ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলে ৫ সেপ্টেম্বর একযোগে পদত্যাগ করেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। অন্তর্বর্তী সরকারের সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এরই মধ্যে স্বাগত জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে বলেও প্রত্যাশা দলগুলোর নেতাদের। নিয়োগ পেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনও একটি সুন্দর নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এত মানুষের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’ নতুন এই কমিশন শপথ নিতে যাচ্ছে আজ রোববার। তাদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক সচিব এ এস এম মো. নাসির উদ্দীন। তার সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তাহমিদা আহমেদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। নতুন এই কমিশনের ওপর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব থাকবে।
গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই অপরাধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিভিন্ন অজুহাতে দলীয়করণ করে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে। অতি উৎসাহী হয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ‘একতরফা’ জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধী দলের বয়কটের পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পায় আওয়ামী লীগ। নুরুল হুদা কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করলেও এতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানায়, নির্বাচনের আগের রাতেই ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই নির্বাচন ‘রাতের ভোটের নির্বাচন’ হিসেবে খ্যাত।
সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৪ সাধারণ নির্বাচনও বর্জন করে বিরোধী দলগুলো। অধিকাংশ আসনে দলীয় কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এটি ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে খ্যাত।
আমরা মনে করি, একটি দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়া। গণতন্ত্রকে হত্যা করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে আর যাই হোক, কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কোনো দেশেই টিকে থাকতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানে হয় তারা নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন অথবা প্রাণ বাঁচাতে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এমন একটি পরিস্থিতি কোনো দেশের জন্য কাম্য নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যাশা, দেশে আবার ভোটের সংস্কৃতি ফিরে আসবে। মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে নিজেদের সরকার। নিশ্চিত হবে সরকারের জবাবদিহি। তবেই দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।