কেউ যদি সত্যি সত্যি বিএনপির জন্মকাল নিয়ে কথা বলতে যায়, তাহলে হোঁচট খেতেই হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ আশির দশকের শেষের দিকে ‘সাপ্তাহিক বিক্রম’ নামে একটি পত্রিকায় বিএনপির জন্মকালের রসায়ন নিয়ে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। ঢাকার ডিআইটি এক্সটেনশন রোড থেকে বের হতো ‘সাপ্তাহিক বিক্রম’। হোটেল বকশির পেছনের বিল্ডিংয়ের চারতলায় ছিল এর অফিস। ১৯৮৭ সালে শুরু হয় পত্রিকাটির পথচলা। প্রকাশক ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা আনোয়ার, সম্পাদক মাসুদ মজুমদার। এতে নিয়মিত লিখতেন কবি আল মাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান, কবি আবদুস সাত্তার, আ কা ফিরোজ আহমদ, আহমদ আবদুল কাদের, সৈয়দ মবনুসহ অনেক সাংবাদিক। আল মাহমুদের ‘কবির আত্মবিশ্বাস’ গ্রন্থটি মূলত বিক্রমে প্রকাশিত কলামেরই সংকলিত রূপ।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ সেই পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘বিএনপির জন্ম কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য নিয়ে নয়। এই দল মূলত অবসরপ্রাপ্ত সামরিক, অবসরপ্রাপ্ত বেসামরিক আমলা, দলছুটদের নিয়ে গঠিত হয়েছে।’ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু পরিষদের কয়েকটি অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন। প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, দীর্ঘদিন আপনি বিএনপির গঠনতন্ত্র পড়েননি এবং আপনার মনোনীত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের অধিকাংশও পড়েনি। আপনার স্থায়ী কমিটির নেতাদের উচিত ছিল আপনাকে অযথা তেল না দিয়ে, গঠনতন্ত্রের নির্ধারিত বিষয়গুলো আপনার সামনে তুলে ধরা এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দেওয়া।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেছিলেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে খালেদা জিয়ার প্রধান উপদেষ্টা করলে বিএনপি লাভবান হবে এবং দেশবাসীর প্রশংসা পাবেন। ডা. চৌধুরীর আরেকটি পরামর্শ ছিল বিএনপিতে বিশিষ্টজনের কো-অপ্ট করা। ডা. জাফরুল্লাহ লিখেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিষয় বিশেষত ভারতীয় আগ্রাসন, অনুপ্রবেশ, একাধিক ট্রানজিট ও বাংলাদেশের সঙ্গে সিকিম, ভুটানতুল্য ব্যবহার পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধ বিষয়ে দলের (বিএনপি) সদস্য নয়, অথচ বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী, যোগ্যতাসম্পন্ন ও সুদক্ষ ব্যক্তিদের কো-অপ্ট করার বিধান আছে। এসব বিষয়ে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ফেরদৌস আজিম, ভিসি পারভীন হাসান, নারী পক্ষের শিরীন হক, সুজনের বদিউল আলম মজুমদার, হাফিজ উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আইনুন নিশাত, অধ্যাপক (ড.) এম আর খান, বারডেমের ডা. এ কে আজাদ খান, আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞ ড. এস এ খান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, বিআইডিএসের বিনায়ক সেন, প্রাক্তন আমলা আলী ইমাম মজুমদার, সাদত হোসেন, শওকত আলী, আলী আকবর খানসহ বিশিষ্টজনকে কমিটিসমূহে কো-অপ্ট করলে কমিটির কাজের গুরুত্ব বাড়বে এবং বিএনপি জ্ঞানসমৃদ্ধ হবে ও ভবিষ্যতে দেশ শাসনে আপনার (বিএনপির) সুবিধা হবে।’
পাঠক খেয়াল করে দেখেন, ডা. চৌধুরীও জানতেন বিএনপির নিজস্বত্ব বলতে কিছু নেই। এখান থেকে একটু, ওখান থেকে একটু নিয়ে সবসময় বিএনপি চলেছে, চলছে এবং চলবে। পাঠকদের যাদের আগ্রহ আছে তারা জি ডাবলু চৌধুরীর লেখা ‘দ্য লাস্ট ডেইস অব ইউনাইটেড পাকিস্তান’ (The last days of united Pakistan: pakistan Oxford press) পড়ে দেখতে পারেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেই জি ডাবলু চৌধুরীর উত্তরসূরিদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন আবার বিএনপির মোহনায় একত্রিত করার জন্য। ‘The plan to transfer power to the elected representatives of the people after twelve years of dictatorship was a dismal failure, resulting in the tragic civil war of 1971 and the break-up of Pakistan.’ ড. হুমায়ুন আজাদ তার ‘প্রবচন’ গুচ্ছে লিখেছিলেন, ‘যারা ১৯৭১ সালের বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে ‘The tragic civil war of 1971’ হিসেবে তাদেরই আবার বিএনপিতে একত্রিত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। চুয়াত্তরের বিবেক সাতাত্তরে সামরিক শাসকদের সেবাদাসে পরিণত হয়। বিএনপির মূল শক্তি হচ্ছে সেই সব বিবেকরা। যাদের আবার একত্রিত করার প্রয়াস আমরা প্রায় ১৫ বছর ধরে বারবার দেখেছি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিএনপির অবস্থান বরাবরই এক রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি নিয়ে তাদের সবসময়ই পথচলা। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ কোলাবরেটরস স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল অর্ডার’ জারি করে। একই বছরে এই আইন দুই দফা সংশোধন করা হয়। এই সংশোধনীতেও চার ধরনের অপরাধীকে ক্ষমা করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে নেই, তাদের ক্ষমা করা হয়। কিন্তু যারা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যা—এই চারটি অপরাধ করেছে, তাদের ক্ষমা করা হয়নি। ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৭ হাজার ৪৭১ জনকে দালাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৮১৮টি মামলার সিদ্ধান্ত হয়। এতে একজনের মৃত্যুদণ্ডসহ ৭৫২ জন দালাল দণ্ডিত হয়। মুজিব সরকার আইনগত ব্যবস্থা ত্বরিত করার জন্য ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ১১ হাজার জনকে আটক করা হয়। উপরন্তু বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট’ জারি করে, যা পরবর্তী সময়ে আইন হিসেবে সংবিধানে সংযোজিত হয় এবং এখন পর্যন্ত তা বহাল রয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৮ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধানের ১২ ও ৩৮ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সংবিধানের ৬৬ ও ১২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীদের ভোটাধিকার ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার বাতিল করা হয়েছিল। এখানে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে সিঙ্গাপুরের জাতিরাষ্ট্রের পিতা লি কুয়ান ইউর সাক্ষাৎকারের কথা। সেই লি কুয়ান ইউকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘আপনি এত দরিদ্র রাষ্ট্রকে কীভাবে এত ধনী রাষ্ট্রে পরিণত করলেন?’ লি কুয়ান ইউর উত্তর ছিল এমন, ‘সিঙ্গাপুরের যেসব মানুষ জাপানিদের হয়ে দালালি করেছে তাদের আমি নাগরিক অধিকার দিইনি; তাদের ভোটাধিকারও দিইনি। শুধু এ কারণেই সিঙ্গাপুর দ্রুত উন্নতি লাভ করেছে।’ সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লি কুয়ান মালয়েশিয়ার কাছ থেকে দেশের স্বাধীনতার পর ১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করেন। প্রায় তিন দশক রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। তাকে ‘সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ ছাড়া তার নেতৃত্বে এক প্রজন্মের মধ্যেই দেশটি তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের দেশে রূপান্তরিত হয়। বিএনপির বুদ্ধিজীবীরা কেউ কি বলতে পারবেন বিএনপি কখনোই ‘বাংলাদেশ বোধে’ পরিচালিত হয়েছে। এত বছর পরও এই দলটি জন্মকালীন অবস্থান থেকে সামান্য পরিবর্তন করার আগ্রহ দেখিয়েছে। মোটেই না, তাহলে কি বিএনপি রাষ্ট্রনীতির কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান আছে?
দুই.
সদ্য সমাপ্ত জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সমুদ্রনীতি নিয়ে অঙ্গীকারের কথা স্পষ্ট করে ব্যক্ত করেছেন। জাতিসংঘের বঙ্গোপসাগরে দেশের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মূল ভূখণ্ডের পাশাপাশি মহীসোপানে তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন করার জন্য বিভিন্ন তেল উত্তোলনকারী দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের আগে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সংবিধানের ১৪৩ নম্বর অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রসীমা- সংক্রান্ত ‘Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974’ জারি করে। এই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার আঞ্চলিক বা উপকূলীয় সমুদ্র অঞ্চল, সন্নিহিত বা সংলগ্ন সমুদ্র অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, সংরক্ষিত এলাকা, মহীসোপান বিষয়ে বাংলাদেশের আইনগত কর্তৃত্বের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ সরকারের এককভাবে সমুদ্রসীমা আইন ঘোষণা এবং তেল অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার নভেম্বর, ১৯৭৪ প্রতিবাদ করে। বিভিন্ন পর্যায়ে ছয় দফা বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর ওপর ন্যস্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের কারণে সমুদ্রসীমা নিয়ে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহের সম্ভাব্য সভা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। আমার লেখার আরেকটি অংশে উল্লেখ করেছিলাম, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ না নিলে বাংলাদেশ কোনোদিনই বঙ্গোপসাগরে মহীসোপানের দাবি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে পারত না। কিন্তু এটা স্পষ্ট হয়ে যায়, বঙ্গবন্ধুর সমুদ্রনীতি না হলে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্বে এসে আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষতার সঙ্গে মামলা পরিচালনা না করলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হতো। এ ব্যাপারে বিএনপির ছিল সীমাহীন ব্যর্থতা।
তিন.
বঙ্গবন্ধু বাঙালির জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যে বঙ্গবন্ধুকন্যা বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসে পার্বত্য শান্তিচুক্তি করেছেন। তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই চুক্তি মানেন না। এ চুক্তির ফলে দেশের এক-দশমাংশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। ক্ষমতায় গেলে এ শান্তিচুক্তি বাতিল করার কথা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পাহাড়ে কোনো শান্তি ছিল না। দেশের সমতলের মানুষও পাহাড়ে যেতে পারত না। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে এসেছে। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের ফলে সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কাঠামোতে বিশ্বাস করতেন। সে ক্ষেত্রে উদারতা দিয়ে অতীতের ব্যর্থতা উত্তরণে ভূমিকা রেখেছেন। যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজা ত্রিদিব রায়ের ওপর নাখোশ ছিলেন। কিন্তু তিনি তার ওপর প্রতিশোধ নেননি। ত্রিদিব রায়ের ছোট ভাই কুমার সমিত রায়কে তিনি রাঙামাটি সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের আদেশ দেন। ত্রিদিব রায়ের পরিবার তখন অর্থকষ্টে ছিল। ত্রিদিব রায়ের বড় ছেলে দেবাশীষ রায়কে চিফ করার সিদ্ধান্ত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মালেক উকিল ১৯৭৩ সালের ৩০ এপ্রিল রাঙামাটি সফরে যান। সেদিন বিকেলে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুদীপ্তা দেওয়ানকে নিয়ে তিনি রাজবাড়ী যান। সেখানে ত্রিদিব রায়ের ভাই সমিত রায় ও নন্দিত রায়, ত্রিদিব রায়ের স্ত্রী আরতি রায়, কাকা কুমার কোকনদাক্ষ রায়সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মালেক উকিল তাদের সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, যে কিশোর দেবাশীষ রায় সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তার কাকা সমিত রায় রাজকার্য পরিচালনা করবেন এবং তাকে সাহায্য করবেন দেবাশীষের মা আরতি রায় ও কোকনদাক্ষ রায়। দেবাশীষ রায় তখন রাঙামাটি সরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। ১৯৭৩ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো এবং ভারত প্রতিবছর বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া শুরু করে। ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন এই বৃত্তি পান। তারা হলেন—
১. মিস ঝর্না চাকমা, পোল্যান্ড, মেডিকেল
২. মিস শুক্লা দেওয়ান, পূর্ব জার্মানি, নার্সিং
৩. চিত্তরঞ্জন চাকমা, হাঙ্গেরি, ইঞ্জিনিয়ারিং
৪. ইন্দ্ররাজ চাকমা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং
৫. চা থোয়াই চৌধুরী, সোভিয়েত ইউনিয়ন, অটোমোবাইল
৬. মনি স্বপন দেওয়ান, ভারত, কৃষিবিজ্ঞান
৭. সুবীর দেওয়ান, ভারত, কৃষিবিজ্ঞান
৮. ডা. অরুণ জ্যোতি চাকমা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা।
উচ্চশিক্ষা সহজ করার জন্য সংসদ সদস্য সুদীপ্তা দেওয়ানের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে উপজাতীয়দের জন্য চট্টগ্রাম ও ঢাকায় একটি করে পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দের আদেশ দেন, যাতে তারা হোস্টেলে জায়গা না পেলেও ওইসব বাড়িতে থাকতে পারে। [সূত্র : পার্বত্য চট্টগ্রাম/শান্তি বাহিনী জিয়া হত্যা মনজুর খুন : লেখক মহিউদ্দিন আহমদ, প্রথমা প্রকাশন, ২০২২]
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মন্তব্য করুন