কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলিতে পাঁচ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এইচ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে পাঁচজনের মৃত্যুর খবরে আশ্রয়শিবিরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) ফারুক আহমেদ জানান, দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতরা হলেন ক্যাম্প-৮ পশ্চিমের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (২৪), মোহাম্মদ হামীম (১৬),
ক্যাম্প-১৩-এর নুরুল আমিন (২৪) ও ক্যাম্প-১০-এর মো. নজিমুল্লাহ। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, ভোর ৫টার দিকে আরসার ২০ থেকে ২২ জন সন্ত্রাসী ক্যাম্প-৮ পশ্চিম এইচ ব্লকে আসেন। তারা বসতিতে ঢুকে কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাকে খুঁজতে থাকেন। খবর পেয়ে আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা আরসা সদস্যদের ঘিরে ফেললে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আবদুস সালাম, জুবায়েরসহ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে কিছুদিন ধরে ওই দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই সূত্র ধরে ভোরে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় ক্যাম্পজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বক্তব্যে আরসা ও আরএসও নামে দুটি বিবদমান গ্রুপের নাম উঠে এসেছে।
৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আহত আরও দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারাও সেখানে মারা যান। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উখিয়া থানা পুলিশের ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, গোলাগুলিতে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ ঘটনার আগের দিন গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১ পশ্চিম) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে মো. এবাদুল্লাহ (২৭) নামে একজন মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) নিহত হন।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১১ জন আরসার সদস্য, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্য ব্যক্তিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।
মন্তব্য করুন