

নেশা করে জুয়ার টাকার জন্য স্ত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর একটি আদালতের অফিস সহায়ক সোহেল রানার (৪৫) বিরুদ্ধে। নির্যাতন সইতে না পেরে তার স্ত্রী খাদিজা খাতুন (২৭) কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকছেন। এর মধ্যে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দিচ্ছেন সোহেল।
সোমবার (০১ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী খাদিজা খাতুন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মা রাহেলা বেগম।
তারা অভিযোগ করেন, সোহেলের নির্যাতন থেকে মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেও একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন রাহেলা বেগম। এতে একবার তার হাত ভেঙে যায়, আরেকবার মাথায় ১০টি সেলাই নিতে হয়। বারবার থানায় অভিযোগ ও মামলা করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে দাবি তাদের।
লিখিত বক্তব্যে খাদিজা জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার বিয়ানাবোনা গ্রামে। সোহেলের বাড়ি তানোরের মুন্ডুমালা এলাকায়। ২০১৯ সালের ৪ মে তাদের বিয়ে হয়।
দেড় বছরের মধ্যে যৌতুকের দাবিসহ নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি তালাক দেন। পরে সোহেল ক্ষমা চেয়ে ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বিয়ে করেন। তাদের দুই মেয়ে রয়েছে— একজনের বয়স ৫ ও অন্যজনের ২ বছর।
খাদিজার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই সোহেল রানা মাদকাসক্তি ও জুয়ার প্রবণতায় সংসারের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিত। গত বছরের ২১ জুন মেয়ের গলার স্বর্ণের চেন চুপিসারে খুলে নিতে গেলে বাধা দেওয়ায় তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান সোহেল।
তিনি আরও বলেন, জুয়ার টাকার জন্য সোহেল প্রায়ই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন এবং তখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাকে নির্যাতন করতেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৪ জুন দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন সোহেল। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে রক্তাক্ত করেন। খবর পেয়ে তার ভাই গিয়ে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করান। পরে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে দাবি খাদিজার।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, থানায় মামলা করতে চাওয়ার খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ হন সোহেল। ২৪ অক্টোবর ফোনে হুমকি দেওয়ার পর বাইরে বের হলে পথে তাকে মারধর করেন। ২২ নভেম্বর আবার রাস্তার মধ্যে পেয়ে হামলা চালান এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এসব কারণে ২৯ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে করা আগের মামলাটি পুনরায় চালু করেন খাদিজা। কিন্তু সোহেল তদন্তে প্রভাব খাটিয়ে বাধা সৃষ্টি করছেন বলে দাবি তার।
সংবাদ সম্মেলনে খাদিজা খাতুন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সোহেল রানা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, আমি মাদক খাই না, জুয়াও খেলি না। বরং আমার স্ত্রী মাদক ব্যবসা করে, তার নামে মামলাও আছে। দুই সন্তান নিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু সে নানা উপায়ে আমাকে হয়রানি করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদিজা দাবি করে বলেন, সোহেল রানা তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন