আজ ২৬ আগস্ট আন্তর্জাতিক নারী সমতা দিবস। এটি নারীর অধিকার এবং ভোটাধিকারের স্বীকৃতির জন্য উৎসর্গীকৃত একটি দিন। এ দিনটি নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করে তাদের সমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। আন্তর্জাতিক নারী সমতা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো—নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করা। নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠা করা। দিবসটি নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি ও নারী অধিকারের জন্য কাজ করার একটি সুযোগ এনে দেয়।
সমতা মানে হলো, সব ব্যক্তি বা দলের প্রতি সমান আচরণ করা এবং তাদের সুযোগ, অধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য না রাখা। সহজ কথায়, সমতা মানে সবার জন্য সমান সুযোগ এবং সবার প্রতি সমান আচরণ করা। সমান সুযোগের সমতা মানে হলো, প্রত্যেক ব্যক্তি বা দলের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সুযোগের ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করা। বৈষম্যহীনতার সমতা মানে হলো—জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ বা অন্য কোনো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য না করা। মর্যাদার সমতা মানে হলো, প্রতিটি মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। সমান আইনের সমতা মানে হলো, সমাজের সব মানুষের জন্য একই আইন ও নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া। বৈচিত্র্যের স্বীকৃতির সমতা মানে হলো, মানুষের মধ্যে পার্থক্যকে স্বীকার করা এবং তাদের প্রতি সম্মান জানানো। অন্তর্ভুক্তির সমতা মানে হলো, সমাজের সব মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের সবার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। শিক্ষা ক্ষেত্রে সমতা মানে হলো, প্রত্যেক শিশুকে সমান সুযোগ দেওয়া, যাতে তারা তাদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সমতা মানে হলো, প্রত্যেক মানুষের জন্য উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, যাতে তারা রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে পারে। সংক্ষেপে, সমতা হলো—একটি সমাজের মৌলিক উপাদান, যা সবার জন্য ন্যায়বিচার ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করে। নারী ও পুরুষ উভয়ই মানুষ, কিন্তু তারা জৈবিক এবং সামাজিক উভয়ভাবেই ভিন্ন।
অনেক সময় মনে করা হয়, সমতা মানেই নারীকে পুরুষের সমান করে ফেলা বা একইরকম কাজ করতে বাধ্য করা। আসলে, সমতা মানে হলো নারী ও পুরুষ উভয়ই যেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে সমান সুযোগ, অধিকার ও মর্যাদা পায়। মনে করা হয়, নারী ও পুরুষকে একইরকম হতে হবে বা একই কাজ করতে হবে। কিন্তু নারী ও পুরুষের শারীরিক ও মানসিক গঠন ভিন্ন, তাই তাদের কাজের ধরনও ভিন্ন হতে পারে। সমতা মানে হলো, তাদের কাজের সুযোগ এবং মূল্যায়ন সমান হবে। নারীর অধিকার মানে পুরুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া নয়। কিছু মানুষ মনে করেন, নারী অধিকারের কথা বললে পুরুষের অধিকার কমে যায়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। নারী ও পুরুষের অধিকার একটি সমাজের জন্য অপরিহার্য উভয়ের অধিকার নিশ্চিত করা হলে, সমাজ আরও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হবে। সমতা মানেই সবক্ষেত্রে নারীর প্রাধান্য নয়। অনেকে মনে করেন, সমতা মানেই নারীরা সবক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে। এটিও একটি ভুল ধারণা। নারীর ক্ষমতায়ন মানে এই নয় যে, পুরুষকে অবমূল্যায়ন করা হবে। বরং নারীর ক্ষমতায়ন মানে হলো, নারীরা যেন তাদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সমাজের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি তারাও অবদান রাখতে পারে।
নারী-পুরুষ সমতা নিয়ে কবি ও সাহিত্যিকদের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। কেউ নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন, কেউবা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উক্তি তুলে ধরা হলো—
কাজী নজরুল ইসলাম: বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। মানুষের মাঝে ভেদ নাই, সকল মানুষ ভাই। কেহ মারে কেহ মরে, সকলে সমান ভাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: ‘ওরা Sunshine! ওরা ঝর্ণাধারা:/ ওরা সূর্যের আলো, ওরা আকাশের তারা!’ এই উক্তির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ নারী সৌন্দর্যের পাশাপাশি তাদের কর্মশক্তি ও প্রকৃতির সঙ্গে নারীর যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পেতে পারো মানিকও খুঁজিতে। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন: নারীদের শিক্ষিত হতে হবে, আত্মনির্ভরশীল হতে হবে এবং সমাজের উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করতে হবে।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি অ্যালকোহল
মন্তব্য করুন