মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংয়ের সময় একটা বিষয় কি লক্ষ করেছিলেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তখন ভেসে বেড়াচ্ছিল মিরাজ-শান্তর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একটি ছবি, যেখানে দারুণ এক জুটির পর দুজন দুজনের চোখে চোখ রেখে প্রাণ খুলে হাসছিলেন। এতক্ষণ ধরে এ আলোচনা কেন! কারণ গতকাল বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের সঙ্গে ছবিটি এখন ‘প্রাসঙ্গিক’। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে এমন অনেক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে দারুণ কিছু জয় উপহার দিয়েছিলেন তারা। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৯৪ রানের জুটিতে ২০১৪-১৬-র সে স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন তারা। শুধু জুটি বললে ভুল হবে, দুজনে পেয়েছেন জোড়া সেঞ্চুরিও। দুজনের ব্যাটে বাঁচা-মরার ম্যাচে বাংলাদেশ পেয়েছে রানের পাহাড়। এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৩৪ রানের মধ্যে মিরাজ-শান্ত করেছেন ২১৬ রান। সংখ্যাটা আরও বড় হতে পারত, যদি না চোট নিয়ে মাঠ না ছাড়তে হতো মিরাজের। সেঞ্চুরির পর আফগান স্পিনার মুজিবউর রহমানকে ইনসাইড-আউটে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে দারুণ এক ছক্কা হাঁকান মিরাজ। এরপরই গ্লাভস খুলে ফেলেন তিনি। বাঁহাতের আঙুল ক্র্যাম্প করায় মাঠ ছেড়ে যান তিনি। ততক্ষণে নামের পাশে ১১২ রান। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দুহাত ছড়িয়ে উদযাপনে মিরাজ তার ব্যাটার-রূপ আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন; বয়সভিত্তিকে তিনি তো ছিলেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটারই। কিন্তু জাতীয় দলের প্রয়োজনে বোলিংটাই বেশি প্রাধান্য দিতে হয়েছে তাকে। ভারত সিরিজ থেকে এশিয়া কাপ—মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে পেলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১১৯ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় এটি এখন মিরাজের ক্যারিয়ারসেরা রান। মিরাজের পর শান্তর ব্যাটেও এসেছে সেঞ্চুরি। একই ইনিংসে বাংলাদেশের এটি পঞ্চম জোড়া সেঞ্চুরি। চোট নিয়ে মিরাজের ফেরার পর আফগান স্পিনার রশিদ খানকে একই ওভারে দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৯ রানে গিয়ে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির অপেক্ষা করেন শান্ত। ৪৩তম ওভারে মুজিব এলেই সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন তিনি। আগের ম্যাচে মাত্র ১১ রানের জন্য মিস করেছিলেন সেঞ্চুরি; কিন্তু এবার সে ভুল করেননি তিনি। ১০১ বলে দারুণ এ মাইলফলক স্পর্শ করার চেয়ে তার উদযাপনেই ভিন্নতার প্রকাশ মিলেছে। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার তিনি। হেলমেট খুলে ব্যাটে চুমু এঁকে তার সুবাস ছড়িয়ে দিলেন। এরপর ব্যাটটা কোলে নিয়ে ছোট্ট বাবুকে দোলানোর মতো করে দোলালেন কিছুক্ষণ। শান্ত এখানে তার সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে স্মরণ করলেন। এ বছরটা দারুণ যাচ্ছে তার। আগের ১৩ ম্যাচে করেছিলেন ৫১৮ রান। প্রথম সন্তানের বাবাও হলেন তিনি। ইনিংসের পর সে অনুভূতিই শেয়ার করেছেন সম্প্রচারকারী টেলিভিশনে, ‘এই সেঞ্চুরি আমি আমার সন্তানকে উৎসর্গ করছি।’ ৬৩ রানে ২ উইকেট হারানো মিরাজ-শান্ত মিলে বাংলাদেশকে নিয়ে যায় ২৫৭ রানে। পরপর দুই ব্যাটার ফেরার পর দুজনের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছিল? শান্ত বলেছেন সে কথাও, ‘আমরা দুই উইকেট হারানো নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। আমরা পরিস্থিতি ও বলের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলেছি। এটা একটা ভালো টুর্নামেন্ট, চ্যালেঞ্জিং টুর্নামেন্ট এবং এটা আমায় অনেক সাহায্য করেছে।’ টুর্নামেন্ট যে শান্তকে সাহায্য করেছে, সেটা তার পারফরম্যান্সই প্রমাণ মিলেতেছে। দারুণ ছন্দে থাকা এ ব্যাটারের জন্য এটা বিশ্বকাপে আত্মবিশ্বাসও বলা চলে।
মন্তব্য করুন