কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

গণপিটুনি: শাস্তি নিশ্চিত করুন

গণপিটুনি: শাস্তি নিশ্চিত করুন

যে কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই মানবাধিকার লঙ্ঘন, যা কোনো বিবেচনায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার)-এর নামে বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড একের পর এক ঘটেই চলেছে। এটি নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগের। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এ প্রবণতা নিশ্চিতভাবেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা এবং অপরাধের সুষ্ঠু বিচারের অভাবকেই নির্দেশ করে।

সত্যিকারই কোনো অপরাধ অথবা অপরাধের অভিযোগকে কেন্দ্র করে কিংবা যে কোনো অজুহাত তুলে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এসব ঘটনা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে, যা অত্যন্ত ভীতিকর। এ বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে গণপিটুনিতে প্রাণ যায় ১২৮ জনের। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ১১৮ জনের। এর মধ্যে চলতি মাসেই নিহত হয় ১৫ জন। গত জানুয়ারিতে ১৬, ফেব্রুয়ারিতে ১১, মার্চে ২০, এপ্রিলে ১৮, মে মাসে ১৩, জুনে ১১ ও জুলাইয়ে ১৪ জন প্রাণ হারায় গণপিটুনিতে। সর্বশেষ গত রোববার ভোরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় বাড়িতে ডাকাতি করে পালানোর সময় ধরা পড়ে গণপিটুনিতে ডাকাত দলের এক সদস্য নিহত হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লায় তিনজন নিহত হয় গণপিটুনিতে। এমনও অভিযোগ উঠছে, বেশিরভাগ ঘটনাতেই নানা অপবাদ দিয়ে লোকজন আইন হাতে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেও গণপিটুনির ফাঁদ পাতা হয়ে থাকে। এমন ঘটনার অতিসাম্প্রতিক উদাহরণ রংপুরের তারাগঞ্জে রূপলাল ও প্রদীপ লাল নামের দুজনকে ভ্যানচোর অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা। পরে পুলিশ তদন্তে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, সেদিন ভ্যান চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং ওই দুজন চোর ছিলেন না। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে মব সৃষ্টি করে কারও বিরুদ্ধে সহিংসতা, ভাঙচুর বা মেরে ফেলার মতো ঘটনা যে ঘটতেই থাকবে—এ কথা বলা বাহুল্য।

আমরা মনে করি, মব জাস্টিসের নামে সংঘটিত সব অপরাধ সম্পূর্ণরূপে আইন পরিপন্থি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ অন্যায় বন্ধে কিংবা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে প্রত্যেকের সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কেউ অপরাধ করলে তাকে বিচারের জন্য দেশে আইন রয়েছে। সোপর্দ করা উচিত আইনের কাছে। বিনা বিচারে কাউকে হত্যার অধিকার কারও নেই। এতে করে সমাজে বিশৃঙ্খলাই বাড়ে। আর এ পরিস্থিতির সুযোগে অপরাধীরা হয়ে উঠতে পারে আরও বেপরোয়া। তাই মব, সহিংসতা বা কারও ওপর হামলে পড়ে গণপিটুনিকে না বলুন। পাশাপাশি স্মরণে রাখা জরুরি, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা ও বিচার হাতে তুলে নেওয়ার মতো অপরাধ প্রবণতা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফেরানোর বিকল্প নেই। তা করতে হলে অবশ্যই মব কিংবা গণপিটুনির ঘটনায় বিচারের কিছু শক্ত নজির হাজির করতে হবে রাষ্ট্রকেই। অর্থাৎ প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে যেন এসব অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার আগে ভাবতে বাধ্য হয় তারা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্পেনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেন হত্যা মামলার আসামি

সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ৬ সেপ্টেম্বর

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

১০

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

১১

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

১২

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

১৩

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

১৪

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

১৫

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

১৬

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

১৭

ডাকসু নির্বাচনে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন

১৮

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

১৯

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

২০
X