আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থ আদায়ে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে মনে করছে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতাগুলোকে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে দলটি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে দুটি চুক্তি, পাঁচটি নতুন সমঝোতা ও তিনটি চুক্তি নবায়ন হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করছে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে ২৮ জুন সংবাদ সম্মেলন করা হবে। এরপর প্রয়োজনে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এই বক্তব্য বা আন্দোলন কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এটা আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে। সরকার ভারতের কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করে আনতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আপনি অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা না পেয়ে চুক্তি সই করতে চাচ্ছেন। তিস্তার পানি আমাদের সবার আগে দরকার। কিন্তু সরকার তিস্তা প্রকল্পের কাজ করতে চায়। কারণ প্রকল্প হলে অনেক টাকা।
সেই টাকাই তাদের (সরকার) আসল উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর তৈরি করাতে বাংলাদেশের লাভ কী? সম্পূর্ণ লাভ ভারতের। এটা ভারতবিরোধীতা নয়। আমাদের প্রশ্ন আমাদের স্বার্থে। কানেক্টিভিটি আমার স্বার্থে হতে হবে, আমার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। সীমান্তে মানুষ হত্যা নিয়ে কিছুই বলছেন না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। উনি নিজেই বলেছেন, আমি সবকিছু উজাড় করে দিয়ে দিয়েছি। উজাড় করে দিয়ে তো রেজাল্ট পেয়েছেন। এবারও উজাড় করে দিয়ে এসেছেন আবার রেজাল্ট পাবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়ে তিস্তা চুক্তি করা যাবে না, তারা দেবে না। এজন্য আপনাকে তো অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করা দরকার। ফারাক্কার ইস্যুটি দেশে-বিদেশে এমনকি জাতিসংঘে তোলা হয়েছিল। যতটুকু পাওয়া গেছে, সেটা আন্দোলন করেই পাওয়া গেছে। এই সরকার এসব বিষয়ে (অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা) জাতিসংঘে উত্থাপন করেনি। এসব নদীর হিস্যার ব্যাপারে চুক্তিতে কোনো কথাই নেই। এটা থেকে বোঝা যায় আসলে এই সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, বাংলাদেশবিরোধী একটা সরকার।
সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, আমরা কোনো আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। বিএনপি গত ১৫-১৬ বছরে যে আন্দোলন করেছে, এই আন্দোলনগুলোকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। এই ভয়াবহ সরকারের যে নির্যাতনমূলক দমননীতি, এটার কারণেই হয়তো সাফল্য আসেনি এখন পর্যন্ত। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা প্রাথমিকভাবে গণতন্ত্র মুক্ত করার মতোই।
বিএনপি মহাসচিব জানান, ২৪ জুন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, কানেক্টিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ইত্যাদি চুক্তি ও সমঝোতায় দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা ম্যান্ডেটহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বহিঃপ্রকাশ। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলেছে।
জাতির সব অর্জন হারিয়ে যেতে বসেছে
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতির সব অর্জন ও এগিয়ে যাওয়া এখন অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছে। জুলুম-নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্রের সর্বশেষ চিহ্নকে মুছে ফেলা হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ডামি আওয়ামী সরকার জনগণের ওপর ফ্যাসিবাদী অত্যাচারের প্রকোপ দিনকে দিন বৃদ্ধি করছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে গুম, কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা, শারীরিক নির্যাতনে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। ‘২৬ জুন নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।