প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে ঘরে ঢুকে বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার জবাব চেয়েছেন। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও দাবি করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু করেন তিনি। বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন, দলের হীরকজয়ন্তী উদযাপনসহ ১৬টি বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ঘরে ঢুকে বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা এর নিন্দা জানাই আমরা। মানবাধিকার সংস্থা এবং যারা আমাদের স্যাংশন দেয়, তারা এর কী জবাব দেবে? আমি এর জবাব চাই। যুক্তরাষ্ট্র নিজের চেহারা আয়নায় না দেখে। কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে সবক দেয় বাংলাদেশকে। সে দেশের কোনো পুলিশের গায়ে কোনো রাজনৈতিক দল হাত তুললে, কী করত সেখানকার পুলিশ? কয়েকদিন ফিলিস্তিনে যুদ্ধের বিরোধিতা করায় সাধারণ মানুষের আন্দোলনে কি জুলুমটাই না করল যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ। এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর জবাব কী?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিবাম ও অতিডান সবই এখন এক হয়ে গেছে। এটা কীভাবে হলো জানি না। এই দুই মেরু এক হয়ে একটাই দাবি জানাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দেশের কিছু রাজনৈতিক দেউলিয়া, বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করা কিছু মানুষ অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাচ্ছে এবং অপপ্রচার চালাচ্ছে। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব যখন প্রশংসা করছে তখন কিছু মানুষ সমালোচনা করছে। যে যা-ই বলুক, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে। সবসময় ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়েছে।
আমরা দেশ ও মানুষের ওপর আস্থা রেখেই দেশ চালায়। সব দিক থেকে বাংলাদেশে এগিয়ে গেছে। মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি করেছি, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কভিড মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশন, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, এসব সমস্যার কারণে শুধু আমরাই না, উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তার পরও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলাম বাংলাদেশের মানুষকে এক ধাপ উপরে তুলব, ২০২১ সালের মধ্য আমরা তা করেছি।
একসময় মানুষ এক বেলা ভাত খেতে পারত না, মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। রোগে চিকিৎসা পেত না, শিক্ষা পেত না। আমরা পরিকল্পনা মোতাবেক এগিয়েছি। অনেক জেলা গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না।
জাতির পিতা আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা অর্জন করেছি। ২০২৬ সাল থেকে নতুন যাত্রা শুরু হবে। সেজন্য প্রস্তুতিও নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে অগ্রযাত্রা তা সহজভাবে করা সম্ভব। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় বসে লুটপাট করতে পারছে না বলেই সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় নেমেছে তারা। বিএনপি এমন একটি দল, যাদের কোনো মাথামুণ্ডু নেই। তারা শুধু পারে অনলাইনে নির্দেশনা দিতে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি যে অপকর্ম করেছে, তা মানুষের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসা দলের কাছে আজ গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়। যারা ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা কেন বুঝছে না দেশবাসী এই নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে খুশি। জনগণের আস্থা আওয়ামী লীগ পেয়েছে, কারণ মানুষ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ তাদের উপকার করে।