কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ০৯:৫৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

শোকাহত

শোকাহত

ভারতের আহমেদাবাদে দেশটির ইতিহাসের স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ প্লেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবারের বিধ্বংসী এ দুর্ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটিতে যাত্রী, পাইলট ও ক্রু মিলিয়ে ২৪২ জনের মধ্যে একজন জীবিত ছাড়া মারা গেছেন সবাই। মর্মান্তিক এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী মানুষের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আমরাও হৃদয়বিদারক এ ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করি। সমবেদনা জানাই নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি।

ঘটনার দিন দুপুরে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। আবহাওয়া তখন স্থিতিশীল। আকাশ ছিল পরিষ্কার। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারে আরোহী ছিলেন ২৪২ জন। হঠাৎই এতে ভয়াবহ ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’ লক্ষ করেন পাইলট। সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজ থেকে সাহায্য চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়। সে সময় এটি ৬২৫ ফুট ওপরে ছিল। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাডার থেকে সেটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উড্ডয়নের মাত্র পাঁচ মিনিট পর বি জে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। ছাত্রাবাসের পাঁচজন শিক্ষার্থী মারা যান। আহত হন অনেকেই। মোট যাত্রীর ভারতীয় ১৬৯, ব্রিটিশ ৫৩, কানাডীয় ১ এবং পর্তুগালের ৭ জন নাগরিক ছিলেন। দুর্ঘটনার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। দুর্ঘটনাস্থলের ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার পর এলাকাটি ঘন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। জরুরি সেবা সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

বিধ্বস্তের মূল কারণ হিসেবে পাখির আঘাত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, উড্ডয়নের সময় একাধিক পাখির আঘাতে উড়োজাহাজটি পর্যাপ্ত গতি অর্জন করতে পারেনি, ফলে ইঞ্জিন শক্তি হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রপ্রধানদের মতো বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসও আনুষ্ঠানিকভাবে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এ ঘটনায় নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির শিল্প গ্রুপ টাটা।

ভারতীয় বিমানের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে বেশ কয়েকবার বড় ধরনের দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশটির। ২০২০ সালে ৭ আগস্ট কোঝিকোড় দুর্ঘটনায় ২০, ২০১০ সালে ম্যাঙ্গালুরুতে ১৫৮, ২০০০ সালের পাটনায় ৬০ জন নিহত হন। এর আগে ১৯৯৬ সালে চরখি-দাদরিতে ভুল যোগাযোগ এবং ভাষাগত জটিলতায় কাজাখ পাইলট নির্ধারিত উচ্চতা না মেনে নিচে নেমে আসেন এবং সৌদি বিমানের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে দুই বিমানে থাকা ৩৪৯ জনের সবাই নিহত হন। ১৯৯৩ সালে আওরঙ্গবাদ দুর্ঘটনায় ৫৫ জনের মৃত্যু হয়। ১৯৯০ সালে বেঙ্গালুরু দুর্ঘটনায় ৯২ জনের মৃত্যু হয়। ১৯৮৮ সালে আহমেদাবাদ দুর্ঘটনায় ১৩৩ জন নিহত হন। ১৯৮৫ সালে কানিস্কা ট্র্যাজেডিতে ৩২৯ জন প্রাণ হারান। ১৯৭৮ সালের আরব সাগর দুর্ঘটনায় ২১৩ যাত্রী নিহত হন। ১৯৬৬ সালে মন্ট ব্ল্যাঙ্ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১১৭ যাত্রী।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এমন একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার শোক আসলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবুও বেদনাঘন এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত সবার পাশে থাকাটা সবচেয়ে জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তায় পাশে থাকবে পুরো দেশ। পাশাপাশি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আরও তৎপর ও আন্তরিক থাকবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট গেল বাংলাদেশের

সুদের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে ৫ দিনের জোড় শুরু

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ফের পরিবর্তন, বাড়ল না কমলো?

দেশের নারী সমাজ বিএনপির প্রতি আস্থাশীল : সেলিমা রহমান

ক্রিকেটে ‘গ্রোভেল’ কী — এবং কেন এটি এত কুখ্যাত?

জরাজীর্ণ ভোটকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরার তথ্য গেল ইসিতে

আমার শরীর, আমার সম্পদ : ঐশ্বরিয়া রাই

হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ টেক্সটে রূপান্তর করবেন যেভাবে

আমরা ৫৩ বছর ধোঁকা খেয়েছি আর নয় : চরমোনাই পীর

১০

আফগানিস্তানের নাগরিকদের সব ইমিগ্রেশন আবেদন স্থগিত যুক্তরাষ্ট্রের

১১

শরীয়তপুরকে জাতীয় প্ল্যানের মধ্যে আনা উচিত : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১২

নগর পরিচালন ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন শীর্ষক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৩

আপ বাংলাদেশের এক নেতাকে অব্যাহতি

১৪

টেক্টর ঝড়ে বাংলাদেশের সামনে কঠিন লক্ষ্য

১৫

আইপিএলে দল পেলেন না অজি অধিনায়ক

১৬

ভুলেও সয়াবিন খাবেন না যে ৫ ধরনের ব্যক্তি 

১৭

গাজা নিয়ে ‘ভয়ংকর অভিযোগ’, অ্যামনেস্টির সতর্কবার্তা

১৮

জামায়াত নেতৃত্বাধীন ৮ দলের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ ১ ডিসেম্বর

১৯

নির্বাচিত হলে সমৃদ্ধ হবে দাগনভূঞা ও সোনাগাজী : আব্দুল আউয়াল মিন্টু 

২০
X