

গত দিনের পর
জিডিপির প্রবৃদ্ধি বা মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করতে অসংখ্য পরিসংখ্যানের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এগুলোর কোনোটিই ব্যক্তিগত তথ্য নয়; এগুলো অন্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। ব্যক্তিগত কোনো পরিসংখ্যান হলে আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখতে হয়। যেমন—সার্ভে বা জরিপ প্রকাশ করার সময় ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে যেন চেনা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু জিডিপি বা মূল্যস্ফীতির হিসাব তো আসে অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, যেখানে গোপনীয়তার কোনো অবকাশ নেই। কাজেই জিডিপি কীভাবে মাপা হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি বা মূল্যস্ফীতি কীভাবে প্রতি বছর হিসাব করা হচ্ছে, কোন বাজারের কোন জায়গা থেকে কোন সামগ্রীর দাম প্রতি সপ্তাহে নেওয়া হচ্ছে—এসবের মধ্যে গোপনীয় কিছু নেই। আমার সামনে সাংবাদিক রিজভী বসে আছেন; আমি তাকেই বলছি—আপনি যদি সন্দেহ করেন যে মূল্যস্ফীতি কম দেখানো হচ্ছে অথচ বাজারে দাম বেশি, তবে বিবিএসে যান। আমি এখনই বিষয়টিকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আপনারা যাচাই করুন—আলু বা পেঁয়াজের দাম ঠিক কোন কোন বাজার থেকে নেওয়া হয়েছে। যদি মনে হয় সেটা বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না, তাহলে প্রশ্ন তুলুন যে এটা ঠিক হয়নি। এ স্বচ্ছতাটাই সবচেয়ে বেশি দরকার।
এ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়তো এখন একটু কঠিন, তবে বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানকেই ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। বিবিএসকেও সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। একবার ডিজিটালাইজড হয়ে গেলে এ তথ্যের প্যাকেজগুলো যে কোনো গবেষক বা সাংবাদিক চাইলেই নিতে পারবেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারবেন। এতে সুবিধা হবে এই যে, গবেষকরা পরামর্শ দিতে পারবেন—‘এই পরিমাপের ক্ষেত্রে এর চেয়ে ভালো একটি পরিসংখ্যানের উৎস ছিল, সেটি ব্যবহার করলে ফল আরও নির্ভুল হতো।’ ফলে বিবিএসের তথ্যভান্ডার আরও সমৃদ্ধ হবে।
সংস্কারের এ বিষয়গুলো বললাম, যাকে প্রাতিষ্ঠানিক বা আমলাতান্ত্রিক সংস্কার বলা যায়। কিন্তু বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে যে, অবৈধ আয় বা ‘রেন্ট সিকিং’ কমাতে গেলে তা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, যদি অবৈধ আয়ের উপার্জনের একটি রাজনৈতিক চাহিদা থাকে, তবে শুধু নতুন আইন বা বিধিবিধান দিয়ে তা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায় না। আমি যদি আয়ের একটি অবৈধ উৎস বন্ধ করে দিই, তবে অন্য আরেকটি উৎস খুঁজে বের করা হবে। অতীতে আমরা ঠিক এমনটাই ঘটতে দেখেছি।
যে কোনো রাষ্ট্র শাসনব্যবস্থাতেই উন্নয়নের অভিজ্ঞতার দিকে তাকালে দেখা যায় যে, সফল ও ব্যর্থ—উভয় ধরনের উন্নয়নের দৃষ্টান্তই রয়েছে। সেই রাষ্ট্রব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হোক, একনায়কতান্ত্রিক হোক, স্বৈরশাসন হোক, কিংবা মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দীর্ঘদিনের একদলীয় প্রাধান্যের শাসন হোক—সব ধরনের শাসনব্যবস্থাতেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভালো হতে পারে। শুধু গণতন্ত্রই যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক, বিষয়টি তা নয়। বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে আমরা বুঝি—দুই-তিন দশক ধরে ক্রমাগতভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে থাকা। যেমনটা দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর এবং ইস্ট এশিয়ান মিরাকল ইকোনমিগুলোতে হয়েছিল। বর্তমানে চীনে যা হচ্ছে, ভিয়েতনামে কিছুটা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে এবং মালয়েশিয়ায় অনেক আগেই সেই উত্তরণ ঘটেছে।
এসব দেশের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আমি আমার বইতে প্রথম উল্লেখ করেছিলাম। সেই সাধারণ বৈশিষ্ট্যটি হলো ‘অ্যাকাউন্টেবিলিটি মেকানিজম ইন দ্য গভর্নেন্স সিস্টেম’ বা শাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহির কাঠামো। প্রশাসন যন্ত্রের সকল পর্যায়ে একটি শক্ত জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে। একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জবাবদিহির বিষয়টি তো আমরা জানিই—সেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ওয়াচডগ প্রতিষ্ঠান এবং নির্বাচিত সংসদ জবাবদিহি নিশ্চিত করে। কিন্তু আমরা অনেক সময় যা লক্ষ করি না তা হলো—চীনে ১৯৮০-এর দশকে যখন বাজারমুখী সংস্কার শুরু হলো, তখন সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির একদলীয় শাসন থাকা সত্ত্বেও দলের ভেতরেই একটি বড় ধরনের সংস্কার করা হয়েছিল। সেটি হলো—প্রত্যেকটি স্তরে যারা অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের সময়ভিত্তিক ও ফলাফলভিত্তিক প্রতিটি নীতির সফলতা নিয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করা। নিয়মটা ছিল এমন—তুমি নীতি নির্ধারণ করো, সফল হও, তাহলে ভালো ফল পাবে; আর বিফল হলে চাকরিচ্যুত হবে। ভিয়েতনামেও ১৯৯০-এর দশকে যখন বাজার অর্থনীতি নীতি চালু হলো, তখন তারাও তাদের কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরে এ ধরনের সংস্কার এনেছিল।
এ প্রসঙ্গে আমি এটাও বলব যে, একটি দেশের আচরণবিধি, মূল্যবোধ এবং একে অন্যের প্রতি আস্থা ও সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে উদারীকরণ কতদূর সফল হবে। ভিয়েতনামের বিষয়টি এ ক্ষেত্রে খুবই আশ্চর্যজনক। যখন তারা প্রথম বাজার অর্থনীতির উদারীকরণ করে, তখন তারা ভাবেনি যে এর জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো লাগবে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বা একচেটিয়া ব্যবসা থামানোর জন্য আইন করতে হবে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভিয়েতনামের ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা নিজেরাই একত্রে বসে ঠিক করলেন যে, তারা কীভাবে নিয়মের ভেতর চলবেন। তারা স্থির করলেন যে, কেউ একে অন্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় যাবেন না, মূল্যহার প্রতিযোগিতামূলক রাখবেন এবং ঋণ নিলে তা ফেরত দেবেন। এটি সম্পূর্ণই একটি সাংস্কৃতিক বিষয়।
আমি যখন এ জবাবদিহি বা ‘অ্যাকাউন্টেবিলিটি’ নিয়ে কথা বলেছিলাম—অনেকের হয়তো মনে আছে, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও আমি বলেছিলাম যে, সফল দেশে সব স্তরের প্রশাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিই মূল বিষয়। তখন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন একটি বিষয় যোগ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জবাবদিহিই সব নয়, এর সঙ্গে দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। জবাবদিহি বা অ্যাকাউন্টেবিলিটি হলো একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা। আর দায়িত্ববোধ বা ‘সেন্স অব রেসপনসিবিলিটি’ হলো একটি নৈতিক আচরণের বিষয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগের কালের একজন মফস্বলের এলএমএফ পাস করা ডাক্তার—তিনি ঠিক সময়ে অফিসে আসছেন কি না বা রোগী দেখছেন কি না, সেটা হলো তার জবাবদিহি। কিন্তু তিনি যখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীদের খোঁজ নেন, কোনো গরিব রোগী খুব অসুস্থ হলে তাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন—সেটা তো জবাবদিহি নয়, সেটা হলো দায়িত্ববোধ। প্রাইমারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তাই। এখনকার অনেক প্রাইমারি শিক্ষক ছাত্রদের জিম্মি করে পরীক্ষা বন্ধ রেখে স্ট্রাইকে যাচ্ছেন। অথচ আমার ছোটবেলায় প্রাথমিক শিক্ষকরা আমার বাসায় এসে খোঁজ নিতেন যে, আমার অঙ্কে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না বা ইংরেজিতে কোনো অসুবিধা আছে কি না। এটাই হলো দায়িত্ববোধ।
আমি তৃতীয় যে বিষয়টি বলেছিলাম—গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাজার অর্থনীতিতে কীভাবে একটি ন্যায্য সমাজ এবং বৈষম্য নিরোধক উন্নয়ন সম্ভব হবে? বর্তমানে আমরা জুলাই সনদ বা ঐকমত্য কমিশন নিয়ে যেসব আলোচনা করছি, সেখানে এ বিষয়গুলো নেই। এটা স্বাভাবিক, কারণ এ বিষয়ে ঐকমত্য হওয়া সম্ভব নয়। এখানে নীতিনির্ধারণের অনেক বিষয় আছে। এখানেই বাম, ডান, মধ্য-ডান বা মধ্য-বাম—এ ধরনের আদর্শগত দলের পার্থক্য তৈরি হয়। তাই নীতির ব্যাপারে এখানে ঐকমত্য হবে না এবং সে কারণেই এটি এখন আলোচিত হচ্ছে না। তবে আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এবার আসা যাক ‘ন্যায্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা’ ঠিক কী, সেই আলোচনায়। আসলে এখানে ন্যায্যতার সংজ্ঞাটি পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। শুধু ‘ন্যায্য অর্থনীতি’ বা ‘বৈষম্যহীন অর্থনীতি’ বললেই বিষয়টি স্পষ্ট হয় না। কী ধরনের বৈষম্যহীনতা? এর সংজ্ঞা নিয়ে দার্শনিকরাও দীর্ঘ চিন্তাভাবনা করেও কোনো একক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
সামাজিক সুরক্ষার কর্মসূচিগুলোর প্রয়োজনীয় অর্থায়ন কীভাবে হবে? শুধু সুরক্ষা দেব বা দারিদ্র্য কমে যাবে বললেই তো হবে না। এ সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সরকারের যে আয়ের প্রয়োজন, তা কোথা থেকে আসবে বা কী করনীতির মাধ্যমে আসবে? আয় পুনর্বণ্টন করতে হলে কর ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত? বাজার ও রাষ্ট্রের সম্পর্কইবা কী-রকম হবে, যাতে একচেটিয়া ব্যবসা তৈরি না হয় এবং মুনাফাতাড়িত ব্যবসাকে সামাজিক কল্যাণের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা যায়? উদ্যোক্তাদের জন্য সমান সুযোগ কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে? কয়েকজন বড় বড় শিল্পপতি যেন পুরো নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়াকে কুক্ষিগত করতে না পারেন, তার ব্যবস্থা কী হবে? সমাজের সুবিধাবঞ্চিত বিভিন্ন গোষ্ঠীকে কীভাবে ক্ষমতায়িত করা যাবে?
এ ছাড়া পরিবেশের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ কীভাবে রক্ষিত হবে—আমাদের মতো দেশে এটিও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আমরা যখন কোনো ‘কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস’ (ব্যয়-সুবিধা বিশ্লেষণ) করি, তখন একটি ‘ডিসকাউন্ট রেট’ ধরি এবং সাধারণত ৩০ বছরের মেয়াদে সেই হিসাব করি। আজকের ১০ টাকার ক্ষতি এবং ৩০ বছর পরের ১০ টাকার ক্ষতিকে আমরা এক করে দেখি না; ভবিষ্যতের ক্ষতিকে আমরা অনেক কম গুরুত্ব দিই। আমার জীবদ্দশায় বা একটি প্রজন্মের জীবদ্দশায় আমি ভবিষ্যৎকে কম গুরুত্ব দিতেই পারি। কিন্তু আমরা যখন পরিবেশ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করছি, তখন আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবছি। পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থকে ‘ডিসকাউন্ট’ করার বা খাটো করে দেখার নৈতিক অধিকার আমাকে কে দিল? আমার কাছে যদি পরিবেশের ক্ষতি ১০ টাকা হয়, তবে আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কেন তা ১০ টাকার চেয়ে কম হবে? এটি অর্থনীতিবিদদের কাছেও একটি বিরাট প্রশ্ন, যার সমাধান এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। যদিও এ বিষয়ে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন গবেষক উত্তর দিয়েছেন, কিন্তু তিনি যে উত্তর দিয়েছিলেন, তা পরিবেশবাদীরা গ্রহণ করেননি।
আমার বই দুটোতে মূলত এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হলো, এগুলো নিয়ে বিশদ কথা বলার সময়ও এখন নেই। তা ছাড়া এ বইগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে আমার দল-নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হতে পারে এবং আমার আদর্শগত অবস্থান প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। বর্তমান সময়ে ‘ট্যাগিং’ বা তকমা দেওয়ার যে প্রবণতা চলছে, তাতে বিষয়টি বেশ বিপজ্জনক।
তবে আমি দুটি সাধারণ বা মৌলিক প্রতিপাদ্য দিয়ে শেষ করতে চাই, যা আমার সহকর্মী গবেষকদের চিন্তার খোরাক জোগাবে বলে আশা করি: এক. কোনো দেশই এত দরিদ্র নয় যে, তার সব নাগরিকের ন্যূনতম জীবিকা ধারণের চাহিদা মেটাতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন শুধু উপযুক্ত অর্থনৈতিক কাঠামো ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দুই. লর্ড মেইনার্ড কেইনস সুশাসনের একটি সংজ্ঞা দিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক অনেক পরে এসে আমাদের সুশাসন শেখাতে গেছে, কিন্তু তার বহু আগে ১৯৩০-এর দশকে কেইনস বলেছিলেন—সুশাসন হলো সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থের সমন্বয় বা ভারসাম্য রক্ষা করা। এর থেকে একটি অনুসিদ্ধান্ত টানা যেতে পারে। যদিও অর্থনীতিবিদরা আয় বণ্টনের অনেক বিকল্প তত্ত্ব দিয়ে থাকেন—যাকে নিও-ক্ল্যাসিকাল, কেইনসিয়ান বা ক্যালেস্কিয়ান তত্ত্ব বলা হয়—কিন্তু শেষ পর্যন্ত আয় বণ্টন কীভাবে নির্ধারিত হবে, তা হয়তো নির্ভর করে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর। এটি আমার কথা নয়; ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি বলেছেন। যিনি ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ লিখেছেন। পিকেটি বলেছিলেন, পুঁজিবাদী অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবণতাই হলো বৈষম্য বাড়িয়ে দেওয়া। ২০১৫ সালের দিকে প্রকাশিত তার ‘দ্য ইকোনমিকস অব ইনইকুয়ালিটি’ বইয়ে তিনি বিভিন্ন পাশ্চাত্য দেশের ঐতিহাসিক পরিসংখ্যান দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, আয় বণ্টনের যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে, তার সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর উত্থানের সম্পর্ক অত্যন্ত জোরালো। (সমাপ্ত)
লেখক: অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা। (৭ ডিসেম্বর বিআইডিএসের বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণের ভিত্তিতে প্রণীত। অনুলিখন: মুজাহিদুল ইসলাম)
মন্তব্য করুন