যুদ্ধ-সংঘাতে বিপর্যস্ত এক বছর ছিল ২০২৩ সাল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। বছরের শেষদিকে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন আঞ্চলিক যুদ্ধের। পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন আরও বেশি প্রকাশ্য। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে কোটি কোটি মানুষকে। যার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির গতিও হয়ে পড়েছে অনেক ধীর। সেইসঙ্গে মানবজাতিকে চোখ রাঙাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। এ অবস্থায় নতুন বছরে বিশ্বনেতারা এসব চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে গভীর সংকটে পড়বে মানবজাতি। গ্রন্থনা : ওয়াহেদুজ্জামান সরকার
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো শেষ না হওয়ায় বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মারাত্মক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। বিশ্ববাসী আশা করেছিল ২০২৩ সালে এ যুদ্ধ হয়তো শেষ হবে। কিন্তু দুপক্ষের অনড় অবস্থান ও প্রভাবশালী দেশগুলোর নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এ যুদ্ধের কোনো পরিণতি দেখা যায়নি। যদিও গত বছরের মাঝামাঝিতে এসে যুদ্ধ অনেকটা গতি হারিয়ে ফেলে। রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের মৃত্যু এবং ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আর্থিক ও সামরিক সহায়তার প্রবাহ কমে যাওয়ায় ময়দানে দুপক্ষের কঠিন লড়াইয়ের চিত্র তেমন একটা দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের জন্য অর্থ সহায়তার প্রস্তাব আটকে যাওয়ায় অনেকটা হতাশ কিয়েভ। তবে বছরের শেষে ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় ধরনের হামলা, কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার একটি ড্রোনবাহী জাহাজে কিয়েভের হামলা ও রাশিয়ার বেলগোরোদে ইউক্রেনের প্রাণঘাতী হামলা নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করে। নতুন বছরেও এ যুদ্ধ যে শেষ হচ্ছে না, তার একটা ইঙ্গিত দেয় দুপক্ষই।
এ অবস্থায় ইউক্রেনে যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বর্তমানে রাশিয়া যে অবস্থান নিয়েছে, তা থেকে পিছু হটার কোনো সম্ভাবনা বা পরিকল্পনা মস্কোর নেই বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দেশবাসীকে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ অঙ্গীকার করেন। ৩১ ডিসেম্বর রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে আমরা বারবার প্রমাণ করেছি যে, আমরা সবচেয়ে কঠিন সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি এবং কখনো পিছু হটে যাই না। রাশিয়া কখনো পিছু হটবে না। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ২০২৪ সালে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার শপথ নিয়েছেন। নতুন বছরের শুরুতেই ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে হামলা হওয়ার পর এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি। যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে বিশ্বনেতাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার অভাব দেখা গেলেও বৈশ্বিক অর্থনীতির পথে এ যুদ্ধই যে সবচেয়ে বড় বাধা, তা নিয়ে অতীতে একমত হতে দেখা গেছে তাদের।
তাই এ যুদ্ধ চলতে থাকবে না বন্ধ হবে—সেটাই নতুন বছরে বিশ্বনেতাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
অনিশ্চয়তায় বিশ্ব অর্থনীতি
কভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকে এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার জের ধরে ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট লোহিত সাগর প্রায় অচল করে দিয়েছে। যার প্রভাব এরই মধ্যে পড়েছে তেল ও বেশ কিছু পণ্যে। নতুন বছরে যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ না হলে অর্থনৈতিক সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালে কমবেশি ৫০টি দেশে ২০০ কোটির বেশি মানুষ ভোট দেবেন। ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২৭ সদস্যের ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নতুন বছরে নির্বাচন হবে। এ বছর নির্বাচন অলিম্পিয়াডে যেসব দেশ যোগ দিচ্ছে, সব মিলিয়ে তাদের অর্থনীতির আকার বৈশ্বিক অর্থনীতির ৬০ শতাংশ। যেসব দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, সেসব দেশের অর্থনীতির পথ মসৃণ হবে না। ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস এখন পর্যন্ত মিশ্র। বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক উন্নয়নশীল দেশ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বৈশ্বিক জিডিপির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে ৩ শতাংশে নেমে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক জিডিপি আরও কমে ২ দশমিক ৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে। অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে নির্জীব করে তোলে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠাগুলো ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে এগোয়। তাই চলমান সামরিক সংঘাত, চরম আবহাওয়া ও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশে নির্বাচন ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভালো পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে না, যা বিশ্বনেতাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসরায়েল-হামাস সংঘাত
গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামাস যোদ্ধারা ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা ও সেখান থেকে দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে আনার ঘটনার যে প্রতিক্রিয়া তেল আবিব দেখাচ্ছে, তার এখনো অবসান হয়নি। সেদিন থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। বিমান হামলার পাশাপাশি সেখানে চলছে স্থল অভিযান। তাদের বর্বরতায় এ পর্যন্ত ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। হামলা থেকে আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, উপাসনালয় কোনো কিছুই রক্ষা পায়নি। উদ্বাস্তু হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। যুদ্ধাবস্থায় ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক সেখানে ঢুকতে পারছে না। লাখো মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। এমন অবস্থা চললে শিগগির সেখানে দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাঝে তিন দফার সাত দিনের একটা যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায়, সংঘাত এখনো চলছে।
ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলছে প্রতিবাদ। কিন্তু সব ধরনের প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর সমর্থনে গাজায় নৃশংসতা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দেশটির এ বর্বরতাকে অনেক দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এমনকি এটাও বলা হচ্ছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গাজায় সবচেয়ে বড় নৃশংসতা চলছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘গণহত্যার অপরাধে’ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা করেছে। গত শুক্রবার ওই আদালতে করা মামলার আবেদনে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যামূলক’ উল্লেখ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কেননা ইসরায়েল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, জাতিগত ও জাতিগোষ্ঠী ধ্বংস করেছে। প্রায় তিন মাস ধরে চলা এ সংঘাতের এখনো কোনো ফয়সালা না হওয়ায়, আঞ্চলিক যুদ্ধের নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। আর লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ লক্ষ্য করে ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতি। যাদের জন্য প্রায় অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ব বাণিজ্যের এ গুরুত্বপূর্ণ রুটটি। গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা না থামলে হুতিরা হামলা থামাবে না বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। আর হামাস তো স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছাড়া কোনো আলোচনায় যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে। এ অবস্থায় নতুন বছর জুড়ে গাজায় হামলা চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
তবে ভেতরে ও বাইরে প্রবল চাপের মধ্যে থাকা নেতানিয়াহু কতদিন এ হামলা চালিয়ে যেতে পারবেন তা একটা প্রশ্ন। কারণ এরই মধ্যে গাজা থেকে কয়েক হাজার সেনা প্রত্যহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অনেক পশ্চিমা দেশও নেতানিয়াহুর ওপর মারাত্মক বিরক্ত। এ অবস্থায় কত দ্রুত গাজা সংকটের সুরাহা করা যায়, তা বিশ্বনেতাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক
বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বৈরী সম্পর্ক নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু পুরোনো এ বিষয়টি ওয়াশিংটনের জন্য নতুন উদ্বেগের জন্ম দেয় যখন গত বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। সেইসঙ্গে খোদ নিউইয়র্কসহ অনেক দেশের শহরে চীনের গোপন পুলিশ স্টেশনের তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসে। আর এ নিয়ে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কে বেশ টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। নতুন বছরে এ দুই পরাশক্তির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের প্রথম দিনেই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্থিতিশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দুই দেশের সম্পর্কের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাইডেনের সঙ্গে বার্তা বিনিময়কালে তিনি মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এর আগে গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোয় জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন জিনপিং। ওই সময় দ্বিপক্ষীয় প্রতিযোগিতা যাতে সংঘাতে রূপ না পায়, সেজন্য যোগাযোগের মাধ্যম চালু রাখার কথা বলেন দুই নেতা। এখন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বার্তায় জিনপিং বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের স্থিতিশীল, স্বাস্থ্যকর ও টেকসই উন্নয়নে দুপক্ষেরই বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া দরকার। নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে জিনপিং জোর দিয়ে বলেন, ‘চীন-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সঠিক পথে রাখতে দুই দেশ ও জনগণের উপকার করতে, সেইসঙ্গে বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন এগিয়ে নিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’ এর আগে, গত অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, মানবজাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বিশ্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বলেও সে সময় মন্তব্য করেন তিনি।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আলোচনার টেবিলে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলা হলেও পরে সেটার বিপরীত চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। কারণ, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য মেনে নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। আর তাইওয়ানে ঘন ঘন যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো মেনে নিচ্ছে না চীন। বিশ্লেষকরা বলেন, চীন বিশ্বে ক্রমবর্ধমান আধিপত্য বিস্তারের ভূমিকা থেকে পিছু হটবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রও মরিয়া হয়ে চীনের গতিরোধ করার চেষ্টা করবে। এ কারণে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। তবে নতুন বছরে দেশ দুটি কথা অনুযায়ী সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি
বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম আলোচনার বিষয় হচ্ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি তথা জলবায়ু পরিবর্তন। মানব ইতিহাসে ২০২৩ সালই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণতম বছরের রেকর্ড গড়েছে। গত বছরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের তুলনায় ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও বেশি উষ্ণ ছিল। বিশ্বের শীতপ্রধান দেশগুলোকেও নজিরবিহীনভাবে গত বছর গরমে নাকাল হতে দেখা গেছে। বৈশ্বিক তাপামাত্রা বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশে ভয়াবহ দাবানল দেখা গেছে। এসব কারণে অনেক মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আগামী বছরগুলোতে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমারেখা অতিক্রম করবে বলে মনে হচ্ছে।
এরকম অবস্থায় গত ডিসেম্বরে দুবাইয়ে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে একটি নতুন চুক্তির বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছে সবপক্ষ, যাতে প্রথমবারের মতো তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হলেও বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয় তা অনস্বীকার্য। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল অনেক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে, যারা খুব সহজেই এটি থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে না। তবে মানবজাতিকে বাঁচাতে যে কার্বন হ্রাসের বিকল্প নেই, তাতে একমত বিশ্বনেতারা। তাই নতুন বছরে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়টি বিশ্বনেতাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।