

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাদিকে সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, হাদির ওপর হামলায় জড়িত দুই সন্দেহভাজন ফয়সল করিম ও আলমগীর শেখ ঢাকা থেকে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তে যেতে পাঁচ দফা যানবাহন বদলান। তারা মোটরসাইকেলের ‘নম্বর প্লেট’ বদলে ভুয়া নম্বর প্লেট লাগিয়ে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ফেলে দিয়েছিলেন মুঠোফোন ও সিম।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থানায় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ জাবের বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ফয়সলসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, ফয়সল নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। আলমগীর যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে হাদি ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে আসছিলেন। এর জেরে তাকে একাধিকবার প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় তাকে।
মামলাটির তদন্ত করছে ডিবির মতিঝিল বিভাগ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাচেষ্টায় সরাসরি অংশ নেন ফয়সল ও আলমগীর শেখ। তবে নেপথ্যে কারা ছিলেন, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদের সহযোগী মো. কবিরকে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। র্যাবের ভাষ্যমতে, কবির ঘটনার কয়েক দিন আগে মাসুদ করিমের সঙ্গে বাংলামটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হামলার আগের রাতে ১১ ডিসেম্বর সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টে ছিলেন ফয়সল ও আলমগীর। রাত ২টার দিকে ফয়সলের বান্ধবী মারিয়া তার ছোট বোনকে নিয়ে সেখানে যান। তারা একসঙ্গে গল্প করেন।
১২ ডিসেম্বর সকালে সাভার থেকে একটি মোটরসাইকেলে ফয়সল ও আলমগীর ঢাকায় আসেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। সূত্র আরও বলছে, এরপর তারা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফয়সলের বোনের বাসায় গিয়ে গ্যারেজে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করেন। সেখানে অবস্থানের পর অটোরিকশা নিয়ে যান আমিন বাজার।
অটোরিকশা চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সূত্র বলছে, চালক জানিয়েছেন আমিনবাজারে ফয়সল ও আলমগীরের জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন এক তরুণী।
সূত্রের দাবি, আমিনবাজারে ফয়সল ও আলমগীর মুঠোফোন ও সিম ফেলে দেন। পরে আমিনবাজার থেকে কালামপুর হয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে ময়মনসিংহে যান ফয়সল ও আলমগীর। ময়মনসিংহে একটি সেতু এলাকা থেকে আরেকটি গাড়ি নিয়ে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে যাত্রা করেন তারা। প্রাইভেটকারটি হালুয়াঘাটের ধারাবাজারের একটি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে থামে। সেখান থেকে তিনজন যুবক এসে তাদের দুজনকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে হালুয়াঘাটের ভুটিয়াপাড়ায় নিয়ে যান। রাত আড়াইটার ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা ভারতে ঢুকে পড়েন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবর্তন করা নম্বর প্লেট ও আসল নম্বর প্লেট উদ্ধার করা হয়েছে। এখন মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিককে খুঁজছে পুলিশ।
মোটরসাইকেল মালিক সন্দেহে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আবদুল হান্নান আদালতে বলেন, তাকে মোটরসাইকেলের বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেলেই সব সত্য বেরিয়ে আসবে।
তথ্যসূত্র- প্রথম আলো
মন্তব্য করুন