হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ক্রিস্টাল বলরুমে তখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ক্রিকেট, ফুটবল থেকে শুরু করে বিনোদন—নানা বিভাগের সংবাদকর্মীদের পদচারণে ভরে উঠে পুরো বলরুম। হোটেলের কর্মীদেরও ঘুরেফিরে আসতে দেখা গেল কয়েকবার। পুরো আয়োজনের মধ্যমণি—হামজা চৌধুরী।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ইংলিশ ফুটবলারের লাল-সবুজে মোড়ানো জাতীয় দলের জার্সিতে যোগদানকে ঘিরেই যেন বদলে গেল পুরো চিত্র। পুরুষ ফুটবলে এমন দিন যে আর কখনো দেখেনি কেউ! প্রথমবার এমন কিছুর দেখা মিলল এবার। প্রধান কোচ হাভিয়ের ক্যাববেরা ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার সঙ্গে হামজা চৌধুরী। পাশে বসে সে উত্তাপ অনুভব করেছেন জাতীয় দলের পার্টনার প্রতিষ্ঠান ইউসিবির এক কর্মকর্তাও। আধা ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলন—তাতেও যেন অতৃপ্তই রয়ে গেলেন সংবাদকর্মীরা। আরও কত কত প্রশ্নই যেন বাকি থেকে গেল তাদের। সময় স্বল্পতায় অনেকের হাত তোলাই ছিল; কিন্তু প্রশ্ন করার আর সুযোগ মিলল না।
দেশের ফুটবলে এমন দিন ঠিক কবে দেখা গিয়েছিল—মনে করতে চাইলেও যে মনে পড়ে না। পড়বেও বা কি করে! এমন কিছু তো আর কখনো দেখাও মেলেনি। অন্তত পুরুষ ফুটবলে তো নয়ই। হ্যাঁ, নারী ফুটবলারদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার আনন্দ ছুঁয়ে গিয়েছিল পুরো রাজধানীবাসীকে। কিন্তু একজন ফুটবলার এসেই পুরুষ ফুটবলের চিত্রটাই যে এভাবে বদলে দেবেন—সেটাও বা কে ভেবেছে কখন! অবশ্য শুরুটা যার মধ্য দিয়ে, তিনিই এখন জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। ২০১৩ সালের এমনই এক দিনে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলতে এসেছিলেন জামাল। সেই দিনের মুহূর্তটা গতকাল একবার চোখের সামনে ভেসে উঠল তারও। কিন্তু হামজার চেয়ে যে বেশি ছিল না—তা আর অস্বীকার করলেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘অবশ্যই আমি দারুণ অনুভব করছি। আমি যখন এসেছিলাম, তখনো একই রকম পরিস্থিতি ছিল। হামজা প্রিমিয়ার লিগ খেলোয়াড়। তবে হামজাকে যেভাবে বরণ করে নেওয়া হয়েছে, তা দারুণ। মনে হচ্ছে আমাদের মেসি হয়ে এসেছে সে।’
তবে অ্যাটমোস্ফিয়ার যে কতটা পরিবর্তন হয়েছে, সেটা জামালের ভাষায়, ‘পাঁচগুণ বেশি’। ঠিক তাই। নামটা হামজা কিংবা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার হামজা বলেই এমন উন্মাদনা আর উত্তাপ। তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন জেনেই ভারত দলেও অবসর ভেঙে ফিরে এসেছেন কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রী—লোকমুখে আপাতত এমন কথাই শোনা যাচ্ছে। জামালকেও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সহজ ভাষায় গভীরতম এক উত্তর দিয়ে দেন, ‘সুনীল ছেত্রী খুবই ভালো খেলোয়াড়। দেশের জন্য ট্রিমেন্ডাস জব করছে। কিন্তু সত্যি বলতে, হামজা প্রিমিয়ার লিগ খেলা ফুটবলার।’ ভারতেও সংবাদকর্মীদের মধ্যেও হামজার উত্তাপ থাকবে বলে মনে করেন তিনি। হামজার আগমনে দেশের ফুটবলে মিলেছে পৃষ্ঠপোষকার ছোঁয়াও। পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় দলের পার্টনার হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। মানুষের মনে দেশের ফুটবল ঘিরে জেগেছে নতুন করে উন্মাদনা। সংবাদকর্মীদের উপচে পড়া ভিড়েও মিলেছে সে বার্তা। ফুটবলের আমেজ যে হারিয়ে যায়নি, সেটা যেন হামজার সঙ্গে সেলফিতে ভরে উঠল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোতেও।
মন্তব্য করুন