বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২
শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৩ এএম
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফের রাজপথে নামছে বিএনপি

শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ
ফের রাজপথে নামছে বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় সাড়ে চার মাস পর ফের রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আগামী শুক্রবার ঢাকায় সমাবেশ করবে দলটি। এরপর মে দিবসে বড় আকারের সমাবেশ আয়োজন করা হবে। ঢাকা মহানগর বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দুটি কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এরপর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মে মাসজুড়ে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশ সফল করতে আজ রোববার সকালে শ্রমিক দলের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়েছে।

শ্রমিক দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসনে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরম কষ্টে আছে। শ্রমজীবী মানুষ এখন চাইলেই পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে দুবেলা খেতে পারে না। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন তাদের কাছে ভোটের চেয়ে ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবসে ঢাকায় সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, ভালো লোকসমাগম হবে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু কালবেলাকে বলেন, ‘নবীউল্লাহ নবীসহ মহানগরের অনেক নেতা এখনো কারাগারে বন্দি। তাদের মুক্তির দাবিতে আগামী শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নগর দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সাংগঠনিক জোনের উদ্যোগে সমাবেশ হবে।’

সরকার পতনের লক্ষ্যে বিএনপি ও মিত্রদের একদফা আন্দোলনের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। একদিকে নির্বাচন বয়কট ও দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, অন্যদিকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো করতে না পারা—সব মিলিয়ে বিএনপি সংকটকাল পার করছে।

তবে বিএনপি নেতারা মনে করেন, চলমান সংকট কেটে যাবে। কারণ, দেশের মানুষ ভোট বর্জন করেছে। একতরফাভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও আওয়ামী লীগ সরকার স্বস্তিতে নেই। তাই প্রাথমিকভাবে তাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। এখন পরিস্থিতি বুঝে সুবিধামতো সময়ে সরকারকে চাপে ফেলতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে সরকার ব্যাপকভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। নিরীহ ও নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার গ্যাসের শেল ও গুলি চালিয়েছে। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এসব করেও সরকার ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিতে পারেনি। আমাদের নেতাকর্মীরাও থেমে যাননি। তারা আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। মামলা-মোকদ্দমা আজও শেষ হয়নি। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতির মধ্যেই দল গোছানো ও সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ চলমান রয়েছে। রাজনীতি কোনো কাপড় নয় যে, সাজিয়ে-গুছিয়ে আলমারিতে রাখা যায়। বিএনপি আইনের শাসনে বিশ্বাসী। নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।’

জানা গেছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বাইরে আর কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। সেই লক্ষ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে একাধিক ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্প্রতি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি মতবিনিময় করেছেন তিনি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনসহ সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। অনেকেই দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করা দরকার বলে অভিমত দেন। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি সভা কিংবা বর্ধিত সভারও প্রস্তাব দেন তারা। এক্ষেত্রে যেসব এলাকায় উপজেলা নির্বাচন থাকবে, সেগুলো বাদ দিয়ে অন্য এলাকায় প্রতিনিধি সভা করার পক্ষে মত এসেছে। বৈঠকে জনস্বার্থ ইস্যু এবং নতুন নির্বাচন দাবিতে কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদকদের এসব প্রস্তাবনা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে শিগগির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অবশ্যই সংকটে আছি আমরা। কিন্তু সেটা নতুন না আমাদের কাছে। বর্তমান সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমি বিশ্বাস করি, সরকারের পতন হবেই হবে। পৃথিবীতে ভালোর জয় হয়, মন্দের পরাজয় হয়। সুতরাং সরকারের পতন অনিবার্য।’

বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতা মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে না পারা এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ফের ক্ষমতায় বসার পর প্রায় সাড়ে তিন মাস পার করায় দেশে এখন ভিন্ন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। সরকারকে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করার জন্য আন্দোলন কতটা জোরদার করা যাবে কিংবা সেটি আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও অনেক নেতাকর্মীর মাঝে সংশয় আছে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলে সেটি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনোভাব কতটা ধরে রাখা যাবে, সেটিও বিবেচ্য বিষয়।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টনের মতে, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা কিন্তু হতাশ নন। কারণ, বিএনপির সঙ্গে আছে দেশের জনগণ। ৭ জানুয়ারি তো দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ ভোট বর্জন করেছে। তা ছাড়া বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবস্থায় দেশপ্রেমিক জনগণকে নিয়েই বিএনপি ফের রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবে।’

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা কোনো সমস্যা নয়। তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা কোনো অবস্থাতেই হতাশ নন; বরং ঐক্যবদ্ধ আছেন।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি জেলা সদরে এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোট। ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবিতে ওই কর্মসূচি ছিল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

ডাকসু নির্বাচন, আচরণবিধি সম্পর্কিত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে টাস্কফোর্স গঠন

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১০

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

১১

পাঁচ মাসে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেল বিডা

১২

নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর

১৩

৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

১৪

বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা

১৫

বিমানের নতুন চেয়ারম্যান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন

১৬

এখন হয় মনোনয়ন বাণিজ্য, পিআরে হবে এমপি বাণিজ্য : খোকন

১৭

ডাকসু নির্বাচন / আচরণবিধি সম্পর্কিত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে টাস্কফোর্স গঠন

১৮

দ্বিতীয় ইরান হয়ে উঠছে ইয়েমেন, হিসাব মেলাতে পারছে না ইসরায়েল

১৯

কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ জনের

২০
X