পৃথিবীতে ফুটবল খেলা দেখে বা খেলাটির ভক্ত আছে প্রায় ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন। সবারই প্রিয় ক্লাব আছে। সমর্থকদের যদি প্রশ্ন করা হয় পছন্দের ক্লাবের জন্য আপনি কী করেছেন? হয়তো উত্তর আসবে, ক্লাবটির জার্সি কিনেছি বা প্রতিটি ম্যাচ আমি মাঠে গিয়ে দেখি। জানেন কি, একটি ক্লাব আছে যার সমর্থকরা ক্লাবের জন্য নিজের রক্ত পর্যন্ত দিয়েছে। বলা হচ্ছে জার্মান বুন্দেসলিগার ক্লাব ইউনিয়ন বার্লিনের কথা।
‘ভক্তরা ক্লাবের প্রাণ’—এ প্রবাদ বহুবার শুনেছি। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই ক্লাবের প্রাণ ছিলেন ইউনিয়ন বার্লিনের সমর্থকরা। এ ক্ষেত্রে তারা সৃষ্টি করেছেন বিস্ময়কর উদাহরণ। তৎকালীন পূর্ব জার্মানির এ ক্লাবের ভক্তরা দলকে বাঁচিয়ে রাখতে ঘাম, অশ্রু এবং রক্ত ঝরিয়েছেন। তাদের ত্যাগ অবশ্য বৃথা যায়নি। একসময় জার্মান ফুটবলের তৃতীয় সারিতে থাকা ক্লাবটি সমর্থকদের খালি হাতে নির্মাণ করা হোম স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবকে আতিথেয়তা দেবে। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এ দৃশ্যই দেখা যাবে। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নাম লেখানো ক্লাবটি নাপোলি, রিয়াল মাদ্রিদ ও ক্লাব ব্রাগার বিপক্ষে খেলবে।
‘ইউনিয়নের জন্য রক্ত দাও’—শুধু ক্লাবের প্রতি ভক্তদের আবেগ দেখানোর জন্য একটি আকর্ষণীয় ট্যাগলাইন ছিল না, এটি ছিল ২০০৪ সালে ইউনিয়ন বার্লিনকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য করা একটি প্রচারাভিযান। জার্মান ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর থেকে ২০০৪ সালে যখন তাদের অবনমন হয়; তখন জার্মান তৃতীয় বিভাগের রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হিমশিম খাচ্ছিল পূর্ব বার্লিনের এ ক্লাবটি।
ক্লাবটি চালু রাখতে এবং জার্মানির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে নিবন্ধন করতে, দলটির প্রয়োজন ছিল প্রায় ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। না হলে ক্লাবটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হতো। ইউনিয়ন ভক্তরা নিজের ক্লাবকে বাঁচানোর জন্য রক্ত বিক্রি করেন!
জার্মানিতে রক্তদানের জন্য অর্থ দেওয়া
হয় এবং এভাবে বার্লিনের ভক্তরা রক্তদানের জন্য সারিবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ধুঁকতে থাকা ক্লাবকে রক্ষা করেছিলেন। নিজের ক্লাবের জন্য রক্তপাত, এটি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন স্তরের আবেগ। এই ঘটনা ফুটবল ইতিহাসে খুঁজলেও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। বার্লিন ভক্তদের ক্লাবের জন্য এ আবেগ সবসময় ক্লাবটির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কল্যাণে বার্লিন ভক্তদের আবেগ দেখার অপেক্ষায় থাকবে ফুটবল বিশ্ব। ভিনিসিয়ুস-ওসিমিয়েনদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় ডাই এইসিনেনরা।
মন্তব্য করুন