মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্রিউলি গ্রামের ওই বাড়িতে রাতভর অভিযান শেষে শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। আটক ১০ জনের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন নারী। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আটক ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। ওই বাড়ি থেকে বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। সিটিটিসির সোয়াত টিমের এ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিল সাইড’।
দেশকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে জঙ্গিরা অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। তারা কখনো জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), কখনো হরকাতুল জিহাদ, কখনো আল্লাহর দল ইত্যাদি নাম ধারণ করেছে। ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে, সিলেটের আতিয়া মহলসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়েছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মা তার জঙ্গি ছেলেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। আত্মীয়স্বজনরা জঙ্গিদের মৃতদেহ নিতে পর্যন্ত আসেননি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদের বিস্তারের নেপথ্যে ছিল বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকার। আমরা জঙ্গিবাদের উত্থানের আলামত প্রথম উপলব্ধি করি ১৯৯২ সালে। ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’—এ স্লোগানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উত্থান ঘটে ১৯৯২ সালে। তারা রাষ্ট্রীয় মদতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ২৪ জন নিহত হন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হামলাকারীদের অনেকে দেশত্যাগ করে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সশস্ত্র জঙ্গিবাদের উত্থানের সর্ববৃহৎ আলামত দৃশ্যমান হয় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জেএমবি কর্তৃক ৬১ জেলায় একযোগে বোমা হামলার মাধ্যমে। জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার কাজে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করারও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ ধর্মপ্রাণ; কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। তাই এ দেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা তথা জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় কখনো দেয়নি এবং দেবে না। বাঙালির মানসেই প্রগতিশীলতার বীজ লুকায়িত আছে। জনগণের জঙ্গিবিরোধী মানসিকতার কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে জঙ্গিবাদ দমন সহজ হয়।
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এ দেশের জন্মের পর থেকেই তৎপর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী। এ ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে অসংখ্য দেশপ্রেমিক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। জঙ্গি তৎপরতাও বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার একটি অপচেষ্টা মাত্র। নিকট-অতীতে জঙ্গিবিরোধী যে তৎপরতা দেখা গেছে, এতে নিঃসন্দেহে আশা করা যায়, বিভিন্নভাবে তৎপর জঙ্গিদের সেলগুলোও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হবে।
আমরা মনে করি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ দেশে জঙ্গিবাদসহ সব রাজনৈতিক অপশক্তির তৎপরতা বন্ধ হবে। সেইসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন