সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ফ্রেন্ডস অব আর্থ ইন্টারন্যাশনাল এবং আইইউসিএনের নির্বাহী সদস্য। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক, পরের বছর স্নাতকোত্তর এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ সম্পন্ন করেন। পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক, ২০১২ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৯ সালে ‘পরিবেশের নোবেল’খ্যাত গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজে ভূষিত হন তিনি। ২০০৯ সালে টাইম সাময়িকী তাকে হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট খেতাবে ভূষিত করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগের জন্য তার নেতৃত্বাধীন বেলা সম্মানজনক ট্যাঙ্গ পুরস্কার লাভ করে। সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম, লক্ষ্য, রাষ্ট্র সংস্কার, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ঘিরে তার পরিকল্পনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি
কালবেলা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আপনার অনুভূতি কেমন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমার অনুভূতি খুবই মিশ্রিত। প্রথমত, আন্দোলনের সময় এত মানুষের মৃত্যুর ভয়াবহতা মন থেকে যাবে না সহজে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের বলিষ্ঠতা ও প্রত্যয় দেখে একটা আশা জাগে। আবার এটিও বুঝি যে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কৃত্রিম চাপ তৈরি করবে। সব কিছু মিলিয়ে আমার কাছে একদিকে আশা আরেক দিকে অনিশ্চয়তা—ঠিক এই রকম একটা অনুভূতির মধ্যে আছি।
কালবেলা: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো কী কী হবে?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যে কয়েকজন এখন পর্যন্ত শপথ নিয়েছি, তারা সবাই একসঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। পুলিশ বাহিনী, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকে, তারা ঘোষণা দিলেও পুরোদমে কাজে নামেনি এখনো। তাদের অনেক থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যেও একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে। এখন তাদের আশ্বস্ত করে কাজে নামাতে হবে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থনীতি ও বাণিজ্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা। তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনা। চতুর্থ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকার বিপ্লবের কোন বার্তাগুলোকে প্রাধান্য দেবে এবং সনাতন পদ্ধতিতে পরিচালিত প্রশাসন ব্যবস্থায় সে বিপ্লবী বার্তাগুলো কেমন করে সংযোজিত করবে সেটা। এটি মূলত পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ। বিপ্লবীর বার্তার সঙ্গে এ দেশের সাধারণ মানুষের বার্তার কোনো তফাৎ নেই। কিন্তু যেগুলো প্রথাগতভাবে চলে এসেছে, সেগুলো এমন পদ্ধতিতে কেমন করে তুলে ধরব, সেটি কাজের জায়গা। আমাদের আরেকটা চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের বিচার বিভাগ। আমাদের বিচার বিভাগে যে পরিমাণ দলীয়করণ হয়েছে, সেখান থেকে বিচার বিভাগের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। কাজগুলো আমাদের তাড়াতাড়ি করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা চাই, তত তাড়াতাড়ি পারছি না। এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে আবার দেরিও করা যাবে না। মোটাদাগে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
কালবেলা: কীভাবে এবং কী কাজ করবেন বলে পরিকল্পনা করছেন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: কীভাবে করব, তার উত্তর এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। কী সে উত্তর, আমার কাছে আছে। প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে। দলীয় প্রশাসনকে বাংলাদেশের প্রশাসন করতে হবে। পুলিশকে বাংলাদেশ পুলিশ করতে হবে। সব জায়গায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতিতে পেশি শক্তি আর দুর্নীতি কমাতে হবে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমাতে হবে। কী করে করব, যেটা কোনো রকেট সায়েন্স না। বিশ্বের অনেক দেশ দুর্নীতিমুক্ত। আমাদের সমাজে প্রিভিলেজ সেকশন আর সাধারণ জনগণের মধ্যে আমি নিজেকে সাধারণ জনগণ মনে করি। তাদের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। অন্যান্য দেশে এসবের প্রচুর মডেল আছে। আমরাও সে মডেলগুলো থেকে শিক্ষা নেব। কিন্তু আমাদের দরকার আমূল সংস্কার। সেবা নিতে একটা প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা পাবলিক হাসপাতালে গেলে রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ডাক্তার সাহেব বলেন ৩টায় আসবেন; কিন্তু তিনি আসেন ৬টায়। তিনি এসে ভেতরে ঢুকে যান। কোনোদিনও রোগীদের সালাম দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না এবং মানুষও ধরে নিয়েছে ডাক্তার সাহেব ৬টায় আসবেন বললে ৩টা থেকেই বসে থাকতে হবে। সার্ভিস ডেলিভারির প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের এই অবস্থা। অন্য অনেক দেশ এর থেকে ভালো আছে। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখে না। সব ব্যবস্থাতেই যে পরিবর্তনগুলো আনা হবে, এগুলোর মডেল অনেকেই সৃষ্টি করে রেখেছেন। সে মডেলগুলো দলীয় প্রভাবে থাকা একটা প্রশাসনে কীভাবে ইনজেক্ট করা হবে, তার উত্তর আমি এখনো জানি না। সেটি মনে হয় আমরা যাত্রাপথে যাব আর শিখব। এটির উত্তর আপনিও যদি জানেন, তাহলে আমাকে লিখে দিয়ে দেন। আমরা সেভাবে করে ফেলব। এর উত্তর আসলে কেউ জানে না। এটি আমাদের শুরু করে দিতে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও আজ বাংলাদেশে কাজ করছে এবং তার জন্ম বাংলাদেশে। বাংলাদেশেও সফল মডেল আছে। সেদিকে না তাকিয়ে বাংলাদেশে এতদিন মানুষের মত প্রদান আটকানো, ভুল রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশাসনের সবাই খারাপ ও দলীয়, সেটি আমি বলছি না। অনেক ভালো মানুষ রয়েছেন, তাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। সবার মনে কিঞ্চিৎ হলেও দেশপ্রেম আছে। আমদের আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার উপায় প্রতিটি সমালোচনার জবাব দেওয়া নয়, সমালোচনা বিবেচনায় নিয়ে ভুলটা সংশোধন করা—সেটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে বিভক্তির কোনো সুযোগ থাকবে না।
নির্বাচন ব্যবস্থাকে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। আগামী মাসের মধ্যেই যেহেতু কোনো নির্বাচন হচ্ছে না; কাজেই এখন আপাতত মানুষ যেগুলো চাচ্ছে, আমরা সেগুলোতে বেশি মনোনিবেশ করছি। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। ধারা, আইন থেকে শুরু করে পলিটিক্যাল পার্টির রেজিস্ট্রেশন, পলিটিক্যাল পার্টির কার্যপদ্ধতি সব কিছুই নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত। কাজটি আমাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে আছে।
কালবেলা: রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করবেন কি?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: সব অংশীদারের সঙ্গে সিরিজ অব মিটিং করব। আমরা বুঝতে পারছি যে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। আমি হয়তো ভাবছি আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। আমি হয়তো খুব ভালো জানি। কিন্তু অন্য ১০টা মানুষ যারা আমার থেকে সেবা নেন, তাদের থেকে যখন মতামত শুনব, তখন নতুন এবং ইউনিক কিছু আইডিয়া পেতে পারি। সিরিজ অব আলোচনায় সবাই হয়তো আমন্ত্রিত হবেন। সেখানে চ্যালেঞ্জও আছে, কাউকে কাউকে আপনি খুঁজে পাবেন না। তবে সবাইকেই জানানো হবে। সবার দায়িত্ব আলোচনায় আসা।
আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে একটা রিফর্ম এজেন্ডা ফাইনালাইজ করব। এর মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অবশ্যই থাকবেন, সব পেশাজীবী থাকবেন, গণমাধ্যম থাকবে, কূটনীতিকরা থাকবেন। যারা আমাদের আর্থিক সহায়তা দেন, তারাও যাতে দুর্নীতির অভিযোগে আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করতে না পারে, তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলব। সবার সঙ্গে কথা বলে একটা রিফর্ম এজেন্ডা তৈরি করা হবে।
কালবেলা: প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা ও প্রশাসনের ভেতরে আস্থা প্রতিষ্ঠায় কী পদক্ষেপ নেবেন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: প্রশাসনে অনেক ভালো মানুষ আছে। বিচার বিভাগে প্রচুর বিচারপ্রতি আছেন; যারা ভালো বিচারপ্রতি এবং ভালো রায় দেন বলে তাদের ঠিক বেঞ্চ দেওয়া হয় না। আমাদের একজন বিচারপ্রতি আছেন, তিনি গুঁড়া দুধের একটি মামলায় একটা আদেশ দিয়েছিলেন। সকালে আদেশ দিয়েছেন, দুপুরে তার জুডিশিয়ালিটি কেড়ে নেওয়া হয়। আমরা প্রসেস ঠিক করার ওপর জোর দেব। যদি প্রসেস ঠিক হয়, আউটকাম ঠিক হতে বাধ্য। আস্থা প্রতিষ্ঠার বড় উপায় হলো সঠিক জায়গায় পরীক্ষিত লোক বসানো। আপনি ১০টা লোকের নাম বলতে পারবেন, যারা বাংলাদেশের সমাজে সৎ এবং অর্থনৈতিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়। বিচার বিভাগেও এরকম ভালো লোকগুলোকে সামনে আনা উচিত। এতদিন যেটা হয়েছে দলীয়/প্রিয় লোকগুলোকে সামনে আনা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করব ভালো মানুষগুলোকে সামনে আনার। যারা দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এনে অপরাধ করেছে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু দলের প্রতি আনুগত্য ছিল বলেই সবাই শত্রু বিবেচিত হবে, সে রকমটা না। ভালো আবহে যারা ভালো কাজ করবে, তারাও ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার সংগ্রামে লিপ্ত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।
কালবেলা: সিস্টেমের পরিবর্তন কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। কীভাবে কাজটি করবেন বলে মনে করছেন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: সিস্টেম তৈরি করে দেওয়া হয়তো দুই মাসের ব্যাপার। কিন্তু সিস্টেমকে কার্যকর করা সময়সাপেক্ষ ও কঠিন কাজ। যেমন ধরুন, রাজউকের অনুমতির জন্য অনলাইন প্ল্যান জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু সারা জীবন সেটি অকার্যকর থাকে। অকার্যকর করে রাখা হয়, যাতে মানুষ সরাসরি রাজউকে যান এবং অর্থ প্রদান করেন। অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়া গেলে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এই সিস্টেমগুলো সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। এটি আমি একটি ছোট উদাহরণ দিলাম। আরও বড় অনেক উদাহারণ আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি বিধান আমাদের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দল তাদের সুবিধার জন্য সেটি বাতিল করে দিল। আমরা ও ছাত্র-জনতা যে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছেন, সেটি টেকসই হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আমি দেখছি। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও জনগণ ওয়াচডগের ভূমিকায় থাকছে। দুদকে নালিশ দিলে দলীয় হলে বিবেচনায় নেবে না, দলীয় না হলে বিবেচনায় নেবে—এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। সব জায়গায় জনগণ যেন কথা বলতে পারে, কথা বলার পথে কেউ বাধা তৈরি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি থাকবে। মুক্তভাবে মতপ্রকাশের মতে সব আইনি ও প্রশাসনিক বাধা অপসারণ করা হবে। মোটকথা হচ্ছে, জনগণকে ক্ষমতায়িত করা হবে। সরকারকে জবাবদিহিমূলক করা হবে।
কালবেলা: পরবর্তী সময়ে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তারা কি সেগুলো মানবেন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: নতুন যারা আসবেন তারা যদি না মানেন, তাহলে তারা আবার এমন গণরোষের মুখে পড়বেন। তারা তাদের পরিণতির কথা ভাববেন কি না, এটা তাদের ওপর নির্ভর করবে। শিক্ষার্থীরা মাঠ ছাড়ছে না এবং অধিকারের প্রশ্নে জনতা মাঠ ছেড়ে দেবে না। এত কষ্ট করে, এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অধিকার আদায়ে তাদের মাঠ ছেড়ে দেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।
কালবেলা: বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ে কাজের ক্ষেত্রে আপনার অগ্রাধিকার তালিকাটি কেমন হবে?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমি একজন পরিবেশকর্মী। আমি যখন পরিবেশ উপদেষ্টা হবো, তখন কি আমার ভেতরের পরিবেশ কর্মীর আত্মাটা মরে যাবে? তা কখনোই হবে না। এই আত্মাটা ত্রিশ বছরের আত্মা। প্রশাসনের সঙ্গে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আমি মন্ত্রণালয়ের সবকিছুই কমবেশি জানি। সেক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা হবে না। একটা ভিত্তি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আছে; আমার নিজের কিছু অগ্রাধিকার আছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কিছু অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানেও আমার মতামত নেওয়া হয়েছিল। আমার নিজেরও কিছু মতামত আছে। প্রশাসনিক সক্ষমতা ও শিক্ষার্থীরা আমাকে কতটুকু সাহায্য করতে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে আমি সংস্কারের দিকে যাব। পরিবেশ মন্ত্রণালয় কেবলমাত্র মন্ত্রণালয়ে বসে থাকবে না। ডিপার্টমেন্ট অব এনভায়রনমেন্ট এক্টিভিজমের মধ্যে থাকবে, সেটিকে নিশ্চিত করা হবে। আমার প্রথম কাজ হবে সিঙ্গেল ইউজ পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করা।
কালবেলা: রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তন, নির্বাহী ব্যবস্থা পরিবর্তন, আইনের পরিবর্তন, সংবিধানের পরিবর্তনে আপনাদের উদ্যোগ কেমন হবে?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: এসব বিষয়ে টেকসই করতে গেলে রাজনৈতিক ঐকমত্য লাগবে। আমরা খুবই ভালোভাবে সব ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব দিতে পারব বলে আশা করছি। গণবিপ্লব থেকে উঠে আসা একটা সরকারের পরিচালনা পদ্ধতি অন্য সব সরকারের মতো হবে না। এর পরিচালনা পদ্ধতি ঠিক করে নিতে হবে। আমরা যে সংস্কারগুলো করতে আগ্রহী হবো, তার মধ্যে কতগুলো হয়তো অধ্যাদেশ আকারে করা সম্ভব। কতগুলো হয়তো নির্বাহী আদেশে করা সম্ভব। সংবিধানে আমরা কী কী চাই, নতুন নাকি সংশোধনী। সংশোধনী চাই এটা জানি; কিন্তু নতুন ফর্মে চাই, নাকি সংশোধনী ফর্মে চাই—এটা এখনো আলোচনা হয়নি।
কালবেলা: আপনারা দায়িত্ব নেওয়ার পর কী ধরনের চাপ বোধ করছেন?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: জনগণের প্রত্যাশার চাপ আছে; কিন্তু জনগণের প্রত্যাশাগুলো খুবই যৌক্তিক এবং সঠিক। সেটাকে চাপ হিসেবে নিই আর দায়িত্ব হিসেবে নিই, কাজ করতে হবে। বাধা যেগুলো আছে, সেগুলোই আসলে চাপ। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ গড়ার সংগ্রামে যেতে চাই। এ চাপগুলো ঐক্যবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। এগুলো মোকাবিলায় প্রথম চেষ্টা করা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা। তারপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া। বিচার বিভাগকে অন্তত একটা যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যাওয়া। তারপর বড় সংস্কারের কথা ভাবা হবে। এগুলো হয়ে গেলে জনগণ কিছুটা আশ্বস্ত হবে, তারপর অন্যান্য কাজ করা হবে।
কালবেলা: জনগণের প্রতি আপনার কোনো আবেদন আছে কি?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: আমার একটাই আবেদন যে এই মুহূর্তে আমাদের ফোকাসটা যেন আমরা ঠিক রাখি। এই রাষ্ট্রের সংস্কার লাগবে। এ সংস্কার প্রক্রিয়ায় আমরাও ভুল করতে পারি। আমাদেরও ছোটখাটো ভুল হতে পার, বড় ভুলও হতে পারে। ভুলগুলো যেন আমরা সংশোধন করতে পারি, এজন্য সব সময় আমাদের পাশে থাকবেন। দেখবেন, পর্যবেক্ষণ করবেন আমরা কী করছি।