিক্ষামন্ত্রী হয়েই নতুন শিক্ষাক্রমে কিছু সংশোধন আনার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এই সংশোধন কি ব্যাপক আকারে হবে?
মহিবুল হাসান: নতুন শিক্ষাক্রম গত বছর চালু হয়েছে। গত বছর যেসব ত্রুটি ধরা পড়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা প্রতিক্রিয়া এখন পেয়েছি। এ বছর শেষে আমরা বুঝতে পারব কতটুকু সংশোধনযোগ্য। তবে পুরোদমে বা ব্যাপক আকারে সংশোধন আসবে না।
কালবেলা: সেক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরে আসবে কি?
মহিবুল হাসান: পরীক্ষা পদ্ধতি একটি বিশেষায়িত প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী হিসেবে একটি বিশেষায়িত বিষয় নিয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, অংশীজন সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অনেক গ্যাপ (ঘাটতি) আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। শতভাগ যথার্থ মূল্যায়ন পৃথিবীর কোথাও নেই। মূল্যায়নের সঙ্গে বাস্তবতার একটি ঘাটতি সবসময় থেকে যায়। এই ঘাটতি কতটুকু কমানো যায়, আমাদের সেই চেষ্টাই থাকবে। মূল্যায়ন যাতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধকতায় পরিণত না হয়, আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। অনেকে বলছেন, সুশৃঙ্খল করার জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন। বাস্তবতা হলো, মূল্যায়নের লক্ষ্য শুধু শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলা আনয়ন নয়।
কালবেলা: নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ অবৈতনিক কিংবা স্বল্পমূল্যে শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন, কেন এটি করতে চান?
মহিবুল হাসান: আমাদের দেশের বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থী নিম্ন মাধ্যমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে উত্তীর্ণ হতে পারে না বা উত্তরণের সুযোগ থেকে বিভিন্ন কারণে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে দেশের ২ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষার তালিকাভুক্ত করতে পেরেছি। প্রাথমিক থেকে এসএসসি পর্যন্ত যাওয়ার আগেই ১ কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থী হারিয়ে যাচ্ছে। এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মাত্র ২০ লাখ। আমাদের চ্যালেঞ্জ অন্তত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিক্ষার্থীকে শিক্ষার আওতায় আনা। এটা হবে আরেকটা বড় অর্জন। এজন্য নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে অবৈতনিক বা স্বল্পমূল্যে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। টাকার জন্য কোনো শিক্ষার্থী যাতে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে ঝরে না পড়ে সেই প্রয়াস থাকবে আমাদের। তাহলে আমাদের অদক্ষ কৃষক, শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষ দক্ষ হবে। জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এটি খুবই দরকার।
কালবেলা: বেকার শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের বিষয় নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
মহিবুল হাসান: ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করে কোথায় যায়? যারা শিক্ষাজীবন শেষ করে, কর্মজীবনে ঢোকার প্রাক্কালে কর্মসংশ্লিষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা আছে কি না, তা নিয়ে কর্মদাতারা সবসময় আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সে জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। কর্মসংশ্লিষ্ট ও মৌলিক কিছু দক্ষতা রয়েছে। যেমন–প্রেজেন্টেশন, গবেষণা, গ্রুপ ওয়ার্ক, গুনতে পারা, সাক্ষরতা, যোগাযোগ দক্ষতা ইত্যাদি। চাকরির ক্ষেত্রে আরও কিছু দক্ষতার প্রয়োজন হয়। ভাষাগত জ্ঞানের বিষয়টিও রয়েছে। অদৃশ্য কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় দক্ষতাগুলোকে আমরা যাতে সব স্তরের শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে পারি, সেটি আমাদের লক্ষ্য। কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কর্মদক্ষ করতে হবে। এটিকে শুধু কারিগরি ব্যাখ্যায় ফেললে চলবে না। সব ধরনের বৃত্তি এবং পেশার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। নতুন অর্থনীতিতে তৈরি হচ্ছে এমন অনেক পেশায় আমরা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও তাই। জ্ঞান অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হলে সেবা এবং উৎপাদন দুই খাতেই শিক্ষার্থীদের ধাবিত করতে হবে।
কালবেলা: এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে আপনার কোনো চিন্তা আছে কি না?
মহিবুল হাসান: আমরা এ নিয়ে কিছুটা আলোচনা করেছি। এখানে আর্থিক বিষয়টি জড়িত। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা কতটুকু তা করতে পারব, সেটা নিরূপণের কাজ হচ্ছে। আশা করছি, এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত পাব। আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক যে চিত্র, সেটি পেলে শিক্ষকদের জন্য আমরা একটি পদক্ষেপ নেব।
কালবেলা: অনেক স্কুল-কলেজে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এমন সমস্যার সমাধানে আপনার ভাবনা কী?
মহিবুল হাসান: আমরা এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি বিশেষ শাখা (স্পেশাল উইং) করব, যেখানে বেসরকারি স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণের প্রক্রিয়া থাকবে।
কালবেলা: বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে আপনার পদক্ষেপ কী হতে পারে?
মহিবুল হাসান: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ক্ষেত্রবিশেষে বাস্তবতার চেয়ে বেশি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের মধ্যে অনেক সময় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে। সেগুলো অনেক সময় আলোচনায় আসে। পাশাপাশি অনিয়মের বিষয়েও আমরা অনেক অভিযোগ পাই। এজন্য ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢালাও মন্তব্য করতে চাই না।
কালবেলা: নতুন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। সবার আগে কোন বিষয়ে নজর দেবেন?
মহিবুল হাসান: আমাদের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যা (প্রধানমন্ত্রী) ইশতেহারের মাধ্যমে ঠিক করে দিয়েছেন। এখানে আমরা একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসেছি। এটিকে বাস্তবায়ন করবেন বিশেষজ্ঞরা, শিক্ষাবিদরা। সুতরাং, রাজনৈতিক দর্শন আমাদের কাছে পরিষ্কার। স্মার্ট জেনারেশন, স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম এবং কাজ; এটি করার জন্য শিক্ষা পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাজ করব।
কালবেলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
মহিবুল হাসান: আপনাকে ও কালবেলাকেও ধন্যবাদ।