বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূমিকা অপরিসীম। বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ঊনসত্তরে গণআন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঢাবির শিক্ষার্থীরা অসীম সাহস দেখিয়ে জাতিকে পথ নির্দেশ করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নানা সংকটে জাতিকে সঠিক রাস্তা দেখানোর কাজেও ঢাবির ভূমিকা অব্যাহত আছে। ১৯৯০ সালের তৎকালীন স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন আন্দোলনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে যে অগণতান্ত্রিক শাসন চেপে বসেছিল, তার অবসানেও এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান ভূমিকা রয়েছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই।
প্রতি বছরই ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার। এসব নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে—মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (ছাত্র ইউনিয়ন), মাহমুদুর রহমান মান্না (জাসদ, ছাত্রলীগ), আখতারুজ্জামান (বাসদ, ছাত্রলীগ), সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ (ছাত্রলীগ), আমানউল্লাহ আমান (ছাত্রদল), নুরুল হক নুর (সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ)। জিএস ছিলেন যথাক্রমে—মাহবুব জামান (ছাত্র ইউনিয়ন), আখতারুজ্জামান (বাসদ, ছাত্রলীগ), জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু (বাসদ, ছাত্রলীগ), মুশতাক হোসেন (জাসদ, ছাত্রলীগ), খায়রুল কবির খোকন (ছাত্রদল), গোলাম রব্বানী (ছাত্রলীগ)।
সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। গতকাল (মঙ্গলবার) ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন ধরেই মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় নির্বাচনের অধিকাংশ প্যানেল। প্যানেল ঘোষণা ঘিরে শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখর ছিল ঢাবি ক্যাম্পাস। এদিন প্যানেল ঘোষণায় চমক দেখায় বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠন, বিশেষ করে শীর্ষ পদগুলোয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে বিভিন্ন পদে ৪৪২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ নিয়ে ১২ আগস্ট থেকে সাত দিনে মোট ৫৬৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া ১৮টি হল সংসদ নির্বাচনে মোট ১ হাজার ২২৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, যা গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে ২৩৭ জন এবং ১৮টি হল সংসদের ১৩টি পদে ৫৯৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তপশিল অনুযায়ী, ২১ আগস্ট প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন ২৫ আগস্ট। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৬ আগস্ট। এবারের ডাকসু নির্বাচনে আটটি প্যানেলে এবং পৃথকভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্যানেল ঘোষণা করা না হলেও তাদের প্যানেলে চমক থাকছে। বিশেষ করে সিনিয়র একাধিক নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও ২০১৮-১৯ সেশনের দুই নেতা শীর্ষ তিন পদের দুটিতে থাকার আভাস পাওয়া গেছে। অন্য প্যানেলগুলোর প্রার্থীরা একসঙ্গে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও ছাত্রদল নেতারা আলাদা আলাদা মনোনয়নপত্র তোলেন। এমনকি মনোনয়নপত্রে পদও উল্লেখ করেননি তারা। ফলে ছাত্রদলের প্যানেল নিয়ে চমকের আভাস মিলছে।
আমাদের প্রত্যাশা, সব সংগঠনের সমন্বয়ে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং হাইব্রিড রাজনীতিক অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।
মন্তব্য করুন