সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণদাতা সংস্থাটির পরামর্শ অনুযায়ী আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরে বিভিন্ন খাত থেকে বাড়তি ২৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। লক্ষ্য অর্জন নতুন বাজেটে ভ্যাট ও শুল্কহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে অব্যাহতি কমানো ও ফাঁকি বন্ধ করে আয়কর খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হবে বলে আইএমএফকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি এনবিআরের তিনটি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেখানে আগামী অর্থবছরের অতিরিক্ত কর আদায়ের জন্য প্রতিটি বিভাগকে আলাদা লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আয়কর বিভাগকে আয় বাড়াতে হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। ভ্যাট থেকে অতিরিক্ত আদায় করতে হবে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর শুল্ক খাতে যোগ করতে হবে আরও ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়ানোর পথ খুঁজছে এনবিআর। এ ক্ষেত্রে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগ আলাদা পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে বড় অঙ্কের বাড়তি ভ্যাট আদায়ে ইএফডিকে প্রাধান্য দিয়েছে ভ্যাট বিভাগ। আগামী অর্থবছরে ইএফডির মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভ্যাট হারে পরিবর্তনের মাধ্যমে আরও ১ হাজার কোটি টাকা আদায়ের কর্মকৌশল ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করা থেকে শুরু করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও আইএমএফকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বাড়তি এই ভ্যাট কীভাবে আদায় হবে, জানতে চেয়েছেন। আমরা এই বাড়তি ভ্যাট আদায়ে ইএফডিকে প্রাধান্য দিয়েছি। আর ইএফডির মাধ্যমে আগামী অর্থবছরে আসবে ১ হাজার কোটি টাকা। আর ভ্যাটের হার পরিবর্তনে আসবে ১ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ এবং ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে এই ভ্যাট আদায় করা হবে আইএমএফকে জানিয়েছি আমরা।’
এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয়ের জন্য কমপ্ল্যায়েন্স নিশ্চিত করার ওপর বেশি জোর দেবে আয়কর বিভাগ। এ ছাড়া বাড়তি আয়ের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে অব্যাহতি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর। আইএমএফের শর্ত পূরণে আগামী অর্থবছরে এনবিআরের শুল্ক বিভাগকে বাড়তি আদায় করতে হবে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আসবে বকেয়া আদায় থেকে। এই টাকা সরকারি তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা আছে। আগামী অর্থবছরে এই টাকা আদায় করা হবে বলে আইএমএফকে জানিয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। আর আড়াই হাজার কোটি টাকা আসবে শুল্ক অব্যাহতি তুলে দেওয়া বা খরচ কমানোর মাধ্যমে। এ ছাড়া শুল্ক হার পরিবর্তনের মাধ্যমে বাড়তি আদায় করা হবে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অন্যান্য মাধ্যমে আসবে আরও ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘আয়কর খাতে বাড়তি রাজস্ব আহরণের জন্য কমপ্ল্যায়েন্স নিশ্চিত করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ কমপ্ল্যায়েন্স নিশ্চিত হলে মোটা অঙ্কের আয়কর আসবে। এ ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয়কর অব্যাহতি তুলে দিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে বলে আইএমএফকে জানানো হয়েছে।’