কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থান ও বিগত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর স্কুল-কলেজ খুললেও দেশের প্রথম সারির অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কাটেনি স্থবিরতা। স্বভাবতই তৈরি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিয়ে নানা সংকট ও শঙ্কার।
বুধবার কালবেলায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান স্থবিরতায় সীমিত আকারে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বন্ধ। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহীর মতো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা পদত্যাগ করেছেন। সেসব পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে নিয়োগ পেতে দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত শিক্ষকরা। সে কারণে একাডেমিক কার্যক্রম ঠিকমতো শুরু হয়নি। আবার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও গ্রুপিং করে সময় পার করছেন। প্রাধ্যক্ষরা পদত্যাগ করায় হলগুলোর পরিবেশও স্বাভাবিক নয়। অন্যদিকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের অবস্থান ছিল বিগত সরকারের পক্ষে অথবা যারা আন্দোলনের সংহতি জানাননি, তাদের বিরুদ্ধে সরব অবস্থানে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে এখনো যে সময়সাপেক্ষ বিষয়, তা বলাই বাহুল্য।
আমরা জানি, সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষক আন্দোলনে গত ১ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এরপর যোগ হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি। এমন পরিস্থিতিতে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে শপথ গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। অবশ্য তার আগেই সেনা সদর দপ্তর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সে নির্দেশনা মেনে অল্প কিছু স্কুল-কলেজ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলেনি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত রোববার থেকে পুরোদমে খুলে দেওয়া হয় সব স্কুল-কলেজ। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র ছিল ভিন্ন। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ ঊর্ধ্বতন প্রশাসন বহাল আছে, সেখানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ঊর্ধ্বতন প্রশাসন পদত্যাগ করায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুই হয়নি। যেমন—ঢাবির উপাচার্য, প্রক্টরসহ পদত্যাগ করেছেন অনেকেই। সেখানে অব্যাহতি বা পদত্যাগের দাবিতে এখনো চলছে আন্দোলন। তাদের দাবি, অতিদ্রুত শূন্য পদগুলোতে যোগ্য ও শিক্ষার্থীবান্ধব ব্যক্তিদের নিয়োগ, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ সংকট নিরসন। কমবেশি একই চিত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে।
আমরা মনে করি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেশে একটি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে এবং রাষ্ট্রের পুরো ব্যবস্থাপনায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা জাগিয়েছে বিপ্লবী ছাত্ররা। সেই পরিবর্তন বা সংস্কারের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে চলছে ব্যাপক রদবদল। ফলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা এখনো পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এক অর্থে এই মুহূর্তে এসব বিশ্ববিদ্যালয় চলছে সম্পূর্ণ প্রশাসনবিহীন। স্বভাবতই এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নেই কোনো রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রতিষ্ঠানে চলছে না দাপ্তরিক কাজকর্ম। আমরা চাই, দ্রুত সব শূন্যপদে উপযুক্ত ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়াসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পুরো শিক্ষায় ফিরুক স্থিতিশীলতা, দূর হোক স্থবিরতা ও শঙ্কা।