মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩০ এএম
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৪, ০৮:৪২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অবৈধ হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে থেমে গেছে অভিযান

চিকিৎসাসেবা মনিটরিং গতিহীন
অবৈধ হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণে থেমে গেছে অভিযান

দেশে অবৈধ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে বারবার হাঁকডাক দিয়ে অভিযান শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো ঘোষণা ছাড়াই থেমে যায়। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। চলতি বছরের শুরুতে সাঁতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর এই অভিযান গতি পায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব গ্রহণের পর এই অভিযান জোরদারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে কদিন না যেতেই গতি হারিয়েছে সেই কার্যক্রম। কাগজে-কলমে এখনো অভিযান চলমান থাকলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কোথাও কোনো দুর্ঘটনা কিংবা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠলেই শুরু হয় অভিযান। কিছুদিন পর আবার এমনিতেই সবকিছু থেমে যায়।

জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ব্লাড ব্যাংক মনিটরিংয়ে যুগোপযোগী আইনের প্রয়োজন। ১৯৮২ সালের পুরোনো অধ্যাদেশ ৪০ বছর পর অকার্যকর। নতুন আইন প্রণয়ন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে মনিটরিং আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বেসরকারি খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর বছর হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নের ঝামেলায় অনেক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা কাগজপত্র আপডেট রাখতে পারেন না। বছর বছর নবায়ন অনেকটা ভোগান্তির কাজ। নবায়নের সময়সীমা অন্তত কয়েক বছর বাড়ানো দরকার। তাহলে দেশে নিবন্ধনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অস্তিত্ব থাকবে না। সবাই নিয়মের মধ্যে চলে আসবে।

জাতীয় স্বাস্থ্য আন্দোলনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহাবুব কালবেলাকে বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল,

ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সবসময় মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখতে হবে। ১৯৮২ সালের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক পরিচালনার যে অধ্যাদেশ, সেটা অনেক পুরোনো। চল্লিশ বছর পর দেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের ব্যপ্তি বেড়েছে। ফলে অধ্যাদেশ অকার্যকর হয়ে গেছে। এই অধ্যাদেশ যুগোপযোগী করতে হবে। সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মনিটরিং বাড়াতে হবে। নয় তো ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ কমানো যাবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ১৫ হাজার ৪৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের নিবন্ধন রয়েছে। তার মধ্যে ৫ হাজার ২৯টি হাসপাতাল। ১০ হাজার ২২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ১৯৭টি ব্লাড ব্যাংক। বাস্তবে এই সংখ্যা অন্তত ২৩ হাজারের বেশি। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, দেশে নিবন্ধনহীন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা ১ হাজার ২০০-এর বেশি নয়। এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মের আওতায় না এলে অবশ্যই বন্ধ করা হবে।

অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান কালবেলাকে বলেন, ‘সারা বছর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে কাজটি পরিচালনা করা হয় বলে অনেক সময় ধীরগতি মনে হতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই মনিটরিং প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে না। দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিককে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা হবে। মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত কিছুদিনে অধিদপ্তরের অভিযানে ঢাকার মোহাম্মদপুরের লাইফ কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল; পিপলস হেলথ কেয়ার টেকনোলজিস্ট, ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার; কলেজগেট এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের টিজি হাসপাতাল; রেডিয়াম ব্লাড ব্যাংক এবং এএইচএস ডায়ালাইসিস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার; ঢাকা হেলথ কেয়ার বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মিরপুরের মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বরের ইশতিয়াক মেডিকেল সেন্টার, রাজধানী ব্লাড ব্যাংক, হেলথ পয়েন্ট, আল হাকিমি চক্ষু হাসপাতাল, কালশীর এ এইচ এস ডায়ালাইসিস অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এশিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাভারের ফুলবাড়িয়া এলাকার আদনান হাসপাতাল ও ডায়ানস্টিক সেন্টার, হেমায়েতপুরের রহমান স্পেশালাইজড হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা ডায়াবেটিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের কেয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলীর ঢাকা ট্রমা সেন্টার, স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং উত্তরায় হাইকেয়ার কার্ডিয়াক ও নিউরো হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলেও সতর্ক করা হয়েছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানকে।

বাংলাদেশের প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতি (বিপিসিডিওএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, ‘দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বেসরকারি খাতের অবদানও কম নয়। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নবায়ন করতে হয় বছর বছর। এজন্য অনেক উদ্যোক্তাদের বিপাকে পড়তে হয়। তাই কাগজপত্র আপডেট করতে উদ্যোক্তাদের ঝামেলায় পড়তে হয়। আমরা বারবার এ বিষয়টি নজরে আনার জন্য আলোচনা করেছি। অন্তত দুই থেকে তিন বছর পরপর নবায়নের কথা বলা হলে নিবন্ধন নেই—এমন অভিযোগ করার সুযোগ থাকবে না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কে এই শরিফুল?

চট্টগ্রাম বন্দরে ‘স্টোররেন্ট’ এক মাসের জন্য স্থগিত

ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া ইউটিউব ভিডিও দেখবেন যেভাবে

বাংলাদেশ-চায়না আপন মিডিয়া ক্লাব ও টিএমজিবির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই

অনিল কাপুরের সঙ্গে শয্যা দৃশ্য, ক্যামেরার সামনেই চিৎকার ঐশ্বরিয়ার

শ্বশুরবাড়িতে আগুন দিয়ে পালালেন জামাই

সিলেটে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়ে স্থগিত করল এনসিপি

রুমিন ফারহানা ইস্যুতে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন

হঠাৎ ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছাড়ছে মার্কিন বাহিনী

‘এই অভিযোগ আমি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করছি’

১০

জর্জিনার আংটিতে লুকিয়ে রোনালদোর প্রেমবার্তা!

১১

বিশ্ব বাজারে স্বর্ণের দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ

১২

এনবিআইইউ প্রক্টর বরখাস্ত

১৩

ভোক্তা অধিকার রক্ষায় অংশীজনের সমন্বিত ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

১৪

আবারও ১১ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

১৫

আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দিচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

১৬

ফজলুর রহমানের পক্ষে মি‌ছিল, ‌স্লোগা‌নে উত্তাল অষ্টগ্রাম

১৭

ডাকসুর ভিপি-জিএস পদে কার ব্যালট নম্বর কত

১৮

পোষ্য টাইসনকে মৃত অবস্থায় পেলেন নিলয় আলমগীর

১৯

স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

২০
X