সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল এবং কর্তব্যপরায়ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। গতকাল সোমবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও আহত সাংবাদিকদের মধ্যে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ৪৩৮ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গঠনমূলক সংবাদ সরকার পরিচালনায় সাহায্য করে। এতে আমরা নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারি। গণমাধ্যম অবশ্যই সরকারের সমালোচনা করবে এবং স্বাধীনতা ভোগ করবে। তবে তা যথাযথ দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে করা উচিত। আমি চাই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর বাধাগ্রস্ত হবে না। আপনারা অবশ্যই স্বাধীনতা উপভোগ করবেন। তবে আপনাদের দায়িত্বশীলতা এবং কর্তব্যপরায়ণতা দেখাতে হবে।’
বর্তমান সরকার বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিক সমাজ যে স্বাধীনতা ভোগ করেছে, এর আগে তা কখনোই করেনি। গণমাধ্যমকে যে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তা দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরে আরও সহায়ক হবে।’
বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে সাংবাদিকদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সেই সময় তারা ক্ষমতায় আসার পর সাংবাদিকদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে দেওয়া হয়নি। কারণ, তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছিল।
সরকার বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকরা নিজেদের জন্য বাড়ি করতে চাইলে সরকার জমির ব্যবস্থা করতে পারে অথবা কিস্তিতে সরকারি ফ্ল্যাট দিতে পারে।’
তিনি সংবাদমাধ্যম মালিকদের বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে (বিজেডব্লিউটি) অর্থ সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব হুমায়ন কবির খন্দকার বক্তব্য দেন। বিএফইউজে এবং ডিইউজে নেতারা ও বিভিন্ন সংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল হবে ৪ হাজার শয্যার আধুনিক হাসপাতাল : ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই হাসপাতালে ক্রমবর্ধমান রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া খুবই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। তাই আমরা ঢাকা মেডিকেলকে সুন্দর, আধুনিক এবং বড় হাসপাতালে পরিণত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। কারণ, এই হাসপাতাল থেকে যাতে একই সময় ৪ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারে।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞান সামনের দিনগুলোতে বিকাশ লাভ করবে। তাই বাংলাদেশকেও একই গতি বজায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিস্তারিত গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুষ্টিমেয় ব্যক্তি চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষণায় নিয়োজিত আছেন। কাজেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার প্রতি আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ বর্তমান যুগে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর পর্যাপ্ত গবেষণা খুবই প্রয়োজনীয়। তার সরকার স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালাতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।’
রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই হাসপাতাল থেকে রোগীরা সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে।
চিকিৎসাসেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে একটি সমীক্ষা চালিয়ে কিছু জেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।’
অনেক হাসপাতালের সেবার মানে হতাশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশ কয়েকটি জেলা হাসপাতালে অ্যানেস্থেসিওলজিস্টের অভাবের কারণে কোনো অস্ত্রোপচার করা হয় না। এ ছাড়া, অনেক আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না।’
তিনি চিকিৎসকদের গ্রামীণ এলাকায় না থাকার মানসিকতার সমালোচনা করে বলেন, ‘সবাই (চিকিৎসকরা) ঢাকায় থাকতে চান, তাদের কেউ ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। এ কারণে গ্রামের লোকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যখন আপনাকে গ্রামে পোস্টিং দেওয়া হবে, তখন সেখানে থেকেই আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
ডিএমসি অ্যালামনাই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. জুলফিকার রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন