গত ১৯ জুন ইউনিভার্সিটি অব সিডনিতে শুরু হওয়া টেক ফেস্টিভ্যাল-২০২৩-এ এআই তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হ্যাকাথনে প্রথম হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সোহাগ রানার নেতৃত্বাধীন দল। তার কথা জানাচ্ছেন জুবায়ের আহম্মেদ।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনিতে বছরে একবার টেক ফেস্টিভ্যাল হয়। এই ফেস্টিভ্যালে থাকে নানান ইভেন্ট। এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) হ্যাকাথন, গুগল ক্লাউড ম্যারাথন, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতাসহ আরও অনেক আয়োজন। বাংলাদেশের সোহাগ রানা একাধিক কর্মশালা এবং ইভেন্টে অংশ নিয়ে দুটিতে বিজয়ী হয়েছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় হয়েছেন প্রথম এবং গুগল ক্লাউড ম্যারাথনে দ্রুত ট্র্যাককারী হিসেবেও পেয়েছেন পুরস্কার।
রানা জানালেন, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হ্যাকাথন ছিল ২৪ ঘণ্টার হ্যাকাথন। এটি ১৯ জুন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে পরদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলেছে। এআই হ্যাকাথনে মোট ২০টি দল অংশ নেয়। প্রতিটি দলে ছিল তিনজন সদস্য। আমি।’
হ্যাকাথনে যা করতে হয়েছিল
হ্যাকাথনে সোহাগদের দলকে একটি সমস্যা দিয়ে সমাধানের জন্য বলা হয়েছিল। তাদেরকে মাস (ভর) স্পেকট্রোমিটারের একটি তথ্য-সারণী তথা ডাটাসেট দেওয়া হয়েছিল। ভর স্পেকট্রোমিটারটি আণবিক ওজন পরিমাপের মাধ্যমে অজানা পদার্থকে শ্রেণিবদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া পরিচিত যৌগগুলো পরিমাপ করতে এবং অণুর গঠন এবং রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণেও এর ব্যবহার আছে। বিশেষ করে রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় এই ভর স্পেকট্রোমিটারের অনেক কাজ। এতে একটি কয়েল থাকে, যা একাধিকবার ব্যবহারের পর প্রতিস্থাপন করতে হয়। তবে এটি কখন বদলাতে হবে সেটির পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি এতদিন জানা ছিল না। কাজ করা বন্ধ করে দিলেই প্রতিস্থাপন করতে হয় ওই কয়েল।
সোহাগের দলকে একটি ডাটাসেট দেওয়া হয়েছিল, যাতে একাধিক ভর স্পেকট্রোমিটারের তথ্য ছিল। তাদের কাছে ছিল ১৫ কলামের ডেটা। যার শেষ কলামে ছিল বাইনারি তথ্য (০, ১)। আর ওটা দিয়েই নির্ধারণ করতে হবে যে কয়েলটি প্রতিস্থাপন করার আদৌ দরকার আছে কি না।
“কয়েল প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে আমাদের পূর্বাভাস দিতে হবে। এটিই ছিল সমস্যা। কারণ, ওটার সমাধান এখনো কেউ করেনি। তাতে করে প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল আরও কঠিন। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম এটি একটি সাধারণ বাইনারি শ্রেণিবিন্যাস। সীমিত ডাটা ছিল এবং কয়েলের অবক্ষয়টাও একাধিক ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। ভাবনা চিন্তার পর আমরা ‘কয়েল ডিগ্রেডেশন’ নামে ডাটাসেটে একটি নতুন কলাম বানিয়ে সমাধানের কথা ভেবেছিলাম। তাতে সফল হইনি।”
এরপর তারা এটিকে XGBoost নামে একটি অ্যালগরিদমে রাখেন। ডাটাসেট থেকে তাদের দেওয়া কলামগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের পর কয়েলটি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে এটি সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিল। পর্যবেক্ষকদের মতে, তাদের মডেলটি ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ নির্ভুল ছিল।
প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত দিনে তাদের একটি পরীক্ষার ডাটাসেট দেওয়া হয়েছিল এবং সমস্যা ছিল কয়েলটি কখন প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হবে, সেটির পূর্বাভাস দিতে হবে। অন্যান্য প্রতিযোগীর মধ্যে তাদের এমএল মডেলটি সেরা পূর্বাভাস দিয়েছে এবং প্রাথমিক মূল্যায়নে প্রথম হয়েছে। এরপর ১৫ মিনিটের মধ্যে তাদের মডেলটি নিয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে হয় এবং সবশেষে সোহাগরাই প্রথম হয়।
সোহাগ জানালেন, নতুন এই আবিষ্কারের ফলে ম্যাস স্পেকট্রোমিটারের কয়েল বদলানোর খরচ ও সময় দুটিই কমে আসবে।
মন্তব্য করুন