পরীক্ষিৎ চৌধূরী
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১০ এএম
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অপতথ্য মোকাবিলা

প্রয়োজন সরকার ও গণমাধ্যমের সমন্বয়

প্রয়োজন সরকার ও গণমাধ্যমের সমন্বয়

ইরান ইসরায়েলের ওপর হামলা করেছে। ইসরায়েলের আকাশ জ্বলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেদিন আরেক দুনিয়াও জ্বলে উঠেছিল, সেই দুনিয়ার নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অসংখ্য অনলাইন পোর্টালে উভয়পক্ষ তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত খবর ও ভিডিও ছেড়ে দিয়ে আজও অনলাইন দুনিয়াকে মাতিয়ে রেখেছে।

এ মাতোয়ারা অবশ্য নতুন কিছু নয়। আজকের তথ্যভারাক্রান্ত যুগে, যাকে বলা হয় ‘ইনফোডেমিক’-এর যুগ, যখন তথ্যের মহামারিতে গোটা বিশ্ব ভুগছে এবং যখন প্রতিদিন অনলাইনে ৩২৮.৭৭ বিলিয়ন গিগাবাইট ডাটা ভেসে উঠছে, যার শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগই ভিডিও; সেই সময়ে কোনটি তথ্য, কোনটি অপতথ্য তা নির্ণয় করা কীরকম দুরূহ কাজ, তা সহজেই অনুমেয়।

এখনকার দিনে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে প্রতিমুহূর্তে কোটি কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত থাকেন। যে কোনো ব্যক্তি নিজেই আজ কনটেন্ট প্রডিউসার। এখানে সবাই লেখক, সবাই সম্পাদক, আবার সবাই ভোক্তা। নেই কোনো সম্পাদকীয় গেটকিপিং বা ফিল্টারিং, যেটি মূল ধারার গণমাধ্যমে থাকে। এখন এক হাতেই একটা তথ্য তৈরি করে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে পারে যে কেউ। মানুষ তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই দ্রুত বিশ্বাস করছে এবং আরও দ্রুতগতিতে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি শুধু দলীয় বা সামাজিক পক্ষপাতের কারণে ‘নিম্নমানের’ তথ্য বা সংবাদকেও শেয়ার করতে মানুষ দ্বিধা করে না।

সামাজিক বা মূলধারার গণমাধ্যম, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সবই এখন এক হয়ে গেছে। এখন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াও অনলাইনে যাচ্ছে। তারাও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পোর্টাল সেবা দিচ্ছে, অনলাইনে টকশো করছে। প্রযুক্তিই আমাদের এ ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে যেতে বাধ্য করেছে। এ কারণেই মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গুজব, ‘হোক্স’ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সঙ্গে সত্য, অ্যাভিডেন্স ও ফ্যাক্টকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এ প্রতিযোগিতার কবলে পড়ে সাধারণ মানুষ অপতথ্যের প্রভাবে বিভ্রান্ত ও বিভাজনের রাজনীতিতে পতিত হয়ে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ছে।

কেন সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য এরকম ছড়িয়ে পড়ছে এবং কেনইবা মানুষ তা বিনা দ্বিধায় মেনে নিচ্ছে? যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীদের দাবি, জনজীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মূলধারার গণমাধ্যম তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে করতে পারছে না। এই চিত্র বিশ্বের প্রায় সর্বত্র। মূল ধারার সংবাদমাধ্যমগুলো হয়তো নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি তৈরি করে এসব ইস্যু নিয়ে খুব বেশি সরব হচ্ছে না। অথবা ইস্যুগুলো নিয়ে সরব থাকা যে জরুরি তাও হয়তোবা তাদের বোধগম্য হয়নি।

সারা বিশ্বে আজ তাই অপতথ্য মোকাবিলা একটি বড় ইস্যু। কীভাবে একটি তথ্যকে অপতথ্য বা ফেক নিউজ বলা যায়, সেটি বোঝার আগে ‘মিসইনফরমেশন’ ও ‘ডিসইনফরমেশন’—এ দুটি পরিভাষাকে বুঝতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো ভুল তথ্য প্রচার করা। এর পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হয়তো থাকে না। আর ‘ডিসইনফরমেশন’-এর পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য থাকে। যিনি ছড়াচ্ছেন তার উদ্দেশ্যই থাকে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। অথবা কোনো পক্ষের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। তবে এর পেছনে থাকে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বা ব্যবসায়িক ফায়দা লোটার উদ্দেশ্য।

উদাহরণ হিসেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলা প্রসঙ্গ খুবই সাম্প্রতিক। এই দুই ঘটনার সংবাদ পরিবেশনের সময় বিশ্বের প্রভাবশালী ও বহুল পরিচিত গণমাধ্যম, বিশেষ করে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের মনগড়া তথ্য প্রচার করেছে এবং এখনো করছে। আমাদের দেশে তো সামাজিক মাধ্যমে প্রায় অপতথ্য ভেসে বেড়ায়।

গণমাধ্যমে সঠিক তথ্যের অভাব বা মনগড়া তথ্যের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রং লাগানো বিভ্রান্তিকর তথ্যপ্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই তথ্যের সত্যতার পাল্লা এদিক সেদিক হলে অথবা তথ্যশূন্যতা দেখা দিলে সামাজিক মাধ্যমগুলোর অপব্যবহারকারীরা সুযোগ নিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিলের কাজ করে যায় বলে বিশেষজ্ঞরা উপসংহার টানছেন।

তথ্যপ্রযুক্তির এই সর্বগ্রাসী সময়ে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে যে, মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সঠিক ও নির্মোহ তথ্য পরিবেশন করে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তি দূর করবে। সামাজিকমাধ্যমের এ ‘দুর্বৃত্তায়ন’ সমাজে যে আস্থাহীনতা, বিভ্রান্তি ও পরিণতিতে সামাজিক বিভাজন সৃষ্টি করে তাকে মোকাবিলার জন্য মূলধারার গণমাধ্যমকেই এগিয়ে এসে তথ্য যাচাই করে সঠিক প্রতিবেদনটি প্রচার করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা পেশার মান উজ্জ্বলতর হবে।

সামাজিকমাধ্যমে প্রচারিত তথ্যটি কতটুকু খবর হয়ে উঠতে পারে, অর্থাৎ কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপিত হলো তা যাচাই-বাছাই বা ফ্যাক্ট চেক করার দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের। তার চেয়েও বেশি দায়িত্ব মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীদের। সামাজিকমাধ্যমের কোনো খবর চোখে পড়ার পর গণমাধ্যমগুলো এ খবর বা ভিডিও নিয়ে কী বলছে সচেতন মানুষ তার খোঁজখবর নেয়। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যম যদি সেই বিষয়টি এড়িয়ে যায় অথবা তারাই বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়িত্ব নেয় তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? মানুষ তখন নিজের বিশ্বাস ও পছন্দ অনুযায়ী সামাজিক মাধ্যমকেই বেছে নেবে। তাই ফেক নিউজ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শুধু সামাজিকমাধ্যমের বৃত্তে আটকে না থেকে গণমাধ্যমের কর্তব্য আলোচনায় আনাও খুব জরুরি।

এ ক্ষেত্রে প্রথম কাজ সচেতনতা গড়ে তোলা। এটা একেবারে পড়ালেখা না জানা মানুষ, যিনি ভিডিও দেখে কোনো বাছবিচার না করে বিশ্বাস করে ফেলেন, তার জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনি গণমাধ্যমকর্মীদের জন্যও প্রযোজ্য। সব তথ্যই সঠিক এবং সংবাদ উপযোগী, এ ধারণা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীরা যদি সচেতন হয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্যকে সামনে নিয়ে আসে, তবে বিভ্রান্তিকর তথ্যটি আর হালে পানি পায় না। তাই গণমাধ্যমকর্মীদেরও মিডিয়াও ইনফরমেশন লিটারেসি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। তারা দায়িত্ব নিয়ে তথ্যের যথার্থতা যাচাই করে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরলে আর কোনো বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে না। একই সঙ্গে কীভাবে তথ্য যাচাই করতে হয়, তা শেখানোর কাজটিও গণমাধ্যম করতে পারে।

এ ক্ষেত্রে একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেটি হচ্ছে ‘ইমপোস্টার কনটেন্ট’। সম্প্রতি কিছু ওয়েবসাইট চালু হয়েছে, যারা জনপ্রিয় সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের লোগো প্রায় হুবহু ব্যবহার করে সেই সাইটে ভুয়া তথ্য প্রচার করছে। সাধারণ পাঠক ওই লোগো খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ না করেই সেই ‘ইমপোস্টার কনটেন্ট’ বিশ্বাস করছে। আবার কিছু অপতথ্য ভুল পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি করে। কোনো মূল তথ্যের সঙ্গে এমন লিঙ্ক দেয়, যা মূল তথ্যকে বিকৃত করে ফেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মিম বা ব্যঙ্গাত্মক ভিডিওকেও অনেকে সংবাদ হিসেবে ভাইরাল করছে।

অপতথ্যের এ ভাইরাল সংস্কৃতির সঙ্গে সত্যকে পাল্লা দিতে গেলে সাধারণ মানুষকে ফ্যাক্ট খুঁজে বের করতে চাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া তথ্যের সোর্স সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তার ভাষার প্রকৃতি বুঝতে হবে। অপতথ্যের ভাষা আর সঠিক তথ্যের ভাষার পার্থক্য তুলে ধরতে পারে গণমাধ্যমই। উচ্চ মানদণ্ডের সাংবাদিকতা সমুন্নত রেখে মানুষের আস্থা ধরে রাখতে গেলে মূলধারার গণমাধ্যমের জন্য এ কাজটি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

আমাদের দেশে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য স্বাধীন কিছু হাতেগোনা প্রতিষ্ঠান আছে। অল্প কয়েকটি মূলধারার গণমাধ্যম এ কাজটি করছে। কিন্তু অধিকাংশ গণমাধ্যম এটিকে অপরিহার্য অংশ হিসেবে এখনো নেয়নি। ইউরোপ, আমেরিকার অনেক সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল বা অনলাইন পোর্টালগুলোতে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য স্থায়ী বিভাগ চালু আছে। তারা ভুয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্য তাদের নিউজ পোর্টালে আপলোড করে রাখে।

২০২৪ সালে এসে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম গত ১৫ বছরে অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং আরও বিস্তৃতি লাভ করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন বর্তমানে তা বিরাজ করছে। নতুন সংবাদপত্র, নতুন অনলাইন পোর্টাল বা নতুন টেলিভিশন খোলার ক্ষেত্রে সরকারের উদারনীতি, অসহায় ও দুস্থ সাংবাদিকদের সরকারের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নিয়মিত ওয়েজ বোর্ড গঠনসহ এ জাতীয় উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশের গণমাধ্যম আরও সংরক্ষিত হচ্ছে।

কারণ বর্তমান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখিয়ে দেওয়া পথেই এগোচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তার কারাগারের রোজনামচায় লিখেছিলেন, ‘সত্য খবর বন্ধ হলে অনেক আজগুবি খবর গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়ে, এতে সরকারের অপকার ছাড়া উপকার হয় না’ (কারাগারের রোজনামচা, পৃ. ৭৯)। মতপ্রকাশের পূর্ণ অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সঠিক দায়িত্ব নিয়ে তার বইগুলোতে অসংখ্যবার লিখেছেন এবং সবসময় এ নিয়ে ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালে তার প্রতিফলনও দেখিয়েছিলেন জাতির পিতা।

সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের কল্যাণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সর্বোপরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সরকারের অঙ্গীকার। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারেও এ বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। সম্পূর্ণ মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা, অসত্য তথ্য দিয়ে মিথ্যাচার করা এবং গুজব ছড়ানো গণতন্ত্র এবং দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ ধরনের চর্চা পেশাদার সাংবাদিকতাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অপতথ্য মোকাবিলার কথাও সরকার প্রতিনিয়ত বলে আসছে। সরকার তা করতে চায় পেশাদার সাংবাদিকদের স্বার্থে, যাতে দেশের গণমাধ্যম সেক্টর শক্তিশালী হয়ে ওঠে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে।

অসত্য সংবাদ মোকাবিলায় সরকার নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য অধিদপ্তরে একটি ফ্যাক্ট চেকিং সেল কাজ করছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিত্তিহীন অডিও ও ভিডিও অপপ্রচারের বিষয়ে এ পর্যন্ত ১টি প্রেসনোট ও ৭৮টি হ্যান্ডআউট, ১৫টি প্রতিবেদন, ৫টি ভিডিও ক্লিপ, বিষয়ে ৫৭টি আইকনোটেক্সট প্রস্তুত করে তথ্য অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজ (pid), ফেসবুক অ্যাকাউন্ট (pid bd), তথ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট .gov.bd (ফ্যাক্ট চেকিং সেবা বক্স), ইউটিউব চ্যানেল (pid bangladesh)-এ আপলোড করা হয়।

সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এ প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মতামত নিয়ে তাদের এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তার ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, এ ফ্যাক্ট চেকিং কার্যক্রমকে সার্বজনীন করার লক্ষ্য নিয়ে এতে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি এমন একটি সিস্টেম তৈরি করার কথা বলেছেন, যাতে অপতথ্য মোকাবিলার প্রক্রিয়াটির ওপর মানুষের আস্থা আরও বৃদ্ধি পায়। প্রতিমন্ত্রীর এ ভাবনার সঙ্গে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টরাও ঐকমত্য পোষণ করবেন বলে ধারণা করা যায়, কারণ এ কথা অনস্বীকার্য যে, গণতন্ত্রের বিকাশে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন দরকার, তেমনি অপতথ্য রোধ করাও জরুরি। একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি সুস্পষ্ট বলেছেন যে, ‘এটা সরকারের পক্ষে কোনো কার্যক্রম না। বরং এ কার্যক্রম শুধু সত্যের পক্ষে এবং অসত্যের বিপক্ষে। আমরা সবাইকে সম্পৃক্ত করে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ব যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরে যেখানে গুজব, অপতথ্য ও মিথ্যাচার হবে সবাই মিলে তা মোকাবিলা করতে পারি।’

এ কাজটি যেহেতু সবপক্ষের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে, সেহেতু এর মাধ্যমে সত্যটি তুলে ধরলে গণমাধ্যমও সেটাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দলমতকে প্রাধান্য দেওয়ারও সুযোগ নেই। এ ধরনের প্রক্রিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাদারিত্বকেও সুরক্ষিত করবে। তাদেরও সেভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রসারের উদ্যোগ নেবে সরকার। যাতে অপতথ্য মোকাবিলায় একজন সাংবাদিক শুধু বাংলাদেশে নয়, বিদেশেও অবদান রাখার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাংবাদিক, গণমাধ্যম সংস্থা, নীতিনির্ধারক এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। অপতথ্য মোকাবিলা এমন একটি যুদ্ধ, যে লড়াই চালিয়ে যাওয়া জাতির ভবিষ্যতের জন্য জরুরি। আর ভ্রান্ত তথ্যের ঢেউ সামাল দিয়ে এ লড়াইয়ে জেতার ক্ষমতা একটি জাতির গণমাধ্যম সেক্টরের শক্তির ওপর নির্ভর করে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মসৃণ উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সব ধরনের অপতথ্য মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ তখনই সার্থকতা পাবে, যখন গণমাধ্যমও দায়িত্বশীলতার স্বাক্ষর রাখবে শতভাগ।

লেখক: তথ্য অধিদপ্তরের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যান চলাচলের অপেক্ষায় চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

পুলিশ বক্সের সামনেই অটোরিকশা স্ট্যান্ড, টাকা দিলেই মেলে চালানোর অনুমতি

রাজধানীতে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড

পদ্মায় চলছে রেণু পোনা নিধনের মহোৎসব

মারা গেলেন ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ খ্যাত অভিনেতা বার্নাড হিল

মুন্সীগঞ্জে ওসিসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

ছেলের বিরুদ্ধে ভোট করায় ডিও লেটার না দেওয়ার হুমকি এমপির স্ত্রীর

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে নদভী

‘এখনো জানা যায়নি সুন্দরবনে আগুনের কারণ’

সেতুতে বিশাল গর্ত, আতঙ্কে এলাকাবাসী

১০

নদী শাসনে নিম্নমানের জিও ব্যাগ ব্যবহারের অভিযোগ

১১

চশমা ছাড়াই কোরআন পড়েন ১৩৫ বছর বয়সী তাম্বিয়াতুন নেছা

১২

রাজধানীতে শিলাবৃষ্টি

১৩

বাটারবন খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে শিশু

১৪

সাংবাদিকের ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার নিন্দা

১৫

নিষিদ্ধ ঘোষিত জাল ব্যবহার বন্ধ করা হবে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

১৬

পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের কেজি ৮০ টাকা

১৭

কারাগার থেকে বেরিয়ে মামুনুল হকের জ্বালাময়ী বক্তব্য

১৮

নগর পরিকল্পনায় নারী পরিকল্পনাবিদদের এগিয়ে আসতে হবে : প্রতিমন্ত্রী রিমি

১৯

আমলাদের সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় :  যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী 

২০
*/ ?>
X