সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২
প্রকাশ ঘোষ বিধান
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চারদিক

সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল

সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল

পৃথিবীখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি সুন্দরবনে। সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে রাশিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগার সামিটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে ২০১০ সাল থেকে ২৯ জুলাই দিনটি বিশ্ব বাঘ দিবস হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। সম্মেলনে ১৩টি বাঘের টেরিটোরি দেশের সংগঠন ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার জন্য ঘোষণাপত্র জারি করে। টাইগার রেঞ্জের গর্বিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর বাঘ সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছর দিনটি উদযাপন করছে।

সেই থেকে বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাঘ টিকে আছে বিশ্বে এমন ১৩টি দেশে বাঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব দেশে গুরুত্বসহকারে দিবসটি পালন করা হয়।

২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা ১২ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছিল। এর মধ্যে নেপাল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ভারত ও ভুটানও দ্বিগুণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে সামান্য।

বাঘ সাধারণত ছয়টি উপপ্রজাতিতে বিভক্ত—সাইবেরীয় বাঘ, বেঙ্গল টাইগার, সুমাত্রান বাঘ, ইন্দো-চীন বাঘ, দক্ষিণ চীন বাঘ ও মালয়ান বাঘ। এ ছাড়া, পূর্বে ক্যাসপিয়ান বাঘ, জাভান বাঘ ও বালিনিজ বাঘ নামের আরও তিনটি উপপ্রজাতি ছিল, কিন্তু বর্তমানে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশ ও ভারতে দেখা যায়। এ ছাড়া নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও দক্ষিণ তিব্বতের কিছু অঞ্চলে এদের দেখতে পাওয়া যায়।

সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর ৬০ শতাংশ আমাদের দেশে আর বাকি ৪০ শতাংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে। গত ছয় বছরে দেশে বাঘের সংখ্যা ১১টি বেড়ে সুন্দরবনে বাঘ এখন ১২৫টি। বন বিভাগ সূত্রে, ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০ থেকে ৪০০টি। ২০০৪ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। ওই দুটি জরিপে বাঘের পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা গণনা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। ২০১৫ সালের জরিপ ছিল সর্বাধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। ওই জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬টি। ২০১৮ সালে বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টি। ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা ১১টি বেড়ে সুন্দরবনে বাঘ এখন ১২৫টি।

সুন্দরবনে চোরাশিকারি অবাধ বিচরণ ও বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। চোরাশিকারিদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বাঘ। তারা বাঘ শিকার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এতে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে।

বাংলাদেশে সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এই প্রাণী খুব সুন্দর এবং এর চামড়া খুব মূল্যবান। তাই চোরাশিকারিদের কারণে এই প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া, খাবারের অভাব এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এই প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাঘ বাঁচাতে না পারলে সুন্দরবন ও বনের সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব নয়।

বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরাশিকারিদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্যাট্রলিং চালু করা হয়েছে। বাঘের প্রজনন মৌসুম জুন থেকে আগস্ট সুন্দরবনের সব পাস পারমিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচল করতে পারবে। সরকার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়ে বাঘসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আর অন্যদিকে চোরাশিকারিদের আগ্রাসন ও কিছু অসাধু ব্যক্তি বনজ সম্পদ ধ্বংসের উৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন অবৈধ শিকার বন্ধ করা ও প্রাণীদের সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা।

প্রকাশ ঘোষ বিধান,পাইকগাছা, খুলনা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সড়কের মাঝখানে গাছ রেখেই ঢালাই সম্পন্ন 

বুটেক্স সাংবাদিক সমিতির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

টানা ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ জবির ভিসি

৬৪ জেলার নেতাকর্মীদের নতুন বার্তা দিল এনসিপি

ম্যানইউর জয়হীন ধারা অব্যাহত, এবার ফুলহামের মাঠে ড্র

ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা-পেশাজীবীদের নিয়ে ‘আগামীর পথ’ অনুষ্ঠিত

প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অনন্য কীর্তি

জুলাই যোদ্ধা শহীদ তানভীরের চাচা খুন

ভরা জোয়ারে ডুবে যায় বিদ্যালয়, শঙ্কায় অভিভাবক-শিক্ষার্থী

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন তৌহিদ আফ্রিদি

১০

তারের পর এবার চুরি হলো সেতুর রিফ্লেক্টর লাইট

১১

‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে : টিআইবি

১২

ভূমি অধিগ্রহণে আটকে আছে ইউলুপ, ইউটার্নে মরছে মানুষ!

১৩

কনে দেখতে যাওয়ার পথে নৌকাডুবি : নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার

১৪

থাইল্যান্ডের ক্লাবে আবার ভাইরাল ‘কাঁচা বাদাম গার্ল’ অঞ্জলি

১৫

চাকসুতে সমকামিতা সমর্থক ও মাদকাসক্তদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি

১৬

ঠাকুরগাঁওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১

১৭

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০ শয্যার এইচডিইউ উদ্বোধন

১৮

এবার তৌহিদ আফ্রিদি গ্রেপ্তার

১৯

রাকসুতে প্রথম দিনে ৫ জনের মনোনয়ন সংগ্রহ 

২০
X