সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১ আশ্বিন ১৪৩২
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:৪৬ এএম
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছড়িয়ে পড়ছে করোনা, নেই সচেতনতা

ছড়িয়ে পড়ছে করোনা, নেই সচেতনতা

কভিড সংক্রমণ হুহু করে বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার এখন সাড়ে ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আগামী দিনে রোগী আরও বাড়তে পারে শঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের। সরকারি হিসাবে, চলতি মাসে ৪ কভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার এখন পর্যন্ত জোর দিচ্ছে টিকায়। রাজধানীর ৯টি কেন্দ্রে আবারও প্রতিরোধী টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কিন্তু জনসমাগম পরিহার, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, মাস্ক পরিধান ও বারবার হাত ধোয়ার পুরোনো অভ্যাসের প্রচার নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ বিষয়ে চরম উদাসীনতা রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে কভিড রোগী ও মৃত্যু আরও বাড়তে পারে বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, কভিড-১৯-এর নতুন উপধরন জেএন.১ অন্যান্য ধরনের চেয়ে দ্রুত ছড়ায়। ভাইরাসটি সুস্থ ব্যক্তির শরীরে তেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে না পারলেও জটিল রোগাক্রান্তদের ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। তাই দ্রুত এসব বিষয় বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে কভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেকই ঘটছে নতুন এই উপধরনের মাধ্যমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) উপধরনটিকে কড়া নজরে রেখেছে। উপধরনকে ভেরিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। জেএন.১-এর লক্ষণ আগের ধরনগুলোর মতোই। জ্বর, সর্দিকাশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো, ক্লান্তি ইত্যাদি। এ ছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, ডায়রিয়া ও বিভ্রান্তি বোধ করা।

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল কালবেলাকে বলেন, উপধরন জেএন.১-এর প্রভাবে কভিড পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশেও এরই মধ্যে এই উপধরন শনাক্ত হয়েছে। তার পর থেকে আমাদেরও শনাক্তের হার বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের কভিড পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় যে, জনগণের মধ্যেও সচেতনতাবোধ নেই, আবার জনসচেতনতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ নেই।

ড. জামিল বলেন, জনগণ জনসমাগম এড়িয়ে চলা, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, মাস্ক পরিধান, বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস ভুলতে বসেছে। জনসমাগম যেখানে বেশি হয় এমন স্থানে কোনো নির্দেশনা কিন্তু চোখে পড়ছে না। বাজার-শপিংমলে মাস্ক ছাড়া শত শত মানুষ একত্রিত হচ্ছে। যেহেতু নতুন উপধরন দ্রুত ছড়ায় সেহেতু খারাপ পরিস্থিতির শঙ্কা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। এখনই জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। উপধরনটির গতিবিধি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সেইসঙ্গে শনাক্তদের চিকিৎসায় জোর দিতে হবে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হার ৮.৬২%:

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার দেশে ৪০৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময় কারো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৮২৩ জন। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। সুস্থ হয়েছে ২০ লাখ ১৪ হাজার ২০১ জন। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। মৃত্যু ২৯ হাজার ৪৮১ জনের। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৬৪ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ পুরুষ। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সে বছর শনাক্ত হয় ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন। মৃত্যু ৭ হাজার ৫৫৯ জনের। ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জন। মৃত্যু ২০ হাজার ৫১৩ জনের। সে বছর সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয় ২৮ জুলাই। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। মৃত্যু ১ হাজার ৩৬৮ জনের। গত বছর ২০২৩ সালে শনাক্ত হয় ৯ হাজার ১৮৯ জন। মৃত্যু ৩৭ জনের।

বিশ্বে এক দিনে শনাক্ত ৫৭৮৪, মৃত্যু ২২:

কভিড রোগী ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান রাখা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে গত এক দিনে (সোমবার) নতুন করে ৫ হাজার ৭৮৪ জন মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ সময় মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। গত সোমবার এক দিনে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৬০২ জন শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ায়, মৃত্যু হয় পাঁচজনের। এরপর থাইল্যান্ডে শনাক্ত ৭১৮ জন, মৃত্যু ১১ জনের। ভারতে শনাক্ত ২৯০ জন ও মৃত্যু ছয়জনের।

রাজধানীর ৯ কেন্দ্রে চলছে করোনার টিকা কার্যক্রম:

এদিকে দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে দ্রুত টিকা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় গত ২১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) টিকা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স বিভাগের সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন এ তথ্য জানান। তিনি জানান, কেন্দ্রে টিকা পাঠানো হয়েছে। এখন থেকে টিকা কার্যক্রম চলছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, ৬০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব) জনগোষ্ঠী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রাধান্য দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের ৯টি কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ অর্থাৎ তৃতীয় এবং চতুর্থ ডোজ ফাইজার ভিসিভি ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। সবাইকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক যুবদল নেতার উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার 

আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা

কাশিয়ানীতে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চান মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীরা

নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি : লায়ন ফারুক 

সাইফ ঝড়ে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

আফগানদের বিরুদ্ধে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ

বৃষ্টিসহ আগামী ৫ দিনের পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি ও কার্টিন ইউনিভার্সিটির চুক্তি স্বাক্ষর

স্মার্ট কার্ডের সংকট কাটাতে আসছে ‘ব্ল্যাংক কার্ড’

১০

সেই বিয়ের কথা স্বীকার করলেন পরীমনি

১১

দুর্গোৎসবে টাইমস স্কয়ারে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আবহ

১২

‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি

১৩

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার নীতিমালা সংশোধন

১৪

কর্মবিরতিতে ভেঙে পড়েছে টিকাদান কর্মসূচি

১৫

আ.লীগ নেতাকে ছিনতাই, ২২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

১৬

রাজশাহীতে মা-ছেলেসহ তিন মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

১৭

নীতি-আদর্শের পরিবর্তন করতে পারলেই শান্তি আসবে : ফয়জুল করীম

১৮

সেভিয়ার মাঠে বিধ্বস্ত বার্সা

১৯

আন্তঃশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন কাঞ্চন একাডেমি

২০
X