মুসলিম জাতি পুরো একটা বছর অপেক্ষা করে রমজান মাসের জন্য। তারা জানে, এই মাস হলো সংযমের মাস। এই মাস নিজেকে শুদ্ধ করার মাস। সহিহ বুখারি (হাদিস নং: ১৮৯৯) এবং সহিহ মুসলিম (হাদিস নং: ১০৭৯) উভয় হাদিসেই আছে এই মাসে রমজান মাসে শয়তানকে মহান আল্লাহ তা’আলা বন্দি করে ফেলেন। বছরের এগারো মাস পৃথিবীতে শয়তান মানুষকে বিপথে অগ্রসর করতে সফল হলেও রোজার এক মাস শয়তান কিছুই করতে পারে না। অর্থাৎ, শয়তানের কোনো হাত নেই যদি পৃথিবীর মানুষ মন্দ কাজে লিপ্ত না হয় পবিত্র এ মাসে।
শয়তান বন্দি থাকলেও আমাদের অন্তরের লুকায়িত ইবলিস কি আমরা বন্দি রাখতে পেরেছি? যদি সত্যিই পারতাম, তাহলে প্রতিবছর রমজান মাস এলেই বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে বাজারদর অস্বাভাবিক হতো না। অত্যন্ত হতাশার বিষয়, বছরের পর বছর এ অবস্থা চললেও এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। সর্বপ্রথম জানা দরকার রোজা এলেই কেন বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়? বাজারের সিন্ডিকেটের শিকড় কোথায়? অন্যদিকে, পুরো দেশের বাজার সিন্ডিকেটের কলকাঠি কারা নাড়ছে, তা যদি অনুসন্ধান করে বের করা যায় এবং এসব চক্রের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তাহলে দেশের মানুষ এই পবিত্র রমজানে হয়তো একটু স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলতে পারতেন।
বাংলাদেশ হলো মুসলিমপ্রধান দেশ। আমাদের দেশে নব্বই শতাংশের বেশি মুসলমানের বসবাস। প্রায় সব শ্রেণির মানুষই এই মাসে রোজা পালন করতে চান। কিন্তু যারা দিন আনে দিন খান; অর্থাৎ, যারা জীবনের তাগিদে সারা দিন ঘরের বাইরে থাকতে হয়; মাথার ঘাম পায় ফেলে খুব সামান্য আয় করেন, বাজারের এই অবস্থার জন্য তাদের সবচেয়ে বেশি বেগ পেত হয়।
দেশের সব ব্যবসায়ী, সব মানুষ যে অসৎ অথবা মন্দ তা নয়। কেউ কেউ আছেন যারা ফেসবুক-ইউটিউব সেলিব্রেটি অথবা চলচ্চিত্র জগতের মানুষ—যারা খেটে খাওয়া মানুষের পাশে এসে বটবৃক্ষের মতো পাশে এসে দাঁড়ান, যা টেলিভিশন, পত্রিকা অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়। কেউ হয়তো গোপনে নিভৃতে গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান আমরা হয়তো তা টেরও পাই না। সবার এমনই হওয়া উচিত। আমাদের মাথায় একটা কথা গেঁথে রাখতে হবে—আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু আমরা যদি অসৎ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে মানুষের হৃদয়ে কষ্ট দিই, যদি গরিবের পেটে লাথি দিই তাহলে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, সেই লাথি একদিন আমাদের গায়ে এসেই পড়বে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে—হোয়াট গোজ অ্যারাউন্ড কামস অ্যারাউন্ড। এর মানে হচ্ছে, যা আপনি অন্যদের সঙ্গে করবেন, তা একদিন আপনাকেও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
আমি বিশ্বাস করি, যতদিন এই পৃথিবী বেঁচে আছে ততদিন যতই অপকর্ম হোক, যতই মন্দ কাজ হোক, যতই গরিবের ওপর শাসন কিংবা নির্যাতন হোক, এই বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সৎ মানুষদের নিরাশ করবেন না। আমরা এদেশের সাধারণ জনগণ। আমাদের হাতে কিছু নেই। তবে আমরা বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারি। সরকারকে প্রশ্ন করতে পারি। তাই আমি এ বিষয়ে সরকার সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ করব, যেন এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দূর করা হয় তাদের দৌরাত্ম্য।
আমরা চাই, খুব দ্রুতই বাজারে বিরাজমান সিন্ডিকেটের তামাশা বন্ধ হবে। রমজান সবার জন্য সুন্দর কাটুক। স্বস্তিতে থাকুক দেশের মানুষ—এমনটাই প্রত্যাশা।
সামিন ইয়াসার, শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
মন্তব্য করুন