দেশের ইতিহাসে কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাউর নাগরিক নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো। পেশায় নার্স এই নারী এর আগেও বাংলাদেশে এসেছিলেন। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসার পর ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন তিনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা বলছেন, সেবারও সোকো ঢাকায় কোকেনের চালান নিয়ে এসেছিলেন। তবে পরিমাণ কেমন ছিল, তা জানা যায়নি।
ডিএনসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোকো পেশায় নার্স হলেও তিনি ঢাকা আসেন পোশাক ব্যবসায়ী পরিচয়ে। অন অ্যারাইভাল ভিসা পেতে বাইয়িং হাউসের আমন্ত্রণপত্র ব্যবহার করেন। এবারও তাই করেছেন। কিন্তু ভিসা নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার আগেই ডিএনসি কর্মকর্তাদের হাতে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম সলিড কোকেনসহ ধরা পড়েন তিনি।
কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছন, আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল সোকোর। ঢাকায় অবস্থান করার জন্য বিমানবন্দর সংলগ্ন উত্তরার হোটেল এফোর্ড ইন-এ রিজার্ভেশনও করা ছিল তার। সোকোকে গ্রেপ্তারের পর ওই হোটেল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঞ্জানিয়ার নাগরিক মোহামেদি আলি নামে একজনকে ২০০ গ্রাম কোকেনসহ গ্রেপ্তার করেছে ডিএনসি।
ডিএনসি বিমানবন্দর সার্কেলের পরিদর্শক দেওয়ান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সোকো প্রথমে নিজ দেশ মালাউ থেকে ইথিওপিয়া যান। ইথিওপিয়া থেকে যান কাতারের দোহায়। দোহা থেকে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি তার বাংলাদেশ থেকে আবারও মালাউ যাওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশে অবস্থান করা আরেক বিদেশি নাগরিকের কাছে কোকেনের চালানটি পৌঁছানোর কথা ছিল। সেই বিদেশিসহ আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্তত পাঁচজন শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে ডিএনসিসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরা। গত দুদিনে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে জড়িতরা আগেই অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন অভিযান সংশ্লিষ্টরা।
গ্রেপ্তার সোকো ও মোহামেদি দুজনই কোকেন বহনকারী বলে জানিয়েছে ডিএনসি। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সোকো বাংলাদেশে আরেক বিদেশি নাগরিকের কাছে এই চালান পৌঁছে দিয়ে নিজ দেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। একইভাবে মোহামেদিও তার চালানটি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়ায় ছিলেন। এর আগেই গ্রেপ্তার হন তারা।
ডিএনসি পরিদর্শক দেওয়ান মো. জিল্লুর রহমান কালবেলাকে বলেন, দুজনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী আমাদের অভিযান চলমান।
সোকোকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো কোকেনের মূল উৎস। নিরাপত্তার কড়াকড়ির জন্য সেসব দেশ থেকে সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে কোকেনের চালান পৌঁছানো বেশ দুরূহ। সেজন্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিরা। বাংলাদেশ থেকে কোকেনের প্রাথমিক গন্তব্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশ। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের এক বা একাধিক দেশ ঘুরে কোকেনের চালান পৌঁছে যায় ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার দেশগুলোতে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসি বলছে, বাজারে যে পরিমাণ মাদক ঢুকে তার মাত্র ১০ ভাগ ধরা পড়ে। বাকিগুলো বাজারে ছড়িয়ে যায়। বাংলাদেশে যে পরিমাণ কোকেন ধরা পড়ছে তত বড় মার্কেট দেশে নেই বলে জানিয়েছেন ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ। তিনি কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশে কোকেনের বড় মার্কেট নেই। উচ্চবিত্তদের মধ্যে কোকেনের চাহিদা আছে। কিন্তু সেটি কম। ইয়াবা, গাঁজা, আইসের মতো মাদকের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশকে বাজার নয়, আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সদস্যরা কোকেনের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে।