

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলামের দ্রুত অপসারণ দাবি করেছেন দলটির অন্য নেতাকর্মীরা। অন্যথায় তারা নিজেরাই পদত্যাগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরীর সিএন্ডবি মোড়ে অবস্থিত জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন থেকে এ হুশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম সাজু।
দলটির রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সাইফুল ইসলামকে নেতা না বানানো এবং তার অপসারণ চেয়ে কেন্দ্রে বেশ কয়েকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও তাকে রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি স্বৈরাচারের দোসর। শুধু তাই নয়; জুলাই আন্দোলনে রাজশাহীতে ছাত্রজনতার উপর দুই হাতে গুলি চালানো যুবলীগ ক্যাডার রুবেল তার অন্যতম সহযোগী। সুতরাং এ কালো শক্তির নেতৃত্বে রাজশাহীর এনসিপি চলতে পারে না। এজন্য আমরা তার দ্রুত অপসারণ চাচ্ছি। আমরা তার বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। অন্যথায় আমরা নিজেরাই পদত্যাগ করব।’
এ সময় তিনি বলেন, “ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রাজশাহী এনসিপিকে জড়িয়ে যে ‘নোংরামি’ করা হচ্ছে, এটি আর বরদাশত করা হবে না। রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসংখ্য কর্মীর শ্রম, ঘাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়েই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা জাতীয় নাগরিক পার্টি দাঁড়িয়েছে। সুতরাং দলটিকে সামনে রেখে নোংরামি বন্ধ করুন। অন্যথায় সেই কালো শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং রাজশাহী থেকে বিতাড়িত করা হবে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘এখনো বাংলাদেশে পরিশ্রমীদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। সঠিক মূল্যায়ন হলে সংগঠনটি এখন আরও সুসংগঠিত অবস্থায় থাকত।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির এ নেতা নিজের ১১ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, রাজপথের সংগ্রাম এবং নানা বাধাবিপত্তির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েও পড়তে পারিনি। ক্রসফায়ারের আসামির মতো পরিস্থিতিও মোকাবিলা করেছি। এরপরও শুধু বয়সের কারণে আমাকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও দলের স্বার্থে সব মেনে নিয়েছি।’
তিনি প্রশ্ন তোলেন— যোগ্যতার মূল্যায়ন কী শুধু বয়সভিত্তিক হওয়া উচিত? উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘যদি বয়সই যোগ্যতার মাপকাঠি হতো, তাহলে তো নাহিদ ইসলাম ভাইয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা পেত না।’
তিনি দাবি করেন, রাজশাহীতে মাঠের রাজনীতি ও রাজপথের কর্মীরা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন, বরং যারা ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করেন, তারা আজ যোগ্য বিবেচিত হচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনুরোধ জানান যোগ্যতার ভিত্তিতে রাজশাহী জেলা কমিটিকে পুনর্মূল্যায়ন এবং বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার জন্য।
তারা সতর্ক করে বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থে দলটিকে ধ্বংস করবেন না। আমরা তরুণরা রাজশাহীতে এনসিপি নিয়ে সম্ভাবনা দেখি। প্রয়োজনে আমাদের ছুটি দিন, কিন্তু কোনো কালো শক্তি, লোভ বা ক্ষমতার কারণে আমরা আমাদের আদর্শ বিসর্জন দেব না।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ নভেম্বর রাতে এনসিপি রাজশাহী জেলা ইউনিটের ১০৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক সাইফুল ইসলামকে করা হয়েছে নতুন কমিটির আহ্বায়ক।
অভিযোগ উঠেছে, নতুন আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, অস্ত্রধারী যুবলীগ ক্যাডার জহুরুল ইসলাম রুবেল যিনি ২৪-এর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে দুই হাতে গুলি চালিয়েছেন সেই রুবেলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এ সাইফুল। তাই সাইফুল ইসলামকে অপসারণের দাবিতে কমিটি গঠনের পর থেকেই এনসিপির একটি অংশ বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছিল।
মন্তব্য করুন