আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ০২:৩৯ এএম
আপডেট : ০৭ মে ২০২৪, ০৭:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাঁপা বেসরকারি ভার্সিটি আরেক বিষফোড়া

উচ্চশিক্ষার মান
ফাঁপা বেসরকারি ভার্সিটি আরেক বিষফোড়া

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারেননি তাবাসসুম ইসলাম। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও কৃতকার্য হতে পারেননি। পরে পারিবারিক সিদ্ধান্তে ভর্তি হয়েছেন বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের একটি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন নুসরাত রহমান।

দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে নর্থ সাউথ কিংবা ব্র্যাককে কেন বেছে নিলেন—দুজনের কাছে আলাদাভাবে এ প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল তাদের প্রথম লক্ষ্য। তবে সেখানে সুযোগ না পাওয়ায় যেতে হয়েছে বেসরকারিতে। আর শিক্ষার মান, শিক্ষকদের প্রোফাইল, উন্নত ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো, সার্বিক পরিবেশ এবং সুনাম বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শুধু তাবাসসুম বা নুসরাত নন, উচ্চ মাধ্যমিকের পাট চুকানোর পর দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই প্রথম পছন্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেখানে ভর্তির সুযোগ না মিললে বা পছন্দের বিভাগ না পেলে সামর্থ্যবান পরিবারের সন্তানরা ছোটেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। আর পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের ভর্তির সুযোগ নেই, তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হন। আবার নানা সীমাবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় সন্তানদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে চায় না অনেক পরিবার। তাদের একাংশ উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। বাকিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ছোটেন।

দেশে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকাটি একেবারেই দীর্ঘ নয়। হাতেগোনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিই বেশি আগ্রহ শিক্ষার্থীদের। এ তালিকায় ব্র্যাক ও নর্থ সাউথ ছাড়াও আছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিক, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। আবার এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও সব বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ সমান নয়।

বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর আগ্রহই নেই। অবশ্য কোথাও সুযোগ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই অনেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তবে সনদবাণিজ্য, মানসম্মত পাঠদানের ঘাটতি, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এখন বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় বিশৃঙ্খলা দূর করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও কঠোর কোনো পদক্ষেপে নেওয়া জরুরি। তা না হলে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক সার্টিফিকেটধারী বের হলেও উচ্চ শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না।

ইউজিসির একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে এবং আশু তারা কোনো পদক্ষেপও নিতে পারবে না; তাদের বেসরকারি ব্যাংকের মতো একীভূত করা যেতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩৫ (৭) ধারা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় একীভূতকরণ সম্ভব।’

আইনের ওই ধারায় বলা হয়েছে ‘কোনো কারণে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে বা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে আচার্য কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারবেন এবং এই বিষয়ে আচার্যের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান খান কালবেলাকে বলেন, ‘দেশে এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার নেই। হাতেগোনা ৮-১০টি ছাড়া অন্যগুলোতে কোনো লেখাপড়া হয় না। কেবল ছাত্র ভর্তি করে ক্লাস করায় আর সার্টিফিকেট বিক্রি করে। সে কারণে প্রথম সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রেখে বাকিগুলোকে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে, কাঁচামাল সহজলভ্য ও চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রেড খুলতে হবে। শিক্ষার্থীরা সে দক্ষতা নিয়ে দেশে বা বিদেশে চাকরি করবে। এতে দেশের পোশাক শিল্পের মধ্যম পর্যায়ের বিভিন্ন পদে দেশীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে, যেখানে এখন ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো দেশের লোকজন কর্মরত।’

আবার অনেক শিক্ষাবিদের মতে, শিক্ষক, অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এক না হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একীভূত করা সম্ভব নয়। এতে সমস্যা আরও বাড়বে। ইউজিসির ক্ষমতায়ন, মনিটরিং বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারের নিবিড় সম্পৃক্ততা ও অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গতিশীল করার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান কালবেলাকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সংকট নিরসনে উদ্যোগী হতে হবে। ইউজিসি যেহেতু শুধু সুপারিশ করতে পারে, তাই ইউজিসি সুপারিশ করবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি ব্যাংক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সেটি নয়। তাই বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য হবে না। তবে একদমই চালাতে না পারলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যেতে পারে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান ভালো, তাদের অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে অন্যগুলোর মিলবে না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয় একীভূত করার সুযোগ নেই। সমস্যা সমাধানে দ্রুত ভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পড়াশোনার মান নিয়ে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্য তৈরি হয়েছে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষাদান ব্যবস্থা, অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে। প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগেরই পর্যাপ্ত অবকাঠামো রয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যদিকে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই এসব সুবিধা অপ্রতুল। সে কারণে শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে বড় রকমের পার্থক্য দেখা দেয়। আর এসব বিষয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বা অনাগ্রহের মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে।

আবার মান ও সুনামের দিক থেকে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত আগেভাগেই শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করে। সে কারণে মেধাবীরা ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যায়। এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি থাকে না বললেই চলে।

অন্যদিকে ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর অন্যরা এই প্রক্রিয়া শুরু করে। এক্ষেত্রে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ফলাফলও বিবেচনা করে না। তার পরও অনেক প্রতিষ্ঠান আসনসংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থী পায় না। এর মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে সার্টিফিকেট সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। গবেষণা তো দূরের কথা; অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রমও পরিচালিত হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বারবার তাগাদা ও হুঁশিয়ারির পরও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাস তৈরি না করে ভাড়া ভবনে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। কারণ তাদের ভয় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ছেড়ে বাইরের স্থায়ী ক্যাম্পাসে গেলে অল্প যে কয়জন শিক্ষার্থী পাওয়া যায়, তাদেরও হারাতে হতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমও গুটিয়ে ফেলতে হতে পারে।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অল্প কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নানা সমস্যায় জর্জরিত। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া; স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি কেনায় অনিয়ম; স্থায়ী সনদ না থাকা; রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা; ঠিকমতো সমাবর্তন না হওয়া; উপাচার্যের সঙ্গে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দ্বন্দ্ব; বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বিরোধ; বোর্ড সদস্যদের আর্থিক অনিয়ম; শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত বেশি; মানসম্মত শিক্ষকের অভাব; নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা না দিয়ে আয়-ব্যয়ে নয়ছয় এবং গবেষণায় অবহেলা ছাড়াও সনদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেহাল দশা

বর্তমানে দেশে সরকার অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০৪টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি। সাময়িক সনদের মেয়াদ শেষ হলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন স্থায়ী সনদ অর্জন করতে পারেনি। চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত করছে ইউজিসি।

সম্প্রতি এক সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অবৈধ ক্যাম্পাস ও অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইবাইস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লায় শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করে। তারা জানায়, সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রমের আর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এ ছাড়া স্থায়ী সনদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া, মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, মামলা, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগে বৈধ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক কোনো অডিট ফার্ম দ্বারা অডিট না করার কারণে রাজধানীর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এ মুহূর্তে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আর্থিকসহ সব ধরনের অভিযোগের তদন্ত করছে কমিশন। এগুলো হলো লিডিং ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া।

জানা গেছে, রাজধানীতে অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা), প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি ও দি পিপলস ইউনিভার্সিটি। তাপপ্রবাহ কমলে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘুরে রিপোর্ট করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউজিসির এক কর্মকর্তা।

অন্যদিকে স্থায়ী সনদ আছে মাত্র ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এগুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি), আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি এবং নাটোরের বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। স্থায়ী সনদ বাধ্যতামূলক হলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। অন্যদিকে ইউজিসিও এ বিষয়ে কঠোর হচ্ছে না।

এদিকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দ্বন্দ্ব রয়েছে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, মানিকগঞ্জের এনপিআই ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে।

উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিক রীতি হলো সমাবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া। অথচ দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই সমাবর্তনের ব্যাপারে উদাসীন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় একবারও সমাবর্তন করেনি। এগুলো হলো হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, জেএডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পর ৩১ বছরে সমাবর্তন করেছে মাত্র দুটি। এ ছাড়া কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক যুগ পার হলেও মাত্র একবার সমাবর্তন করতে পেরেছে।

উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কর্তা। অথচ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো আচার্য নিয়োজিত উপাচার্য নেই। এগুলো হলো সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও এনপিআই ইউনিভার্সিটি।

এর মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ যথাযথ না থাকায় সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য প্যানেল বিষয়ে ইউজিসি মতামত দেয়নি। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ প্যানেল প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাবিহীন ব্যক্তিদের প্যানেলে রাখায় ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়াকে ফের উপাচার্য প্যানেল পাঠাতে বলেছে ইউজিসি। প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে কোষাধ্যক্ষ উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। একই অবস্থা জার্মান ইউনিভার্সিটিতেও। তবে উপাচার্য প্যানেল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ প্যানেল প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দি পিপলস ইউনিভার্সিটিতে সম্প্রতি উপাচার্য নিয়োগ হলেও কোষাধ্যক্ষ নেই। এনপিআই ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে কেউই নিয়োজিত নেই। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পরস্পরবিরোধী দুটি প্যানেল প্রস্তাব পাঠানোয় তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১ জুন : ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা

১ জুন : নামাজের সময়সূচি

‌মোটরসাই‌কেল কি‌নে বা‌ড়ি ফেরা হ‌লো না হাসাবু‌লের

সিরাজগঞ্জে ট্রাকচাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত

ইউপি সদস্যের ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

মোহাম্মদপুরে আবাসিক ভবনে আগুন, দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে

এমপি আনার হত্যা / তদন্তে এবার নেপাল যাচ্ছেন ডিবিপ্রধান হারুন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেন আবারও চলবে

এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো নিয়ে যা জানা গেল 

১০

শেষ হলো ১৬তম শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব

১১

ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ

১২

দাফনের ১৫ বছর পরও অক্ষত মরদেহ

১৩

বিদ্যুৎস্পর্শে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

১৪

ভোট নিয়ে অভিযোগ, প্রতিকার চাইলেন আ.লীগ নেতা

১৫

মিয়ানমারের ৮৬ শতাংশ শহর বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে

১৬

এক ইলিশ বিক্রি হলো ৭ হাজারে

১৭

এবার টানা ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

১৮

দাম বৃদ্ধির খবরে তেল সরবরাহ বন্ধ

১৯

অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে : পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী

২০
X