

গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের ৫৪ বছর অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। যুগে যুগে রক্তচোষা শাসকরা স্বর্ণভূমির এ জনগণকে শোষণ করেছে ব্রিটিশ শাসন থেকে পাকিস্তানি শাসন; ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লোভ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতাসম্পন্ন দমনপীড়ন নীতির কাহিনি সবই ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। কিন্তু ক্ষমতার মোহে যারা অন্যায়ভাবে শোষণ করেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, তাদের অনিবার্য পতন ইতিহাসের স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা কখনো নিঃসৃত হয় না; সেটাই মুক্তিযুদ্ধের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিফলন। পাকিস্তানি শাসকরা হয়তো কল্পনাও করেননি তাদের পতন অবধারিত হবে। আমাদের সার্থকতা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী জয়ের কাহিনি, যেখানে বাঙালি বীরেরা অস্ত্রসজ্জিত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে গৌরবময় বিজয় লাভ করেছিলেন।
মাতৃসম এই সবুজ, শ্যামলা জন্মভূমি ধীরে ধীরে বিজয়ের গৌরবময় হীরক জয়ন্তী ও শতবর্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ পথচলার সবকিছু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করা আছে, থাকবে। পরিবর্তনের এ ধারাগুলো বেশ কিছু স্বচক্ষে অবলোকন করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তাই কঠিন বাস্তবতা হলো, সুবর্ণজয়ন্তীর কঠিন পথচলায় এরই মধ্যে বাংলাদেশ নানাবিধ চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। মাতৃভূমির আগামীর পথচলা আরও মসৃণ হবে, এটা কোটি কোটি দেশপ্রেমী জনগণের মনের সুপ্ত বাসনা, যা আমাকেও সঞ্চালিত করে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে বহুদিন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে অপমান করা হয়েছিল। দুর্ভিক্ষ, অনটন ও সম্পদের অব্যবস্থাপনা আমাদের পথকে দীর্ঘদিন বাধাগ্রস্ত করেছিল। তবু অর্ধশতাব্দীর সামান্য সময়েই সেই বাংলাদেশহ বিশ্ব দরবারে উঠে এসেছে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে। অবকাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষণীয়; জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। স্বাস্থ্য খাতে বড় সাফল্য মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাস এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অভাবনীয় অগ্রগতি। এগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের পরিচয় পরিবর্তন করেছে। একই সঙ্গে অসংক্রামক রোগ ও জীবনযাত্রার অসুস্থ প্রবণতা নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে; সঠিক নীতি ও উৎসর্গী বাস্তবায়নের মাধ্যমে এগুলোও জয় করা সম্ভব।
বাংলাদেশের এতসব অর্জনের মূল শক্তি হলো জনসাধারণ কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রবাসী, ব্যবসায়ী এবং প্রতিটি স্তরের পেশাজীবী। তাদের অক্লান্ত শ্রম, ত্যাগ ও ভালোবাসাই দেশের ভিত্তিকে মজবুত করেছে। যে রাষ্ট্র জনকল্যাণকে কেন্দ্র করে নীতি গ্রহণ করে, সেই রাষ্ট্রই স্থায়ী উন্নয়নে পৌঁছতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও কল্যাণকে প্রাধান্য দিলে বাংলাদেশ আরও উচ্চতর সাফল্য অর্জন করবে। মানুষই হবে দেশের মূল শক্তি ও উন্নতির মেরুদণ্ড।
পৃথিবীতে প্রায় সব উন্নত ও সভ্য জাতির সাফল্যের বড় পাথেয় হচ্ছে জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ। জনগণই সবকিছুতে মুখ্য, গৌণ নয়। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সেসব রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সদা তৎপর। এজন্যই তারা সফলতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারে।
গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপান মাদকের নাটের গুরু।
মহান মুক্তিযদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি সেক্টর হিসেবে কাজ করেছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে দেশাত্মবোধক গান ও নিয়মিত সংবাদ পরিবেশন এবং নাটক কনিকা ও চরমপত্র পাঠ অনুষ্ঠানগুলো ছিল অধিক জনপ্রিয়। এসব অনুষ্ঠান শুনে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ আশার আলো দেখতে পেত, বিশ্বাস জন্মাত যে, বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হবে। তাই স্বাধীন বাংলা বেতারের সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের বলা হয়—শব্দসৈনিক। এই শব্দসৈনিকরা মুক্তিযুদ্ধে হাতে হাতে অস্ত্র নিতে পারেনি, কিন্তু তারা কণ্ঠ আর লেখনী দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
লেখক: অধ্যাপক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা (একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দসৈনিক)
মন্তব্য করুন